বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান, সাহিত্য, প্রকৌশল, ইতিহাস, কম্পিউটার সায়েন্স, বিবিএ কত রকম বিষয় আছে। কোন বিষয়ে আপনি পড়বেন? সঠিক বিষয়টি বেছে নেওয়াই কঠিন। স্বপ্ন নিয়ে একেক জন একেকটি বিষয়ের সঙ্গে পরিচয় লাভ করি। একটি জাতির কারিগর অর্থনীতিবিদ। তার পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশের উন্নয়ন হয়ে থাকে। সরাসরি দেশের নেতৃত্বে ও উন্নয়নে কাজ করার সুযোগ রয়েছে অর্থনীতিবিদদের। এসব কারণে বর্তমান তরুণ প্রজন্মের প্রথম পছন্দ অর্থনীতি। অর্থনীতি বিষয়ের নানা দিক সম্পর্কে জানাচ্ছেন শিলুফা এ. শিল্পী
‘অর্থনীতিবিদ’ পদবি নামের আগে দেখতে কার না ভালো লাগে? শুধু পদবি নয়। অর্থনীতির শিক্ষার্থীদের কাজ করার সুযোগ রয়েছে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবির মতো বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানে। এ ছাড়া অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখেন এমন ব্যক্তিদের প্রতিবছর নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদরা যে নোবেল পাবেন না তা কেউ বলতে পারবে?
বিশেষজ্ঞরা বলেন, অর্থনীতি একটি ডায়নামিক ও মাল্টিডিসিপ্লিনারি সাবজেক্ট। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে উন্নয়ন সহযোগী সরকারি, বেসরকারি এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানে কাজ করার জন্য এ বিষয়ের শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। বিসিএস, সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন, আইএনজিও, এনজিও, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা, মানবাধিকার সংস্থাসহ প্রায় সব প্রতিষ্ঠানেই অর্থনীতির ছাত্রদের চাকরির ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। তাই তরুণ প্রজন্মের কাছে অর্থনীতি বিষয় পছন্দের শীর্ষে।
এছাড়া শুধু অর্থনীতির শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ কিছু পেশা ও প্রতিষ্ঠান আছে। যেমন- প্লানিং ডিভিশন; যা প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। অর্থনীতিবিদ ছাড়া অচল এসব ডিভিশন। পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা করে থাকেন অর্থনীতিবিদরা। যে কোনো বড় প্রকল্পের ফিসিবিলিটি স্টাডিজের ক্ষেত্রে অর্থনীতিবিদ থাকা অপরিহার্য।
কী পড়ানো হয় : জীবনের সবক্ষেত্রেই অর্থনীতির ব্যবহার রয়েছে। বিষয়টি একজন শিক্ষার্থীকে যুক্তিসংগত সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। অর্থনীতিবিষয়ক জ্ঞান প্রয়োগ করে যেকোনো সিদ্ধান্ত আরও ভালোভাবে নেওয়া যায়। পড়ালেখা শুধুই সংখ্যা, লেখচিত্র, হিসাবনিকাশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। অর্থনৈতিক জ্ঞান কাজে লাগিয়ে কীভাবে মানুষের জীবনযাপনকে আরো উন্নত করা যায়, সেটাই শেখাতে চেষ্টা করে। অর্থনীতি হলো ভিত্তি আর বিপণন, ব্যবস্থাপনা, আর্থিক সংস্থানের মতো বিষয়গুলো হলো এর শাখা-প্রশাখা। অর্থনীতি ঠিকঠাক বুঝতে পারলে এসব বিষয় বোঝা সহজ হয়ে যাবে। একটি দেশের অর্থনীতি কীভাবে কাজ করে ও করা উচিত। অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক খাতে কী ধরনের পরিবর্তন আনা যায়। কম খরচে কিভাবে বেশি মুনাফা লাভ করা যায় এ সম্পর্কে অর্থনীতির ছাত্রছাত্রীরা ভালো ধারণা পান। এ ছাড়া বাজেট, খরচ ও আয়কে কীভাবে আরো উন্নত করা যায়, তাও জানা যায় অর্থনীতি পড়ে।
ভবিষ্যৎ কী : বিশ্বে মৌলিক বিষয়গুলোর যেমন চাহিদা রয়েছে, ঠিক একই রকম চাহিদা অর্থনীতির। বর্তমানে বিশ্বে কৃত্রিম বুদ্ধিত্তার দিকে এগোচ্ছে। একটা সময় আসবে যখন খুব কমসংখ্যক ক্ষেত্রেই মানবিক বুদ্ধিত্তার প্রয়োজন হবে। রোবটের সাহায্য কাজে লাগিয়েই সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। সে সময় অনেক কিছুরই প্রয়োজন না থাকলেও একটি মৌলিক বিষয় হিসেবে অর্থনীতির চাহিদা থেকেই যাবে।
ধরা যাক, বিশ্বের সবচেয়ে অনুন্নত দেশে যদি কমপক্ষে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ও থাকে, তবে সেখানে অর্থনীতি বিভাগটি অবশ্যই থাকবে। অতএব অর্থনীতিতে পড়লে কাজের সুযোগ নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না। স্নাতক পর্যায়ে অর্থনীতিতে পড়ে পরবর্তীকালে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি করার সময় বিশেষায়িত দিকে যাওয়াই ভালো। কারণ এখন প্রায় সব বিষয়ই বিশেষায়িত হয়ে যাচ্ছে। তাই সেসব বিশেষায়ণ সম্পর্কে জানা না থাকলে পরবর্তীকালে সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। যেমন- ইকোনমিকস অ্যান্ড সোশ্যাল পলিসি, অ্যাপ্লাইড ইকোনমিকস, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিকস, লেবার ইকোনমিকস ইত্যাদি বিশেষ ও স্বতন্ত্র ক্ষেত্র নিয়ে পড়া ভালো।
ক্যারিয়ার : অর্থনীতি পড়ে কেউ যদি শিক্ষকতা করতে চায়, তাহলে পিএইচডি করে নেওয়া ভালো। এ ছাড়া শিক্ষকতার পাশাপাশি গবেষণা করা যায়। আমাদের দেশে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা আছে। যেমন পিআরআই, সিপিডি (সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ), পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট ইত্যাদি। এ ছাড়া বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান যেমন- এডিবি (এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক), ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট ইত্যাদি। এসব প্রতিষ্ঠানে শুধু অর্থনীতির ছাত্রছাত্রীর কাজের সুযোগ রয়েছে। বিশ্বের যেকোনো ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অর্থনীতির ছাত্রছাত্রীরা কাজের ক্ষেত্র খুঁজে পাবে।
কারা পড়বে : অর্থনীতিতে পড়ার আগে প্রস্তুতির জন্য সব বিষয়েই যে ভালো দখল থাকতে হবে, তা কিন্তু নয়। গণিত ও ইংরেজি সবচেয়ে বেশি কাজে লাগবে। কারণ অর্থনীতির ভালো বইগুলো প্রায় সবই ইংরেজিতে লেখা। আর অর্থনীতিতে পরিসংখ্যান ও অঙ্কের অনেক ব্যবহার তাই অঙ্কের ভিতটাও শক্ত থাকা দরকার। খুব যে ভালো হতে হবে তা-ও নয়।