চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলায় বহুবছর ধরে বর্ষা মৌসুমের পরে কৃষি জমিতে কুমড়া আবাদ করে আসছেন কৃষকরা। কুমড়া আবাদ লাভজনক হওয়ায় দিন দিন এই আবাদ বৃদ্ধি পায়। কিন্তু চলতি বছর পোকার আক্রমন হওয়ায় অনেক কুমড়া জমিতে পচে যায় এবং কৃষকরা ব্যাপক হারে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এর কারণ হিসেবে কৃষকরা কৃষি কর্মকর্তাদের বার বার বলা সত্ত্বেও তাদের সহযোগিতা না পেয়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।
শনিবার (১২ জানুয়ারি) বিকেলে জেলার হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার বলাখাল দক্ষিণ গ্রামের মাঠগুলোতে এসব দৃশ্য দেখা যায়।
চাঁদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানাযায়, চাঁদপুর জেলার সদর ও হাজীগঞ্জ উপজেলায় অধিকাংশ ইউনিয়নে কুমড়া আবাদ হয়। এ বছর এ দু উপজেলাসহ জেলায় ৬৫০ হেক্টর জমিতে কুমড়ার আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে উৎপাদন হয়েছে ২৬ হাজার ৫০০ মেট্টিক টন। আর হেক্টর প্রতি গড় উৎপাদন হয়েছে ২৫ মেট্টিক টন।
বলাখাল এলাকার কৃষিক অহিদুর রহমান জানান, আবহাওয়া ভাল থাকায় এবছর উৎপাদন আরো বৃদ্ধি হওয়ার কথা থাকলেও পোকার আক্রমনে জমিতেই অধিকাংশ কুমড়ার পচন হয়েছে। যার ফলে আমরা কুমড়াগুলো বিক্রি করতে পারেননি। অন্য বছর জেলার চাহিদা মিটিয়ে এসব কুমড়া ঢাকা ও চট্টগ্রামে রপ্তানি করা হয়েছে।কিন্তু এ বছর অন্য জেলায় রপ্তানি করতে না পেরে স্থানীয় বাজারগুলোতেই কুমড়া বিক্রি করতে হয়েছে।
হাজীগঞ্জ উপজেলার বাকিলা এলাকার ইলিয়াছ ও রহমান মিয়া জানান, কৃষি কর্মকর্তাদের বার বার বলা সত্ত্বেও তারা আমাদের আবাদের এ অবস্থা দেখতে আসেননি। তারা যদি সময়মত আমাদেরকে এসে পরামর্শ দিতেন তাহলে ক্ষতির সম্মুখিন হতাম না।
একই এলাকার আরেক কৃষক আফসার উদ্দিন খান জানান, তিনি এ বিষয়ে ইউনিয়ন কৃষি অফিসে গেলে তাকে বলে মাঠ থেকে পচা কুমড়া আর গাছ নিয়ে আসতে। এটা কিভাবে সম্ভব। সরেজমিন না গেলেত আমাদের বাস্তব অবস্তা বুঝা সম্ভব নয়। সঠিক সময়ে কীটনাশক ব্যবহার ও পরামর্শ না পাওয়ায় আমাদের লোকসানে পড়তে হয়েছে। কারণ অনেকেই বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে কৃষি আবাদ করেছেন।
চাঁদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ অফিসার নোয়াখেরুল ইসলাম জানান, কুমড়ায় পোকার আক্রমন কিছু কিছু এলাকার কৃষকদের অভিযোগ পেয়েছি। কৃষি কর্মকর্তারা সব সময়ই কৃষকদের পরামর্শদেন। যদি কোন কর্মকর্তা তাদের দায়িত্ব অবহেলা করে, তাহলে ব্যবস্থা নিবেন। আমরা ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের তাৎক্ষনিক সহযোগিতা করে আসছি এবং তাদেরকে প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে।
চাঁদপুরের জনপ্রিয় এ কুমড়া আবাদের ক্ষেত্রে কৃষি বিভাগের তত্ত্বাবধান বাড়ালে এবং সঠিক সময়ে কৃষকদের পরামর্শ দিলে লোকসানে পড়বে না কৃষক। স্থানীয় বাজারগুলোর চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করতে পারবে দেশের অন্যান্য জেলায় এমন অভিমত অধিকাংশ কৃষকের।