কবিরুল ইসলাম, সিলেট থেকে
ফুটবলারদের হ্যাচারি হিসেবে বেশ পরিচিত সিলেট জেলা। নব্বই দশক থেকে শুরু করে অনেক তারকা ফুটবলারই উঠে এসেছেন এ পুণ্যভূমি থেকে। বর্তমানে জাতীয় দলে খেলছেন সিলেটের চার ফুটবলার। মতিন মিয়া, মাসুক মিয়া জনি, সুফিল ও বিপলু আহম্মেদ। চারজনই আপন আলোয় উদ্ভাসিত। তবে এদের থেকে কিছুটা আলাদা বিপলু আহম্মেদ। চলতি বছরই জাতীয় দলে প্রথম ডাক পাওয়া এ ফুটবলার এখন পুরো দেশে নায়ক বনে গেছেন। লাওসের বিরুদ্ধে অবিস্মরণীয় জয় তাকে এনে দিয়েছে তারকা খ্যাতি। মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা এ ফুটবলারের সঙ্গে কাল কথা হয় বাংলাদেশের খবরের। পাঠকদের জন্য আলোচনার সেই চুম্বক অংশ নিচে তুলে ধরা হলো।
প্রশ্ন : আপনার একমাত্র গোলে বাংলাদেশ সেমিফাইনালের পথে এক পা দিয়ে রেখেছে। নিজের মাঠে গোল করে দলকে জেতাতে পারবেন- এমন বিশ্বাসটা কি আগে ছিল?
বিপলু : গোল দিতে পারব সেটা ভাবিনি। কিন্তু ভালো খেলার চিন্তা আগেই ছিল এবং আত্মবিশ্বাসও ছিল। যেহেতু আমার নিজের মাঠে খেলা, তাই টেনশনে ছিলাম। ফজরের নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছিলাম যেন গোল করতে পারি। আর মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলে দোয়া নিয়েছিলাম। ম্যাচের শুরু থেকেই আমার চেষ্টা ছিল গোল করার। কয়েকবার ট্রাই করেছিলাম। কিন্তু বার বারই মিস হচ্ছিল। সতীর্থদের বলও বানিয়ে দিয়েছিলাম। কেউ গোল পাচ্ছিল না। রবিউল তো ওয়ান বাই ওয়ান পজিশনে পেয়েও গোল করতে পারেনি। কিন্তু যখন সুযোগটা পেয়েছি তখনি বলটা আউটসুইং করেছিলাম। আর ওটাই কাজে লেগেছে।
প্রশ্ন : ফিলিপাইনের বিরুদ্ধে আগামীকাল ম্যাচ। ওই ম্যাচে টার্গেট কী?
বিপলু : ফিলিপাইন অনেক শক্তিশালী দল। তারা র্যাঙ্কিংয়েও এগিয়ে। তবে ওদের বিরুদ্ধে আরো ভালো খেলতে চাই। লাওসের বিরুদ্ধে যতটুকু দিয়েছি, তারচেয়ে বেশি দিতে হবে আমাকে। আমরা সবাই এখন মোটিভেটেড।
প্রশ্ন : দলে রসায়নটা কার সঙ্গে বেশি?
বিপলু : রসায়নটা সবচেয়ে বেশি সুফিলের সঙ্গে। সে আমার চোখে চোখ রেখে খেলতে পারে। আমাকে রিড করতে পারে। আমিও ওকে রিড করে খেলতে পারি। বল কোথায় ফেলব সেটা সুফিল সহজেই বুঝে নেয়। আমার সঙ্গে ওর ওয়ালটা ভালো হয়। জীবন ভাইয়ের সঙ্গেও বোঝাপড়া আছে। কিন্তু তার সঙ্গে ম্যাচ খেলা হয়েছে কম। ধীরে ধীরে হয়তো তার সঙ্গেও বোঝাপড়াটা হয়ে যাবে।
প্রশ্ন : মাঝেমধ্যেই আপনাকে অ্যাটাকিং আবার কখনো মিডফিল্ডে খেলতে দেখা যায়। আসলে কোন পজিশনে খেলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?
বিপলু : রাইট উইংয়ে খেলতেই পছন্দ করি। আর কোচও (জেমি ডে) আমাকে অ্যাটাকিং খেলান। লাওসের বিরুদ্ধে ম্যাচে একবার আমার পজিশন চেঞ্জ করেছিলাম। কোচই আমাকে মিডফিল্ডে খেলতে বলেছিলেন। কিন্তু সেখানে স্বাচ্ছন্দ্য খুঁজে পাইনি। তাই দশ মিনিটের মধ্যে আবারো আমাকে রাইট উইংয়ে উঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
প্রশ্ন : ফুটবলে আপনার অনুপ্রেরণা?
বিপলু : আমার অনুপ্রেরণা বড় ভাই বাবলু আহম্মেদ। তাকে দেখেই আমার ফুটবলে আসা। পরিবারের সবাই আমরা ফুটবল খেলি। কিন্তু বাবলু ভাই আমাকে সব সময় মাঠে নিয়ে যেতেন। কীভাবে ভালো খেলা যায় সে পরামর্শ দিতেন। প্রতিটি ম্যাচের আগেই তিনি টিম হোটেলে গিয়ে আমাকে সাহস জুগিয়ে থাকেন। লাওসের বিরুদ্ধে ম্যাচের দিন ভোরে হোটেলে এসেছিলেন তিনি। আমাকে সাহস দিয়েছেন। যেহেতু ঘরের মাঠে হাজার হাজার দর্শকের সামনে খেলা, তাই না ঘাবড়ানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন। তার অনুপ্রেরণাতেই আজকে আমি এ পর্যন্ত এসেছি। বাবলু ভাইয়ের ঋণ শোধ করতে পারব না।
প্রশ্ন : হঠাৎ করেই তারকা বনে গেলেন। সবাই নিশ্চয়ই বাহবা দিচ্ছে?
বিপলু : সবাই বাহবা দিচ্ছে সত্যি। কিন্তু আমি তারকা খ্যাতি নিয়ে ভাবছি না। আমার ভাবনা ভালো খেলা। জাতীয় দলের জার্সিটা সম্মানের সঙ্গে বুকে জড়িয়ে রাখতে চাই। ক্যারিয়ারটাকে অনেক লম্বা করতে চাই।