হৃদরোগের উপকারে ওমেগা-৩ ক্যাপসুল একটি মিথ

হৃদরোগ থেকে বাঁচতে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড আসলে খুব কাজে আসে না

ছবি : ইন্টারনেট

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দাবি

হৃদরোগের উপকারে ওমেগা-৩ ক্যাপসুল একটি মিথ

  • আসিফ খান
  • প্রকাশিত ২১ জুলাই, ২০১৮

ওমেগা-৩ খাবার নিয়ে বেশ হই চই চারদিকে। একে সুপারফুড হিসেবেও আখ্যা দিয়েছেন অনেকে। বলা হয়ে থাকে একই খাবারে যদি হৃদরোগ, বাতের ব্যথা, হাড়ের সমস্যা কমে যায়। আবার ওজন কমাতে চাইলেও নাকি এই খাবারের জুড়ি নেই। তাই হয়তো পাড়ার ওষুধের দোকান থেকে শুরু করে মুদি দোকানেও পাওয়া যায় এই খাবারটির কৃত্রিম রূপ। অনেকেই নিয়মিত দোকান থেকে ওমেগা-৩ ক্যাপসুল কিনে খান।

কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে, হৃদরোগ থেকে বাঁচতে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড আসলে খুব কাজে আসে না।

প্রায় এক লাখেরও বেশি ব্যক্তির ওপর পরিচালিত গবেষণা শেষে গবেষকরা বলেছেন, ওমেগা-৩ যে হূদরোগ প্রতিরোধে কার্যকর, সে ব্যাপারে অতি সামান্যই প্রমাণ মিলেছে। এ থেকে অর্থপূর্ণ সুবিধা পাওয়ার সম্ভাবনাও হাজারে মাত্র এক।

কোচরেন লাইব্রেরির একদল গবেষক দেখেছেন- হৃদরোগ, স্ট্রোকের কারণে মৃত্যুঝুঁকি কমানোর ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকাই রাখতে পারছে না; তা একজন মানুষ যতই ওমেগা-৩ ক্যাপসুল খান না কেন।

কোচরেনের প্রধান গবেষক ড. লি হারপার বলেন, ওমেগা-৩ সম্পূরক অংশ হৃৎপিণ্ডকে সুরক্ষিত রাখে এমন জনপ্রিয় ধারণার বিরুদ্ধে গেলেও গবেষণায় যা পেয়েছি, তার ব্যাপারে আমরা আত্মবিশ্বাসী হতে পারি; দীর্ঘ সময় নিয়ে হাজার হাজার মানুষকে পর্যবেক্ষণ শেষে আমরা এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি। সব ধরনের তথ্য বাদেও আমরা এর কোনো কার্যকারিতা পাইনি।

তিনি বলেন, সাপ্লিমেন্ট ওমেগা-৩ বা ওমেগা ক্যাপসুল হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্যের উপকারিতায় কোনো প্রভাব ফেলতে পারে না। তবে সুষম খাদ্য তালিকায় তৈলাক্ত মাছ আপনাকে রাখতেই হবে। কারণ তৈলাক্ত মাছ স্বাস্থ্য সুরক্ষায়ও বেশ প্রয়োজনীয়।

যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস) পরামর্শ দিয়েছে, শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় চর্বি পেতে স্যামন, তাজা টুনা কিংবা ম্যাকরেলের মতো তৈলাক্ত মাছের টুকরাসহ প্রত্যেকেরই সপ্তাহে অন্তত দুই টুকরা মাছ খাওয়া উচিত।

এনএইচএস বলছে, ওমেগা-৩-এর মধ্যে যে আলফা-লাইনোলেনিক অ্যাসিড (এএলএ) পাওয়া যায়, তা মানবদেহ নিজে থেকে উৎপাদন করতে পারে না। স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য অতীব প্রয়োজনীয় এ উপাদানটি মেলে বীজ, শাকসবজির তেল ও বাদামের মধ্যে। এএলএ থেকে মানবদেহ এ ইকোসাপেন্টায়েনয়েক অ্যাসিড (ইপিএ) ও ডোকোসাহেক্সানয়েক অ্যাসিডও (ডিএইচএ) তৈরি করতে পারে; মাছের তেল ও তৈলাক্ত মাছের মধ্যেও এ দুটি উপাদানের খোঁজ পাওয়া যায়।

তবে অনেক কোম্পানি দুধ, দধি ও রুটির মধ্যে অতিরিক্ত ওমেগা-৩ যোগ করে। কিন্তু সেগুলো কোনো বিশেষ কাজে আসে না বলে উল্লেখ করেছেন ড. লি হারপার।

তাই কৃত্রিমভাবে অতিরিক্ত ওমেগা-৩ যোগ করা খাবারের চেয়ে শাকসবজি খাওয়ায় জোর দিতে বলেছেন শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক টিম চিকো। তিনি বলেন, একটা সময় গেছে, যখন হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ওমেগা-৩ সম্পূরক খেতে পরামর্শ দিত এনএইচএস। কয়েক বছর ধরে তা বন্ধ রয়েছে। এ ধরনের সম্পূরকের দামও কম নয়। এখন কেউ যদি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে এসব কিনতে চান, আমি তাদেরকে শাকসবজিতে টাকা খরচের পরামর্শ দেব।

আর হৃৎপিণ্ডের সুরক্ষায় ওমেগা-৩-এর কার্যকারিতা প্রমাণ না হলেও খাদ্য তালিকা থেকে এখনই একে বাদ না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের হেলথ অ্যান্ড ফুড সাপ্লিমেন্টস ইনফরমেশন সেন্টারের ড. ক্যারি রুক্সটন। তিনি বলেন, হৃৎপিণ্ডের জন্য না হলেও চোখের স্বাস্থ্য, রোগ প্রতিরোধ কার্যক্রম ও মস্তিষ্কের জন্য মানবদেহে এখনো ওমেগা-৩-এর ব্যবহার আছে। তাই যেসব প্রাকৃতিক খাবারে এই উপাদানটি আছে সেগুলো বেশি খেতে হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads