স্বল্প আয়ের মানুষ চরম বিপাকে

সংগৃহীত ছবি

মুক্তমত

স্বল্প আয়ের মানুষ চরম বিপাকে

  • প্রকাশিত ৫ এপ্রিল, ২০২১

একদিকে করোনা সংক্রমণে ঊর্ধ্বগতি, অপরদিকে লাগামহীন হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য। সম্প্রতি সরকারের ১৮ দফা নির্দেশনার পর থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি বাস ভাড়াও ষাট শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে অথচ বাসে যাত্রী আগের মতোই নেওয়া হচ্ছে। গণপরিবহন বৃদ্ধি না করে আসন ফাঁকা রাখা সাপেক্ষে যে নিয়ম করা হলো এর ফলে হঠাৎ করে রাজধানী শহর ঢাকায় দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষের চরম ভোগান্তি। এ নিয়ম করার আগে অবশ্যাই সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তি, সুবিধা-অসুবিধা কিংবা বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে ভাবা উচিত ছিল সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ, নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটির জন্য হঠাৎ করে ষাটভাগ পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধিতে কিংবা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে পরিবার নিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করাই অনেক ক্ষেত্রে কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

আমরা যদি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির দিকেই লক্ষ করি, ২০ ডিসেম্বর ২০২০ থেকে ২০ মার্চ ২০২১-এ চাল, ডাল, সয়াবিন তেল, চিনি, রসুন, আটা, গরুর মাংস, ব্রয়লার মুরগি, গুঁড়া দুধ এসব পণ্যের মধ্যে চাল (মোটা) কেজিতে ২-৩ টাকা, ডাল ১০ টাকা পর্যন্ত, সয়াবিন তেল ৫-১০ টাকা, চিনি ৩-৫ টাকা, রসুন ১০-২০ টাকা,  গরুর মাংস ২০-৪০ টাকা, গুঁড়া দুধ ৩০-৪০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। তথ্যসূত্র : প্রথম আলো, ২৩ মার্চ।

দ্রব্যমূল্যের ক্ষেত্রেই যদি হয় এ অবস্থা তাহলে সম্প্রতি ষাট ভাগ পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন আরো দুর্বিষহ হয়ে উঠবে। আমি বলছি না ষাট ভাগ পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি একেবারে অযৌক্তিক। কিন্তু সেইসাথে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন এবং সরকারকে বাজার নিয়ন্ত্রণে আরো কঠোর হওয়া উচিত। পেঁয়াজ কারসাজি থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে আমরা সিন্ডিকেটের কথা শুনতে পাই। এসব সিন্ডিকেট কঠোর হস্তে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।

করোনা ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের কারণে রাজধানী শহরে পাঠাও এবং রাইড শেয়ারিং সার্ভিস সাময়িক বন্ধ করা হয়েছে। এতে এই সেবার সাথে যুক্ত মানুষদের আয়-উপার্জন বন্ধ হয়ে গেছে। এরকম ছোট ছোট অনেক পেশার মানুষই কঠিন সময় পার করছেন, তাদের কথাও আমাদের ভাবতে হবে। সবটা নিয়েই তো একটা দেশ। শুধু কেউ কেউ সুখে থাকলে পুরো দেশটা সুখে থাকে না।

একটা কথা আমাদের সবসময়ই মনে রাখতে হবে, অর্থনৈতিকভাবে আমরা শতভাগ সক্ষমতা এখনো অর্জন করতে পারিনি। করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময় আমরা দেখেছি সরকারি চাকরিজীবী ছাড়া বেসরকারি চাকরিজীবী থেকে শুরু করে সকল পেশার মানুষের মাঝে ছিল আয়-উপার্জন নিয়ে দুশ্চিন্তা ও হতাশা। অনেকে আছেন, যারা কাজ না করলে কী খাবেন তার নিরাপত্তা নেই। আসন্ন রমজান মাসে যেন দ্রব্যমূল্য আবার বৃদ্ধি না পায়, সে ব্যাপারে সরকারকে আগাম সতর্ক থাকতে হবে। রাইড শেয়ারিং সার্ভিস থেকে শুরু করে, করোনার কারণে নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর রোজগার সীমিত হয়ে যাওয়া, এ ধরনের সকল বিষয় পর্যালোচনা করে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে বাজারে সিন্ডিকেট দমন এবং যে-কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের কথা ভাবতে হবে। সরকার জনবান্ধব কাজ করছেন; কিন্তু এমন দু-একটি জনসম্পৃক্তহীন কাজ নেহাতই সরকারকে সমালোচনায় ফেলবে।

তানভীর আহমেদ

লেখক : শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়,  গোপালগঞ্জ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads