বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও) শিল্প বাংলাদেশের উদীয়মান অর্থনীতির জন্য নতুন সম্ভাবনা এনে দিয়েছে। এ খাতে আমাদের আয়ের প্রবৃদ্ধি বছরে শতকরা ১০০ ভাগেরও বেশি। এটি আরো বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। আমাদের মেধাবী ও সৃজনশীল তরুণ প্রজন্মকে বিপিও শিল্প খাতে কাজে লাগাতে পারলে তারা একদিকে যেমন স্বাবলম্বী হবে, অন্যদিকে রাষ্ট্রকে আয়কর দেওয়ার মতো সক্ষম পেশাজীবী হিসেবে তৈরি হবে।
রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লব: বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও) এর চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু এসব কথা বলেন। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিপিও বিশেষজ্ঞ ও ভারতের বোস্টন কনসালটিং গ্রুপের (বিসিজি) নিতিন চান্দালিয়া।
উল্লেখ্য, এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো বাংলাদেশে বিপিও সামিট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। রোববার প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় দুই দিনব্যাপী এ সামিটের উদ্বোধন করেন। সোমবার এ সামিটের ছিল সমাপনী দিবস। দুই দিনের এ সামিটে মোট ১০টি সেশনে বিপিও শিল্পের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সেমিনার ও ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে দেশ ও বিদেশের বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন।
আমির হোসেন আমু বলেন, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় আড়াই লাখ শিক্ষার্থী স্নাতক ডিগ্রি লাভ করছে। অথচ আমাদের চাকরির বাজার সীমিত। স্নাতক ডিগ্রিধারীদের বিরাট অংশকে বিপিও সেক্টরে কাজে লাগানো সম্ভব। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের মাত্র ৩০ হাজার তরুণ কলসেন্টারসহ বিভিন্ন আউটসোর্সিং কোম্পানিতে কাজ করছে। এটি আমাদের তরুণ প্রজন্মকে স্বনির্ভর ও বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ খুঁজে নিতে অনুপ্রাণিত করবে বলে আমার বিশ্বাস।
বর্তমানে বিশ্বের ক্রমবর্ধমান ইন্ডাস্ট্রিগুলোর মধ্যে বিপিও খাতকে অন্যতম খাত উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এ খাতে বর্তমানে ৫০০ বিলিয়ন ডলারের বাজার রয়েছে। ভারত বিপিও খাতে বছরে প্রায় ১৫০ বিলিয়ন ডলার আয় করছে। আর এ খাতে ফিলিপাইনের আয় ১৮ বিলিয়ন ডলার। শ্রীলঙ্কাও এ খাতে বছরে ৩ বিলিয়ন ডলার আয় করছে। বাংলাদেশও এ সুযোগকে কাজে লাগাতে পারে। এখন আমরা আইসিটি খাত থেকে বছরে ১৮০ মিলিয়ন ডলার আয় করি। ২০২১ সাল নাগাদ এ খাত থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে আমরা কাজ করছি। বিপিও শিল্পকে তরুণ প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় ও পরিচয় করিয়ে দিতে পারলে শুধু ৫ বিলিয়ন নয়, এ খাতে আমাদের আয় দ্বিগুণ কিংবা তিনগুণ করার সুযোগ রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, রোবটিক টেকনোলজি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ন্যানো টেকনোলজি, বায়ো-টেকনোলজি ইত্যাদি প্রয়োগের মাধ্যমে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সূচনা হয়েছে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব বিশ্বব্যাপী বিপিও শিল্পকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করছে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এখন থেকেই কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণে সৃজনশীল উদ্ভাবন এবং মেধাসম্পন্নদের লালন ও সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা বাড়াতে হবে। এ লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি যৌথ অংশীদারিত্বে কাজ করতে হবে বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রী।