কয়েক মাস হলো সৌদি আরব থেকে নারী শ্রমিকরা বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফেরত আসছেন। বিভিন্ন সংস্থা তাদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কাজ করছে। বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থাও তার মধ্যে একটি। বিদেশে নির্যাতিত নারীকর্মীদের দেশে ফিরিয়ে আনা ও অন্যান্য প্রসঙ্গে বাংলাদেশের খবরের সঙ্গে কথা বলেছেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক মোস্তফা সোহেল
আপনারা এ পর্যন্ত কতজন নারী গৃহকর্মীকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পেরেছেন?
মোস্তফা সোহেল : উইনরক ইন্টারন্যাশনালের অর্থায়নে মানবপাচার প্রতিরোধ প্রকল্প নামে একটি প্রকল্প ২০১৭ সালের অক্টোবরে আমরা হাতে নিই। এই প্রকল্পের আওতায় যাচাই-বাছাই করা আবেদনপত্রের ভিত্তিতে এ পর্যন্ত সৌদি আরব থেকে ৫ জন নারীকর্মীকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে এবং এ সপ্তাহেই আরো ২ জনের ফেরার কথা রয়েছে।
একজন ভিকটিমকে ফিরিয়ে আনতে আপনারা কীভাবে কাজ করেন?
মোস্তফা সোহেল : ভিকটিমের পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদনের ভিত্তিতে আমরা প্রথমত আবেদনপত্রে উল্লিখিত তথ্যাদি যাচাই-বাছাই করে এর সত্যতা নিশ্চিত হয়ে নিই। এরপর জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের কাছে ফরমাল ওয়েতে একটি অ্যাপ্লিকেশন করা হয় এবং প্রতিনিয়ত তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হয়। এরপর তাদের পক্ষ থেকে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে সেই মেয়েটিকে ফিরিয়ে আনার জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়।
দেশে ফিরে আসার পর ভিকটিমকে সংস্থার পক্ষ থেকে কী ধরনের সাপোর্ট দেওয়া হয়?
মোস্তফা সোহেল : আসলে তাদের ফিরিয়ে আনা থেকে শুরু করে এখানে সেটেল করা পর্যন্ত আমরা কাজ করে থাকি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের অনেকে বেশ মুমূর্ষু অবস্থায় ফেরে। তাই প্রথমেই তাদের প্রয়োজনীয় মেডিকেল সাপোর্ট দেওয়া হয়। এটি আমরা দুভাবে করে থাকি। প্রথমত সংস্থার পক্ষ থেকে তাদের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করা হয়। দ্বিতীয়ত আমাদের পরিচিত কিছু হাসপাতালে তাদের বিনামূল্যে চিকিৎসার বা নামমাত্র খরচে চিকিৎসার সুযোগ করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া তাদের আইনি সহায়তা দেওয়া হয়।
কী ধরনের আইনি সহায়তা দেওয়া হয়?
মোস্তফা সোহেল : আইনি সহায়তায় মূলত আমরা নিজস্ব আইনজীবীর মাধ্যমে মামলা করি। এতে ভিকটিমকে রিক্রুটিং এজেন্সি অথবা দালালের কাছ থেকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ আদায়ের ব্যবস্থা এবং এ ধরনের প্রতারণায় যে শাস্তির বিধান রয়েছে, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করি।
পুরো প্রক্রিয়াটিতে ভিকটিমের পরিবারকে কি কোনো অর্থব্যয় করতে হয়?
মোস্তফা সোহেল : না। আমাদের সংস্থার অর্থায়নেই পুরো প্রক্রিয়ায় যে ব্যয় তা বহন করা হয়। এতে তাদের কোনো খরচ করতে হয় না।
আপনাদের সংস্থা থেকে যারা এ ধরনের সহায়তা পেতে চান, তারা কীভাবে যোগাযোগ করবে?
মোস্তফা সোহেল : সারা দেশে আমাদের ৩৫৮টি অফিস আছে। সে সব অফিসে যোগাযোগ করে আবেদন করা যায়। এ ছাড়া আমাদের ওয়েবসাইটে সব কর্মকর্তার নাম এবং নাম্বার দেওয়া আছে। যে কোনো সময় যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেই আমাদের পাওয়া যাবে। সেক্ষেত্রে একটি আবেদনপত্রের মাধ্যমে আবেদন করলে তার যথার্থতা যাচাইয়ের মাধ্যমে আমরা সে কেসটি হাতে নিই।
দেশে নারী শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন বন্ধে সরকারের কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে মনে করেন?
মোস্তফা সোহেল : নারীদের বিদেশের কর্মক্ষেত্রে হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হওয়ার একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হলো, তাদের মধ্যে সচেতনতার অভাব ও জীবনদক্ষতার ওপর প্রশিক্ষণ না থাকা। অন্যদিকে, এজেন্সি, লেবার উইংস ও দূতাবাসগুলোর চরম গাফিলতির কারণেও অনেক নারী নির্যাতনের শিকার হন। নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এমন নারীদের মতে, জরুরি সময়ে এজেন্সি ও দূতাবাসগুলো প্রয়োজনীয় সেবা দিতে ব্যর্থ হওয়ার ফলে নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। সরকারের এ বিষয়ে স্থানীয় উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠানকে পাশে নিয়ে ব্যাপক গণসচেতনতামূলক কর্মসূচি হাতে নেওয়া দরকার! যেসব দেশে নারী শ্রমিকের ওপর হয়রানি বেশি সেসব দেশের দূতাবাসে স্পেশাল উইং বসানো যেতে পারে। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিরও ব্যবস্থা থাকতে হবে। শুধু বিদেশে নয়, দেশে ফিরে আসার পরও একজন নারী শ্রমিককে সমাজে প্রায়ই প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। বিশেষ করে যারা প্রতারিত হয়ে ফিরে আসেন তাদের নিয়ে সমাজের কেউ কেউ উপহাস বা হাস্যরসের জন্ম দেয়! এসব নারী যাতে সমাজে মুখ উঁচু করে বাঁচতে পারেন তার জন্য সরকারের আরো নিবিড় ভূমিকা থাকতে পারে।