বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এ লক্ষ্যে বাগেরহাট জেলার মোল্লারহাটে ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। ৫০০ একর ভূমি অধিগ্রহণ, ভূমি উন্নয়ন ও রাস্তা নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক কাজে ৮২ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয় ধরে গতকাল মঙ্গলবার একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৈঠক শেষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পগুলোর বিস্তারিত তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি জানান, মঙ্গলবার মোট আটটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৪৯৩ কোটি ৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৩ হাজার ২৭৯ কোটি ২২ লাখ টাকা জোগান দেওয়া হবে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর তহবিল থেকে ব্যয় হবে ১৭৯ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। প্রকল্প সহায়তা হিসেবে বিদেশি উৎস থেকে অবশিষ্ট ৩ হাজার ৩৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, পানি ব্যবস্থাপনায় ১০০ বছরের জন্য চূড়ান্ত হতে যাওয়া ডেল্টা প্ল্যানে জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এই পরিকল্পনা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তাই জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এটি বাস্তবায়ন করতে হবে।
১৬ জেলায় আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস স্থাপনে ৮৭ কোটি টাকা ব্যয় ধরে পৃথক একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক। এর আওতায় বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, নড়াইল, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, নাটোর, জয়পুরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, শেরপুর ও সিলেট জেলায় পাসপোর্ট অফিস স্থাপন করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ শেষ হলে দেশের সবগুলো জেলায় আঞ্চলিক অফিস স্থাপনের লক্ষ্য পূরণ হবে।
এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, পাসপোর্ট সবারই প্রয়োজন। আমরা চাই এই সেবা যাতে মানুষ নিজ জেলা থেকেই নিতে পারেন। এ জন্য ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামে আসতে হবে না। সেই বিবেচনায় ১৬ জেলা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ভবন নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
৩ হাজার ৬৭০ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ব্যয় ধরে পদ্মা (যশলদিয়া) পানি শোধনাগার নির্মাণ (ফেজ-১) প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধনী অনুমোদন দিয়েছে একনেক। পদ্মা নদী থেকে প্রতিদিন ৪৫ কোটি লিটার পানি সংগ্রহ করে ঢাকায় সরবরাহ করতে ২০১৩ সালে ৩ হাজার ৫০৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ব্যয় ধরে প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। প্রথম সংশোধনীতে ব্যয় নামিয়ে আনা হয়েছিল ৩ হাজার ৩৭৫ কোটি ১৭ লাখ টাকায়। এ হিসাবে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে ২৯৫ কোটি ৩২ লাখ টাকা। ২০১৩ সালের জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত।
একনেকে অনুমোদন পাওয়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতায় কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় হবে ২৬৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। ঢাকার গুলশানে ১৩২/৩৩/১১ কেভি ভূ-গর্ভস্থ গ্রিড উপকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৫০ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। ৫১৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয় ধরে শেখ হাসিনা স্পেশালাইজড জুট টেক্সটাইল মিল প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক। ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্সেস (ইনমাস) ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রামে সাইক্লোন ও পেস-সিটি এবং ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিকেল ফিজিক্স (আইএনএমপি), সাভারে সাইক্লোন সুবিধাদি স্থাপন প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৭৩ কোটি টাকা। এর বাইরে সোনাইমুড়ী-সেনবাগ-কল্যান্দী-চন্দেরহাট-বসুরহাট সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪১ কোটি ৩০ লাখ টাকা।