নিরাপদ সড়কের দাবিতে হাজারো কোমলমতি শিক্ষার্থী এখন ঢাকাসহ সারা দেশে রাস্তায়। বাসের চালকদের লাইসেন্স চেক করছে, লাইসেন্স থাকলে চকলেট দিচ্ছে, না থাকলে আটক করে পুলিশে দিচ্ছে তারা। কোথাও কোথাও তারা পুলিশকে ফুলও দিচ্ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অবরুদ্ধ সড়ক, মহাসড়ক। দুর্ভোগে পথচারীরা, কিন্তু আন্দোলন নিয়ে বিরক্তি নেই। দেরিতে হলেও আশ্বাস দিচ্ছেন মন্ত্রীরা।
নেতৃত্ব কিংবা কমিটি নেই, এমনকি নেই আন্দোলনের কোনো নিজস্ব গ্রামারও। ফেসবুক এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সহায়তায় তাদের এ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। গতকাল বৃহস্পতিবার দেখা গেছে অভিভাবকরাও যোগ দিচ্ছেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। ফল বা কীভাবে এই আন্দোলনের সমাপ্তি হবে তা জানা নেই তাদের। দাবি আদৌ কোনো ফল আনতে পারবে কি না তা জানেন না তারা। বিশ্লেষকরা বলছেন, আন্দোলন আপনা-আপনি থেমে যাবে, এমন কোনো লক্ষণ নেই।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শেখ আদনান ফাহাদ বলেন, প্রশ্ন হলো কী করলে পরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ক্লাস বা ঘরে ফিরে যাবে? কলেজ শিক্ষার্থীরা যে কোনো মন্ত্রীর আশ্বাসে ক্লাসে ফিরবে না, সেটি পরিষ্কার। পুলিশ দিয়ে শিক্ষার্থীদের রাস্তা থেকে উঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা দুর্ঘটনার পরদিন হলেও তা হয়নি। বরং আন্দোলনের মাত্রা বেড়েছে। একটা ‘শেষ’ না দেখে ছাত্রছাত্রীরা ক্লাসে ফিরে যাবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘মানুষ অবাক হয়ে যায় সন্তানের মৃত্যুর খবরে একজন মন্ত্রী কীভাবে এভাবে হাসতে পারেন।’ পরে অবশ্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন তিনি। এতে শিক্ষার্থী বা সাধারণ মানুষের ক্ষোভ প্রশমিত হয়নি। বাস্তবতা হলো, আন্দোলন আপনা-আপনি থেমে যাবে এমন কোনো লক্ষণ নেই। সরকার অবশ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গতকাল এক দিনের জন্য বন্ধ রেখেছে।
সমস্যার আশু সমাধান খুব দরকার। এ আন্দোলনের ফাঁকে সরকার পরিবর্তনের স্বপ্নে বিভোর কেউ কেউ। জামায়াত-বিএনপি চক্র অপপ্রচার করছে। ‘কখনো আর্মিকে জড়ানোর চেষ্টা করছে, কখনো প্রধানমন্ত্রীর নামে ভুয়া সংবাদ ছেড়ে দিচ্ছে। কিছু জনবিচ্ছিন্ন রাজনীতিবিদ, স্বার্থপর আমলা আর সরকারবিরোধী অশুভ শক্তির তৎপরতায় বিপদ তৈরি হচ্ছে শেখ হাসিনার সরকারের জন্য।’
বিনোদন জগতের জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব হানিফ সংকেত। তিনি তার ফেসবুক পেজ থেকে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ শিরোনামে একটি পোস্ট দিয়েছেন। মতামতে বলেছেন, ‘এ সপ্তাহে রাজপথে কিশোর শিক্ষার্থীদের মুখে উচ্চারিত একটি আলোচিত স্লোগান। যা সবারই মনের কথা। এইসব নিয়মিত অনিয়ম, অসঙ্গতি, রাস্তার নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় প্রায়ই আমি বিভিন্ন মাধ্যমে তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, এই বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও কখনো বৃষ্টিতে ভিজে, কখনো চড়া রৌদে দাঁড়িয়ে আমাদের সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীরা যখন জীবনের নিরাপত্তা, স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা আর ন্যায়বিচারের দাবিতে রাজপথে সোচ্চার- তখন এইসব তথাকথিত বুদ্ধিজীবী, দলীয় সাংবাদিকরা অজ্ঞাত কারণে নিশ্চুপ। এই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আমাদের অনেকেরই অনেক কিছু শেখার আছে। ওদের প্রতিবাদ দেখে আনন্দে-আবেগে চোখ ভিজে গেছে। আর কোনো হতাশা নয়। ওরাই আমাদের সোনালি ভবিষ্যৎ। আমি নিশ্চিত ওদের হাতেই গড়ে উঠবে আগামী দিনের সুস্থ, সুন্দর, ব্যাধিমুক্ত বিশ্বসেরা বাংলাদেশ।’
                                
                                
                                        
                                        
                                        
                                        




