আমদানি-রফতানি কার্যক্রমের মাধ্যমে গত অর্থবছরে (২০১৭-১৮) দেশের স্থলবন্দরগুলো ১৪৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকা আয় করেছে। এর আগের অর্থবছরে (২০১৬-১৭) আয়ের পরিমাণ ছিল ১১১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। সেই হিসাবে এক বছরে স্থলবন্দরগুলোর আয় বেড়েছে ৩৩ শতাংশ।
বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, বিগত অর্থবছরে স্থলবন্দর থেকে যত আয় হয়েছে, এর ৮৪ শতাংশই এসেছে তিনটি স্থলবন্দর থেকে। স্থলবন্দরগুলো হলো বেনাপোল, বুড়িমারী ও ভোমরা। বরাবরের মতো গত অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি মাশুল আদায় হয়েছে বেনাপোল স্থলবন্দরে। এই স্থলবন্দরের আয় ৪৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা। বুড়িমারী ৪৬ কোটি ২৪ লাখ ও ভোমরা ২১ কোটি টাকা আয় করেছে।
অন্য স্থলবন্দরের মধ্যে সোনামসজিদ স্থলবন্দর ৩ কোটি ৮২ লাখ, তামাবিল ৬ কোটি ৪৬ লাখ, হিলি ৬ কোটি ৭ লাখ, টেকনাফ ৪ কোটি ৭৪ লাখ, বাংলাবান্ধা ৪৭ লাখ, আখাউড়া ৫ লাখ, নাকুগাঁও ১১ লাখ ও বিবিরবাজার ১ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান তপন কুমার চক্রবর্তী বলেন, গত কয়েক বছরে স্থলবন্দরগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন হওয়ায় এর সক্ষমতা বেড়েছে। এর পাশাপাশি বিগত অর্থবছরে তামাবিল ও সোনাহাট এই দুটি স্থলবন্দর চালু হয়েছে। এতে কাঙ্ক্ষিত সেবা নিশ্চিত হওয়ায় দ্রুত পণ্য খালাস হচ্ছে। পাশাপাশি দেশের অর্থনীতি ধারাবাহিকভাবে শক্তিশালী হওয়ায় ভারতের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যও বেড়েছে। মূলত এসব কারণে স্থলবন্দরগুলোর আয় বাড়ছে।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে আরো দুটি নতুন স্থলবন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন এবং ভোমরা ও বেনাপোল স্থলবন্দর সম্প্রসারণের কাজ চলছে। এসব কাজ শেষ হলে স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি আরো বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
চলতি অর্থবছরে (২০১৮-১৯) স্থলবন্দর থেকে ১৬৫ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে বলে তিনি জানান।
স্থলবন্দরের আয়ের প্রধান উৎসগুলো হলো খালাস হওয়ার অপেক্ষায় থাকা পণ্যের জন্য শেড ও ইয়ার্ড ভাড়া, ওজন মাপার মাশুল, প্রবেশ মাশুল, শ্রমিকের মজুরি, দলিলাদি প্রক্রিয়াকরণ মাশুল ইত্যাদি।
বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে মোটরযান চুক্তির (বিবিআইএন এমভিএ) আওতায় অদূর ভবিষ্যতে স্থলপথে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকারি রাজস্বের পরিমাণও বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করেন তপন চক্রবর্তী।
দেশে বর্তমানে ২৩টি স্থলবন্দর আছে। এর মধ্যে ১২টি স্থলবন্দর কার্যকর আছে। বাকিগুলো এখনো শুল্ক স্টেশনের মতো চলে। স্থলবন্দর দিয়ে মূলত স্থলপথে আমদানি-রফতানি হয়। প্রায় ৯৮ ভাগ পণ্যই আমদানি-রফতানি হয় ভারতের সঙ্গে। মিয়ানমারের সঙ্গে হয় ২ শতাংশের মতো।
উল্লেখ্য, বার্ষিক আয় দিয়েই স্থলবন্দরগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, উন্নয়নসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় বহন করা হয়। বাকি অর্থ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের স্থায়ী আমানতে রাখা হয় এবং সরকারের কোষাগারে জমা দেওয়া হয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সরকারের কোষাগারে ৩১ কোটি ১৩ লাখ টাকা জমা দেওয়া হয়।
ভারতসহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য সহজ করতে ২০০১ সালে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়।