‘নো খালেদা নো ইলেকশন’

লোগো বিএনপি

সংরক্ষিত ছবি

রাজনীতি

হাইকমান্ডকে তৃণমূল

‘নো খালেদা নো ইলেকশন’

  • আফজাল বারী
  • প্রকাশিত ৭ অগাস্ট, ২০১৮

‘সংগঠন, আন্দোলন ও নির্বাচন’-এর ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে মতামত জানতে তৃণমূল নেতাদের ঢাকায় ডেকেছিল বিএনপির হাইকমান্ড। টানা দুই দিন মতবিনিময় সভা করেছে। কী পরামর্শ পেল দলটির হাইকমান্ড? তারা দিলইবা কী বার্তা। দলটির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীর মধ্যে এ নিয়ে জিজ্ঞাসার শেষ নেই। সভায় অংশ নেওয়া কয়েকজন নেতা আলাপকালে বাংলাদেশের খবরকে জানান, তৃণমূল নেতাদের সাফ কথা- ‘নো খালেদা, নো ইলেকশন’। খালেদাবিহীন নির্বাচনের চিন্তাও তাদের কাছে অভাবনীয়। অতীতের আন্দোলন ভেস্তে গেছে ঢাকার নেতাদের জন্য। এবার সেটা হলে তাদের দায়ভার নিতে হবে। তৃণমূল নেতারা মতামত দেন- মুক্তিযোদ্ধার দল বিএনপিকে সমালোচনা এড়াতে জামায়াত ত্যাগ করাই ভালো।

নেতাদের অনেকে খোলামেলাভাবে জানান, খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন সফল করতে হলে ‘দুদিল বান্দা’ নেতাদের চিহ্নিত করতে হবে। আইনি লড়াইয়ে মুক্তির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না, আন্দোলনই একমাত্র পথ। আগামীর কর্মসূচি শুধু মহানগর, জেলা-থানায় না রেখে ওয়ার্ড পর্যায়ে বিস্তৃতির পরামর্শ এসেছে সভা থেকে। জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে বড় ধরনের ছাড় দেওয়ার মানসিকতাও তৃণমূল পোষণ করে বলে বৈঠকে জানানো হয়।

গত ৩ আগস্ট থেকে তৃণমূল নেতাদের নিয়ে সভা করেছে বিএনপি। দলের চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দুই দিনের সভায় সারা দেশের সাংগঠনিক ১০ বিভাগের ৭৮ জেলা কমিটির সুপার ফাইভ- সভাপতি, সিনিয়র সহসভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন। ৪ আগস্ট ছিলেন চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, ঢাকা, ময়মনসিংহ এবং ফরিদপুর বিভাগের নেতারা। ৩ আগস্ট সভা করেন রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল বিভাগের তৃণমূল নেতারা। এর আগে দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার পর ভাইস চেয়ারম্যান ও উপদেষ্টা পরিষদ, যুগ্ম মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদক এবং গত ২২ জুলাই সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের নিয়ে পৃথক সভা করেছেন দলের নীতিনির্ধারকরা।

