ক্যামেরায় নিজের ছবি নিজে ধারণ করার কৌশল হিসেবে খুবই সুপরিচিত একটি নাম সেলফি, যা বর্তমান প্রজন্মের নিত্যদিনের কার্যকলাপের একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার অনেকেই আসক্তও হয়ে পড়ছেন এই সেলফির প্রতি। তাই অসাবধানতার বশে সেলফি তুলতে গিয়েই প্রাণ হারাতে হয়েছে অনেককেই। গত ছয় বছরে যার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৫৯ জনে।
এমনটাই জানা গেছে জার্নাল অব ফ্যামিলি মেডিসিন অ্যান্ড প্রাইমারি কেয়ারে প্রকাশিত এক গবেষণার প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১১ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৭ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সেলফি তুলতে গিয়ে সারা বিশ্বে মোট ২৫৯ জন নিহত হয়েছেন।
এই গবেষণাটি করেছেন ভারতের নয়াদিল্লিতে অবস্থিত অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেসের গবেষকরা। প্রতিবেদনটি তৈরি করতে গিয়ে গবেষকরা সার্চ ইঞ্জিনের সাহায্য নিয়ে সেলফি ডেথস, সেলফি মোরালিটি, সেলফ ফটোগ্রাফি ডেথস, কুলফি ডেথস বা সেলফি অ্যাকসিডেন্টসের মতো কিওয়ার্ড নিয়ে সার্চ করেন। সেখান থেকে প্রাপ্ত ফলাফলের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন ইংরেজি পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যের সঙ্গে মিলিয়ে এই সংখ্যা নিশ্চিত করে গবেষকদের দল।
গবেষণার দেখা যায়, ২০১১ সালে সেলফি তুলতে গিয়ে মারা গিয়েছিল মাত্র ৩ জন এবং ২০১৩-তে ২ জন। পর্যায়ক্রমে তা বাড়তে থাকে, ২০১৪ সালে ১৩ জন, ২০১৫ সালে ৫০ জন। পরবর্তী সময়ে ২০১৬ সালে তা প্রায় দ্বিগুণ হয়, যা বেড়ে দাঁড়ায় ৯৮ জনে। তবে ২০১৭ সালে এই সংখ্যাটা সামান্য কমে ৯৩ জনে গিয়ে দাঁড়ায়। যাদের মধ্যে ১৩৭ জনেরই বয়স ছিল প্রায় ২৩ বছরের কাছাকাছি। তবে মোট নিহতদের বয়সের রেঞ্জ ছিল ১০ থেকে ৬৮ বছর। মোট নিহতের ৫০ শতাংশ (১০৬) জন ছিল ২০ থেকে ২৯ বছরের আর ৩৬ শতাংশ ছিল ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সের। এ ছাড়া নিহতদের মধ্যে ৭২.৫ শতাংশ পুরুষ এবং ২৭.৫ শতাংশ ছিল নারী।
প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়েছে, সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ভারতে, এরপরই আছে রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তানসহ অন্যান্য দেশ। আর সেলফি তুলতে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি যে কারণ পাওয়া যায় তা হচ্ছে ডুবে যাওয়া, যার সংখ্যা ৭০ জন। পর্যায়ক্রমে এরপরের অবস্থানেই আছে যানবাহন, পড়ে গিয়ে নিহত হওয়া এবং আগুনের কারণে নিহত হওয়া।
প্রতিবেদন তৈরি করতে গিয়ে গবেষকরা, জলাশয়, পর্বত চূড়া বা উঁচু দালান বা অন্যান্য স্থাপনাসহ বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোকে ‘নো-সেলফি জোন’ হিসেবে তৈরি করার পরামর্শ দিয়েছেন। এতে করে সেলফি তুলতে গিয়ে মৃত্যুর হার কিছুটা কমবে বলে মনে করেন তারা।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে প্রযুক্তি সাইট ম্যাশএবলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, হাঙ্গরের আক্রমণের শিকার হওয়ার চেয়ে সেলফি তোলার চেষ্টায় নিহত মানুষের সংখ্যা বেশি।