স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সংসদে যাওয়া ঠেকাতেই সংসদীয় আসনের এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর সংগ্রহের মতো ‘জটিল নিয়ম’ আইনে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বদৌলতে আলোচনায় আসা মডেল ও অভিনেতা আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম। গতকাল এক নাগরিক সমাবেশে তিনি এ অভিযোগ করেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাতিলের প্রতিবাদে ‘স্বতন্ত্র এমপি প্রার্থী ঐক্য পরিষদ’-এর ব্যানারে গতকাল শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এই নাগরিক সভার আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন পরিষদের আহ্বায়ক ঢাকা-১৫ ও ঢাকা-১৭ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র দাখিল করে প্রত্যাখ্যাত হওয়া মো. আবদুর রহিম।
ভোটারদের সমর্থনের স্বাক্ষরে জালিয়াতির অভিযোগে বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যাওয়ার পর নির্বাচন কমিশনে আপিল করেও প্রার্থিতা ফিরে পাননি হিরো আলম। নাগরিক সভায় তিনি বলেন, বর্তমানে জনগণ আওয়ামী লীগ-বিএনপি সরকার হবে, তা চায় না। দুইটা দলের একটাকেও কেউ চায় না। তারা চাইছে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে। সরকার পরিকল্পিতভাবে এমন আইন করছে, যাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী না আসতে পারে।
হিরো আলম বলেন, নির্বাচন কমিশনার বড় বড় কথা বলেন। তারা কষ্ট করে নির্বাচন কমিশনার হননি। তারা যদি বুঝতেন, (ভোটারদের স্বাক্ষর সংগ্রহ করা) এর জ্বালাটা কতটুকু, তাহলে তারা ১ শতাংশ ভোটারদের স্বাক্ষর সংগ্রহের আইনটা পাস করতেন না।
হিরো আলমের দাবি, মনোনয়নপত্রের সঙ্গে এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর সংবলিত তালিকা সঠিকভাবে দেওয়ার পরও ‘সামাজিক বাস্তবতার’ কারণে তিনি আপিল শুনানিতে তা প্রমাণ করতে পারেননি।
তিনি বলেন, ভোটারের স্বাক্ষর, গ্রাম-গঞ্জের লোক আমরা এমনিতেই ভয় করি। কেউ সত্য কথা বললে হয় লাশ, না হয় জেলখানায় যেতে হয়, আর না হয় এলাকা ছাড়া। ওনারা (নির্বাচন কমিশন) যখন ভোটারের কাছে গিয়েছিলেন পুলিশ দেখে এমনিতেই তারা (ভোটার) ভয় পায়। আবার ভোটারদের অনেকে কেউ বিএনপি, কেউ আওয়ামী লীগ দল সমর্থন করে। ওনাদের কেউ আমাকে স্বাক্ষর দিয়েছে, কিন্তু সেই সময় সবার উপস্থিতি দেখে হয়তো স্বাক্ষর করাদের কেউ কেউ অস্বীকার করেছে, যে স্বাক্ষর দেননি।
নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে হিরো আলম বলেন, আমরা সবাই সত্য কথা বলি না বলে দেশের আজ দুর্দশা। সবাই যদি একত্র হয়ে বলি যে, এই আইন মানি না। কিন্তু ভয়ে কেউ সত্য কথা বলি না। তবে জন্মের পর মৃত্যু আছে। সত্যের পথে যদি জীবন দিতে পারি, তাতে কোনো ভয় নেই। তাই আমরা একদলে এক জোটে।
মনোনয়নপত্র দাখিল করে প্রত্যাখ্যাত হওয়া মো. আবদুর রহিম সভাপতির বক্তব্যে অভিযোগ করেন, এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর যাচাই করতে গেলে তদন্তকারীদের তারা বিশ্বাস করেনি। আবার তদন্ত কর্মকর্তারা প্রতিপক্ষের প্রভাবে মিথ্যা প্রতিবেদন দিয়েছেন।
নাগরিক সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন ঢাকা-৮ আসনে মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া মাহমুদুল হাসান, ফরওয়ার্ড পার্টির আহ্বায়ক আ ব ম মোস্তফা আমীন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রেজাউল হোসেন ও জিয়াউর রহমান, অ্যাডভোকেট ফারুক রেজা প্রমুখ।
২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)’ সংশোধন করে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী আসনের ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দাখিল করার বিধান যুক্ত হয়।