তৃণমূল নেতাদের সভায় আলোচ্য বিষয় ছিল সংগঠন, আন্দোলন ও নির্বাচন। কী ধরনের আন্দোলনের রূপরেখা চান, নিজ নিজ এলাকায় সাংগঠনিক অবস্থা কেমন, গত ১০ বছরে হতাহতসহ হামলা-মামলার চিত্র জানতে চেয়েছে হাইকমান্ড। ধারাবাহিক সভায় তৃণমূল নেতাদের কথা শুনেছেন দলের মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। তৃণমূলের মতামত রেজ্যুলেশন আকারে লিপিবদ্ধও করা হয়েছে। সকাল ও বিকাল দুই ধাপে চলে সভা।  তাতে ২১৩ জন বক্তা তাদের মতামত ব্যক্ত করেছেন।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (রংপুর বিভাগ) লালমনিরহাটের আসাদুল হাবিব দুলু বাংলাদেশের খবরকে বলেন, কেন্দ্রীয় নেতারা জানতে চেয়েছেন আন্দোলনের কেমন রূপরেখা চাই। আমরা বলেছি, খালেদা জিয়াকে বন্দি রেখে কোনো নির্বাচন নয়। তাকে মুক্ত করতে হলে আন্দোলনের বিকল্প নেই। এখন যেসব কর্মসূচি জেলা ও মহানগরীতে দেওয়া হয় তা যেন ওয়ার্ড বা ইউনিয়ন পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কারণ সেখানেও আমাদের কমিটি আছে। আমরা এটাও বলেছি, বিগত দিনে আমরা (তৃণমূল) আন্দোলন করেছি কিন্তু কেন্দ্রে আন্দোলন গতি পায়নি বলেই সফল হতে পারিনি। যারা খালেদা জিয়া বা দলের চেয়ে ব্যক্তিস্বার্থকে প্রাধান্য দেয় তাদের চিহ্নিত করতে হবে। সক্রিয় হতে হবে এবার ঢাকাকে।

সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ) ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন বলেন, আলোচনা ছিল সংগঠন, আন্দোলন ও নির্বাচন নিয়ে। নির্বাচনের কথাতেই খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রসঙ্গ এসেছে। বার্তা হলো- ওয়ার্ড থেকে শুরু করে সব কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা, কেন্দ্র থেকে ঘোষিত কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়ন করা।

জামায়াত প্রসঙ্গে সিলেট ও কক্সবাজারের নেতারা বলেন, জামায়াত অপরিহার্য নয়। সিলেটে তাদের প্রার্থী ১০ হাজার ভোট পেয়েছে। কক্সবাজারের নির্বাচনে এক ঘণ্টায় জামায়াত পেয়েছিল ২৭০০ ভোট আর বিএনপি পেয়েছিল ১১ হাজার। তাই জামায়াতকে পৃথকভাবে গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই। তবে সরকারবিরোধী ঐক্যে তাদের প্রয়োজনীয়তা আছে।

জামালপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ ওয়ারেছ আলী মামুন বলেন, আমরা বলেছি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে নির্বাচনে যাওয়া ঠিক হবে না। সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো পরিবেশও নেই। এই সরকার প্রশাসনকে দলীয়করণ করে নির্বাচনের আগে-পরে যে নির্যাতন চালিয়েছে তাতে প্রমাণিত- এদের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। দাবি আদায়ের জন্য কেন্দ্র যে কর্মসূচি দেবে আমরা তা সফলভাবে পালন করব। তার আগে ঢাকার নেতাদেরকে মাঠে নামতে হবে। ২০১৪ সালে তৃণমূল আন্দোলন তুঙ্গে নিয়েছিল কিন্তু কেন্দ্রের কারণে সফলতা মেলেনি।

মেহেরপুর জেলা বিএনপির সভাপতি মাসুদ অরুণ বাংলাদেশের খবরকে বলেন, আমরা মূলত দলীয় প্রধানের মুক্তির চলমান আন্দোলন, দলের অভ্যন্তরীণ সঙ্কট, সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিয়ে বিনিসুতার একটি জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার কথা বলেছি। একই সঙ্গে ‘নো খালেদা, নো ইলেকশন’ এই কথাটি স্পষ্ট করেছি। মুক্তিযোদ্ধা শহীদ জিয়ার দল বিএনপিকে সমালোচনা এড়াতে জামায়াত ত্যাগ করাই ভালো।

পাবনা জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আবদুস সামাদ খান মন্টু বলেন, অনেক বক্তা, দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। আমরা স্পষ্ট বলেছি আগে খালেদা জিয়ার মুক্তি, তারপর নির্বাচন। শুধু জেলার সুপার ফাইভ নয়, উপজেলার নেতাদেরও ডাকুন। ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি আছে, কর্মসূচি যেন সে পর্যায়ে দেওয়া হয়, তাতে তারাও চাঙা হবে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads