কালের সাক্ষী ‘বাহাদুর শাহ পার্ক’

বাহাদুর শাহ পার্ক

সংগৃহীত ছবি

জীব ও পরিবেশ

কালের সাক্ষী ‘বাহাদুর শাহ পার্ক’

  • জবি প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ৩০ জুলাই, ২০১৮

বাংলাদেশে সিপাহি বিদ্রোহের একমাত্র স্থাপত্য ‘বাহাদুর শাহ পার্ক’। রাজধানীর পুরান ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে অবস্থিত এ পার্ক বহু ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী। আঠারো শতকের শেষ দিক এখানে ঢাকার আর্মেনীয়দের বিলিয়ার্ড ক্লাব ছিল, যাকে স্থানীয়রা নাম দেয় ‘আন্টাঘর’। বিলিয়ার্ড বলকে স্থানীয়রা আন্টা নামে অভিহিত করত। সেখান থেকেই এসেছে ‘আন্টাঘর’ কথাটি। ক্লাবঘরের সঙ্গেই ছিল একটি ময়দান, যা আন্টাঘর ময়দান নামে পরিচিত ছিল। ১৮৫৮ সালে রানি ভিক্টোরিয়া ভারতবর্ষের শাসনভার গ্রহণের পর এই ময়দানেই এ-সংক্রান্ত ঘোষণা পাঠ করে শোনান ঢাকা বিভাগের কমিশনার। সেই থেকে এই স্থানের নামকরণ হয় ‘ভিক্টোরিয়া পার্ক’। ১৯৫৭ সালের আগে পর্যন্ত পার্কটি পরিচিত ছিল ভিক্টোরিয়া পার্ক নামেই।

১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহের পর এক প্রহসনমূলক বিচারে ইংরেজ শাসকরা ফাঁসি দেয় অসংখ্য বিপ্লবী সিপাহিকে। তারপর জনগণকে ভয় দেখাতে সিপাহিদের লাশ এনে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় এই ময়দানের বিভিন্ন গাছে। ১৯৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহের শতবার্ষিকী পালন উপলক্ষে এখানে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করে পার্কের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘বাহাদুর শাহ পার্ক’। সিপাহি বিদ্রোহ হয়েছিল ইংরেজ শাসনের সমাপ্তি ঘটিয়ে মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহর শাসন পুনরায় আনার জন্য। তাই তার নামানুসারে এর নতুন নামকরণ করা হয় ‘বাহাদুর শাহ পার্ক’। ডিম্বাকৃতি ও লোহার রেলিংঘেরা পার্কটির পূর্ব ও পশ্চিম পাশে দুটো প্রধান ফটক রয়েছে। পার্কটির ভেতরে রেলিংয়ের পাশ দিয়ে রয়েছে পাকা রাস্তা।

সদরঘাট এলাকায় ঢুকতেই লক্ষ্মীবাজারের ঠিক মাথায় অবস্থিত পার্কটি ঘিরে সাতটি রাস্তা মিলেছে। এর চারপাশে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ বেশ কিছু স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থাকায় এটি পুরান ঢাকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হিসেবে বিবেচিত। পার্কের উত্তর পাশে রয়েছে সেন্ট থমাস চার্চ, ওই পাশেই অবস্থিত ঢাকার প্রথম পানি সরবরাহ করার জন্য তৈরি ট্যাঙ্ক। উত্তর-পূর্ব কোণে আছে ঢাকার অন্যতম কলেজ কবি নজরুল সরকারি কলেজ এবং ইসলামিয়া হাই স্কুল, পূর্ব পাশে রয়েছে ঢাকার অন্যতম প্রাচীন বিদ্যালয় সরকারি মুসলিম স্কুল, দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে রয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। পার্কের ঠিক উত্তর-পশ্চিম পাশেই রয়েছে ঢাকার জজকোর্ট। এছাড়া বাংলাবাজার, ইসলামপুর, শাঁখারী বাজারের মতো ঢাকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু এলাকা থেকে বর্তমান ঢাকার নতুন এলাকায় আসতে এ পার্ক এলাকার রাস্তাটিই প্রধান রাস্তা হিসেবে ব্যবহার হয়।

কংক্রিটের এই নগরীতে সবুজ-শ্যামল জায়গা খুবই কম। পার্কটি পুরান ঢাকার কেন্দ্রে অবস্থিত হওয়ায় শরীরচর্চার জন্য প্রতিদিন সকাল-বিকাল এখানে আসেন স্থানীয়রা। আশপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও ক্লাসের ফাঁকে এখানে আড্ডায় মাতে। ক্লান্তি দূর করতেও অনেকে বসেন এই পার্কে। কিন্তু বর্তমানে পার্কটি অনেকটাই দূষণের কবলে। চারপাশে যত্রতত্রভাবে গাড়ি রাখা হয়। আশপাশেই রয়েছে ময়লা রাখার বড় বড় কন্টেইনার। এসব কন্টেইনার ছড়ায় দুর্গন্ধ। এছাড়া প্রধান ফটক দুটির মধ্যে পশ্চিম পাশেরটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় তার সামনে গড়ে উঠেছে অস্থায়ী দোকান। সব মিলে পার্কটির বর্তমান অবস্থা বেশ করুণ। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অসচেতনতা আর অবহেলার কারণেই পার্কটির এখন এমন দশা। তারা মনে করেন, এ রকম ঐতিহ্যবাহী একটি স্থান যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা খুবই দরকার। সঠিক পরিচর্যা না পেলে ইতিহাসের সাক্ষী বাহাদুর শাহ পার্কের অনেক চিহ্নই অচিরে মুছে যাবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads