হজযাত্রা শুরু করার আগে...

হজের সফরে বেশকিছু অতিরিক্ত মালপত্র সঙ্গে নিতে হয়

সংরক্ষিত ছবি

ধর্ম

হজযাত্রা শুরু করার আগে...

  • ইশতিয়াক আবীর
  • প্রকাশিত ১ অগাস্ট, ২০১৮

আপনার হজ যেন সঠিক ও সুন্দর হয়, হজযাত্রা শুরুর আগেই সেদিকে নজর দিতে হবে| এখানে আপনি কীভাবে প্রস্তুতি গ্রহন করবেন সে বিষয়ে কিছু দিকনির্দেশনা প্রদান করা হলো-

 

মানসিক প্রস্তুতি : সবার প্রথম নিয়ত পরিশুদ্ধ করুন। হাদিসের ভাষ্য হলো, নিয়তের ওপরই আমল প্রতিদান নির্ভরশীল। লোক-দেখানোর জন্য, সমাজে মান-মর্যাদা বাড়ানোর জন্য, নামের সঙ্গে আলহাজ লেখার জন্য বা নির্বাচনী লড়াইয়ে জনতাকে অধিক পরিমাণে প্রভাবিত করার উদ্দেশ্য থেকে নিয়ত পবিত্র রাখুন।

তওবা ও হক আদায় : বান্দার হক বিষয়সহ জানা-অজানা গুনাহ বা পাপ থেকে মুক্তি কামনা করে আল্লাহর দরবারে তওবা প্রার্থনা করুন। হূদয় উজাড় করে মুক্তি কামনা করুন।

শারীরিক প্রস্তুতি : হজের ফ্লাইট শুরু হওয়ার আগ থেকে শারীরিকভাবে যারা অসুস্থ রয়েছেন, অতিসত্বর চিকিৎসা গ্রহণ করে নিজেকে প্রস্তুত করে তুলুন। কারণ হজ আর্থিক ইবাদতের পাশাপাশি একটি শারীরিক ইবাদতও। শুদ্ধভাবে হজ পালনের জন্য শারীরিকভাবে সুস্থ ও সবল থাকা জরুরি।

স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও প্রতিষেধক গ্রহণ : হজে যাওয়ার আগে প্রত্যেক হজযাত্রীকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও প্রতিষেধক নিতে হবে। প্রত্যেক হজযাত্রীর জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষা, মেনিনজাইটিস ও ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিষেধক টিকা গ্রহণ এবং স্বাস্থ্য সনদ গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক।

ব্যবহার্য জিনিসপত্র : নিত্যব্যবহার্য বিভিন্ন মালপত্রের পাশাপাশি একজন হাজিকে হজের সফরে বেশকিছু অতিরিক্ত মালপত্র সঙ্গে নিতে হয়। তবে এক্ষেত্রে মালপত্র যথাসম্ভব হালকা রাখা উচিত। কারণ গোটা সফরে এই বোঝা আপনাকেই বহন করতে হবে।

হজ সফরের প্রয়োজনীয় মালপত্রের একটি তালিকা দেওয়া হলো- পাসপোর্ট, টিকেট ও ডলার সংগ্রহ করা, ভিসা এবং টাকা রাখার জন্য গলার সঙ্গে ঝোলানো ব্যাগ, ইহরামের কাপড় (কমপক্ষে দুই জোড়া) আর মহিলাদের জন্য সাদা সালোয়ার-কামিজ এবং বোরকাই যথেষ্ট। ইহরামের সময় কপালে বাঁধার জন্য ক্যাপ এবং কোমরে বাঁধার বেল্ট, স্পঞ্জের স্যান্ডেল বা জুতা এবং জুতা রাখার জন্য কাপড়ের ব্যাগ, মাথা মুণ্ডনের জন্য ব্লেড বা রেজার, মেসওয়াক, ব্রাশ, পেস্ট, টিস্যু, আয়না, চিরুনি, তেল, সাবান, দাঁতের খিলান, বিছানার চাদর, পাম্পিং বালিশ, গায়ে দেওয়ার চাদর, প্লেট, গ্লাস, ছোট হ্যান্ডব্যাগ, বড় ব্যাগ বা লাগেজ, ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ। পুরুষের এক মাসের জন্য প্রয়োজনীয় লুঙ্গি, গামছা, গেঞ্জি, টুপি, জুতা, মোজা এবং মহিলাদের এক মাসের প্রয়োজনীয় এমন সালোয়ার, কামিজ, ওড়না, শাড়ি, ব্লাউজ, বোরকা, স্যান্ডেল, প্রয়োজনীয় কিতাব বা বই এবং ব্যক্তিগত খরচের জন্য টাকা, কাগজপত্র হেফাজতের জন্য হাজিব্যাগ ও যাবতীয় মালপত্র রাখার জন্য একটি বড় ব্যাগ বা লাগেজ। শুদ্ধ এবং যথাযথ নিয়ম মোতাবেক হজব্রত পালন হোক আপনার অঙ্গীকার।

ভালো মুয়াল্লিম নির্বাচন : হজ সফরে সঙ্গী নির্বাচনে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। কারণ আপনি যে দেশে যাচ্ছেন, সেখানকার পরিবেশ আপনার অপরিচিত। তাছাড়া নতুনদের অনেকেরই হজের হুকুম-আহকাম এবং কোথায়-কখন কী করতে হবে তা জানা থাকে না। তাই আপনার উচিত হবে একজন ভালো মুয়াল্লিমের সঙ্গে থাকা, যেন সহজেই এসব সমস্যার সমাধান হয়।

নারীর হজ প্রস্তুতি : হজ ও ওমরা পালনের ক্ষেত্রে পুরুষ ও নারীর নিয়ম প্রায় একই রকম হলেও কিছুটা পার্থক্য আছে। প্রথমেই নারী হজযাত্রীর সঙ্গে মাহরাম থাকতে হবে। ইহরাম বাঁধার সময় সেলাই করা কাপড় অর্থাৎ সালোয়ার-কামিজ ও যে কোনো জুতা পরতে পারবেন। চেহারা খোলা রাখতে হবে। তবে মাথা ঢেকে রাখতে হবে। তালবিয়া ও অন্যান্য দোয়া-দরূদ উচ্চৈঃস্বরে পড়া যাবে না। তাওয়াফে রমল করা, ইজতেবা করা ও সায়িতে সবুজ দুই খুঁটির মাঝখানে পুরুষের মতো দৌড় দেওয়া যাবে না। সায়ি শেষে চুলের মাথা থেকে আঙুলের পুরো এক গিরা পরিমাণ মাহরাম দ্বারা কেটে নেবেন। পর্দা রক্ষা করে যথাসম্ভব পুরুষ এড়িয়ে চলে হজ ও ওমরা শেষ করতে হবে। তাওয়াফরত অবস্থায় নামাজের সময় হয়ে গেলে নামাজ সেরে নিতে হবে। যেখানে তাওয়াফ শেষ হবে, সেখান থেকে নামাজের পর ফের শুরু করতে হবে। নামাজের জন্য মহিলাদের আলাদা বসতে বলা হয়; কারণ অনেক সময় দেখা যায় একত্রে বসে তারা গল্প শুরু করে দেন- যা ঠিক নয়। যত সময় হেরেমে থাকা হবে, তত সময় ইবাদত-বন্দেগিতে কাটানোর প্রাণপণ চেষ্টা করতে হবে। হেরেমের চারপাশে মহিলাদের জন্য রাখা আলাদা টয়লেট ব্যবহার করতে হবে। মাসিকের সময় তাওয়াফ করা যাবে না। ইহরাম বাঁধার পর মাসিক শুরু হলে নামাজ, তাওয়াফ ও সায়ি কোনোটাই করা যাবে না। পবিত্র হলে গোসল করে ওমরা শেষ করতে হবে। হজের সফরে বেরিয়ে মিকাতে পৌঁছার আগেই যদি মাসিক শুরু হয়, তাহলে মিকাতে পৌঁছে ইহরাম বেঁধে নিতে হবে| এ সময় নামাজ, তাওয়াফ ও সায়ি ছাড়া হজের অন্যসব কাজ করতে পারবেন। তবে পবিত্র হওয়ামাত্রই তাওয়াফ ও সায়ি করে নিতে হবে। তাওয়াফ শুরুর আগে একটি স্থান নির্দিষ্ট করে রাখতে হবে। মোবাইলে মাহরাম ও মোয়াল্লিমের ফোন নম্বর সেভ করে রাখতে হবে। তাওয়াফরত অবস্থায় হারিয়ে গেলে মাহরামকে খোঁজাখুঁজি না করে তাওয়াফে সায়ি শেষ করে নির্দিষ্ট স্থানে ফোনে খোঁজ করতে হবে। এ ছাড়া প্রত্যেক মহিলা হজযাত্রীকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতে হবে মিসওয়াক, ব্রাশ বা টুথপেস্ট, গামছা, বিছানার চাদর, প্লেট, ছোট আয়না, চিরুনি, গ্লাস, তেল, খিলাল, টয়লেট পেপার, জুতা, মোম, বালিশ, ছোট হাতব্যাগ, গলায় ঝোলানো ব্যাগ, একটি বড় ব্যাগ, পাথর রাখার ছোট ব্যাগ, জুতা রাখার ব্যাগসহ হজ বিষয়ক প্রয়োজনীয় কিতাব, ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ও ওষুধ, এক কেজি চিড়া ও কিছু গুড়, দুই সেট সালোয়ার-কামিজ ইত্যাদি।

লেখক : সাংবাদিক

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads