নৌকাবাইচ : নড়াইলের ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ একটি জনপ্রিয় বিনোদনের মাধ্যম। নদী অধ্যুষিত এ জেলার গ্রাম ও শহরের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে প্রিয় নৌকাবাইচ। জেলার মধুমতী, নবগঙ্গা, চিত্রা, কাজলাসহ বড় বড় বিলে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে নৌকাবাইচের আয়োজন কোনো না কোনো এলাকায় হয়েই থাকে। বিশেষ করে প্রতিবছর বিশ্ব বরেণ্য চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে চিত্রা নদীতে নৌকাবাইচের আয়োজন করা হয়ে থাকে। লাখো মানুষের উপস্থিতিতে জনস্রোতে পরিণত হয় নদীর দুই পাড়। নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর কিংবা কিশোরী কেউ এ আনন্দ উপভোগ থেকে বাদ পড়ে না। নারী-পুরুষ ও শিশু-বৃদ্ধের আগমনে এ নৌকাবাইচ পরিণত হয় মিলনমেলায়। গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ নৌকাবাইচ দেখতে নদীর দুই পাড়, বাড়ির ছাদ, গাছের ডালে বসে যে যেখান থেকে যেভাবে পেরেছে সেভাবেই সবাই উপভোগ করেছেন। এ আনন্দ উপভোগ করতে সবাই সারা বছর যেন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে ছিল। গ্রাম-বাংলার এ ঐতিহ্য নৌকাবাইচ এ জেলার মানুষের একটি অন্যতম বিনোদনের মাধ্যম। এ প্রতিযোগিতায় নানা সাজে সাজানো হয় নৌকা। ১০-১২টি নৌকার প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী নৌকার মালিককে পুরস্কার দেওয়া হয়।
ষাঁড়ের লড়াই : বাংলাদেশের গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী বিনোদনের একটি মাধ্যম ষাঁড়ের লড়াইল। এটি এখন আর শুধু গ্রাম-বাংলারই নয়। খেলাটা শহরের মানুষের কাছেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ষাঁড়ের এ লড়াইল নড়াইলে এখন ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ইদানীং শহর ও গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় এটির প্রতিযোগিতা হয়ে আসছে। লাল-কালো ও শিংওয়ালা এবং গলায় মালা পরিয়ে ষাঁড়গুলোকে লড়াইয়ের জন্য একটি বিশাল বড় খোলা মাঠে প্রস্তুত করা হয়। মাঠের চারপাশে ষাঁড়ের লড়াই প্রতিযোগিতা উপভোগ করতে নারী-পুরুষ, যুবক-যুবতীসহ কিশোর-কিশোরীরা মাঠের চারপাশে দাঁড়িয়ে লড়াই উপভোগ করে। দুটি ষাঁড়কে লড়াইয়ের জন্য মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়। আপন অস্তিত্ব রক্ষায় ষাঁড় একে অপরকে ঘায়েল করার নানা কৌশল অবলম্বন করে হাজার হাজার দর্শকের সামনে একটি অন্যটিকে পরাস্ত করে বিজয়ী হয়। ষাঁড়ের লড়াইলে জেলার সবচেয়ে শক্তিশালী ষাঁড়গুলোই এ লড়াইয়ে অংশ নেয়। এ ছাড়া বিভিন্ন জেলার ষাঁড়ও লড়াই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। নড়াইলের এসএম সুলতান, মোসলেম মেলাসহ বিভিন্ন মেলা উপলক্ষে বেশিরভাগ এলাকায় ষাঁড়ের লড়াই হয়ে থাকে।
লাঠিখেলা : লাঠিখেলা দেশি জনপ্রিয় গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলা। বর্তমান প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা বিভিন্ন খেলা যেমন- ক্রিকেট, ফুটবল, লন টেনিস, টেবিল টেনিস, খো-খো, ব্যাডমিন্টনসহ নানা রকম বিদেশি খেলায় মেতে উঠেছে। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে আকাশ সংস্কৃতি, ডিস অ্যান্টেনা। আকাশ সংস্কৃতির কারণে বর্তমান প্রজন্ম বিশ্ব সম্পর্কে অনেক কিছু জানে ঠিকই কিন্তু দেশীয় সংস্কৃতি থেকে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। গ্রামাঞ্চলের শিশু-কিশোররা দলবেঁধে বিভিন্ন ফাঁকা স্থান বা মাঠে জড়ো হয়ে দেশীয় লাঠিখেলা উপভোগ করত। ’৮০-এর দশক থেকে এ দেশে ধীরে ধীরে আবির্ভাব ঘটতে থাকে বিদেশি খেলার। আজ এমন পর্যায় এসে পৌঁছেছে যে, বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত জনপ্রিয় গ্রাম-বাংলার লাঠিখেলা চিরতরেই দেশ থেকে হারিয়ে যেতে বসেছিল। বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্য লাঠিখেলা আমাদের সন্তানরা একেবারেই ভুলে যেতে বসেছিল। ঠিক সেই সময় লাঠিখেলাকে বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরিয়ে এনেছে নড়াইল সদরের বাঁশগ্রামের বগুড়া গ্রামের লাঠিখেলার দল।





