জাতিসংঘের করা ই-গভর্নমেন্ট ডেভেলপমেন্ট তালিকায় ৯ ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। দুই বছর পর পর প্রকাশিত এ তালিকায় বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান ১১৫তম। তবে ২০২১ সালের মধ্যে ই-গভর্নেন্স কার্যক্রমের মাধ্যমে তালিকার শীর্ষ ৫০ দেশের মধ্যে নিয়ে যেতে সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
গতকাল রোববার আগারগাঁওয়ের তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের কনফারেন্স সেন্টারে জাতিসংঘের ই-গভর্নমেন্ট ডেভেলপমেন্ট তালিকা বাংলাদেশের অগ্রগতি নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই লক্ষ্যের কথা জানান।
অনুষ্ঠানে জুনাইদ আহমেদ বলেন, আমরা আইসিটি খাতে সারা বিশ্বে সুনাম অর্জন করছি। একই সঙ্গে আমরা গ্লোবাল ইনডেক্সেও প্রত্যেকটি জায়গায় এগিয়ে যাচ্ছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে ৯ বছরের ব্যবধানে আমরা ৫৪ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বৃদ্ধি করেছি। আমাদের লক্ষ্য ২০২১ সালের মধ্যে ই-গভর্নেন্স কার্যক্রমের মাধ্যমে তালিকার শীর্ষ ৫০ দেশের মধ্যে থাকা। এ ছাড়া ২০৪০ সালের মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী দেশগুলোর মধ্যে ২০তম হতে চাই। এই লক্ষ্যে আমরা এখন আমাদের দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বাড়াতে কাজ করব।
ই-গভর্নেন্স নিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০১০ সালে একটি ইউনিয়নের মাধ্যমে শেখ হাসিনা ই-গভর্নেন্স নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন। আজ দেশের ৫ হাজার ২৭২টি ইউনিয়নে ডিজিটাল সেবা পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের যেই পৌরসভাগুলো আছে খুব শিগগিরই সেগুলোতেও হোল্ডিং ট্যাক্সের মতো চার ধরনের সেবা অনলাইনে চালু করা যাবে। আমাদের লক্ষ্য ’২১ সাল নাগাদ ৯০ ভাগ সরকারি কাজ অনলাইনে নিয়ে আসা। আর সেই লক্ষ্যেই আমরা ধাপে ধাপে এগিয়ে যাব।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বাড়াতে হবে। আর ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বাড়াতে সবার আগে গুরুত্ব দিতে হবে এর অবকাঠামোকে। কারণ, ইন্টারনেট যদি সহজলভ্য না হয়, সুলভ না হয় আর ব্যবহারকারীদের মধ্যে সচেতনতা না থাকে তাহলে ব্যবহারকারী বাড়ানো যাবে না।
পলক বলেন, ডিজিটাল সার্ভিসগুলোকে মানুষের কাছে পৌঁছাতে হলে, প্রথমেই আমাদের এগুলোকে তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করতে হবে। যেমন আমাদের দেশের ১৬ কোটি মানুষ, যাদের মধ্যে তিনটি ভাগ আছে। একটি হচ্ছে, ডিজিটাল নেটিভ। যারা এই ডিজিটাল দুনিয়ায় জন্মগ্রহণ করেছে, ইন্টারনেটের মধ্যে বড় হয়েছে এবং তারা বড় হওয়ার পর থেকেই ইন্টারনেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এদের জন্য সার্ভিস ডিজাইন করতে হবে আলাদা করে। যেমন মোবাইল অ্যাপলিকেশন বা অ্যাপ সেবা। কারণ, এরা ডিজিটাল সেন্টারেও যাবে না, শেয়ার্ড সার্ভারেও যাবে না, ওয়েবসাইটেও যাবে না। আরেকটি গ্রুপ হচ্ছে ডিজিটাল অ্যাডাপ্টেড। মধ্যবয়সী, যাদের জন্ম হয়েছে অ্যানালগ দুনিয়াতে, বড় হয়েছে ডিজিটাল দুনিয়াতে। ধরুন, যাদের জন্ম হয়েছে টিএন্ডটি টেলিফোনের যুগে, কলেজে উঠে পেয়েছে মোবাইল ফোন আর বিশ্ববিদ্যালয়ে পেয়েছে ইন্টারনেট। এই ভাগের বাসিন্দাদের জন্য আবার সার্ভিস ডিজাইন করতে হবে আলাদাভাবে। যেমন এরা ওয়েবসাইটও ব্যবহার করবে তেমনি মোবাইল অ্যাপও ব্যবহার করবে।
আর তৃতীয়ত যারা আমাদের টার্গেট, তারা হচ্ছে ওই যে ৫৪ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর বাইরে যে ৪৬ শতাংশ আছে তারা। তারা হচ্ছে আউট ফ্ল্যায়ার্স। যারা এখনো ইন্টারনেটকে অ্যাডাপ্ট করতে পারেনি, আর ইন্টারনেট কী তা জানেও না। তাদের কাছে ইন্টারনেট পৌঁছাতেই শেয়ারিং একসেস পয়েন্ট, ডিজিটাল সেন্টার তৈরি করা হয়েছে। একজন সার্ভিস প্রোভাইডার তাকে ইন্টারনেট সংশ্লিষ্ট সার্ভিসগুলো দেবে। আর এভাবেই আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছে যাব বলে আমার বিশ্বাস।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, এটুআইয়ের পলিসি অ্যাডভাইজার আনীর চৌধুরী, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব জুয়েনা আজিজ, এটুআই এবং আইসিটি বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।