মোংলা বন্দরের বড় প্রকল্প ফেরত পাঠিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন

মোংলা সমুদ্রবন্দর

সংগৃহীত ছবি

আমদানি-রফতানি

মোংলা বন্দরের বড় প্রকল্প ফেরত পাঠিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন

  • জাহিদুল ইসলাম
  • প্রকাশিত ১৬ অক্টোবর, ২০১৮

চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর চাপ কমাতে মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য পরিকল্পনা করছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে বন্দরটির স্ট্র্যাটেজিক মাস্টার প্ল্যান প্রণয়নে প্রকল্প নেওয়া হয় ২০১৬ সালের জুন মাসে। মাত্র ৫ কোটি ৩০ লাখ টাকার ছোট এ প্রকল্পের কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি না থাকায় ইতোমধ্যে মেয়াদকাল বাড়ানো হয়েছে। মাস্টার প্ল্যান প্রণয়নের আগেই বন্দরটির উন্নয়নে বড় আকারের একটি প্রকল্পের প্রস্তাব দিয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। প্রকল্পে বিভিন্ন অসঙ্গতি থাকায় প্রস্তাবটি ইতোমধ্যে ফেরত পাঠিয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, মোংলা বন্দরের অধিকতর উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৬২২ কোটি টাকা। প্রকল্পটিতে ভারতের তৃতীয় লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) থেকে অর্থায়ন করা হবে। এ বিষয়ে সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় প্রকল্পে বিভিন্ন কাজে প্রস্তাবিত ব্যয় নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে কমিশন। বন্দর উন্নয়নে ৩০ তলা ভবন নির্মাণের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে সভায়। বন্দর উন্নয়নে স্টেডিয়াম, কলেজ, মেরিনাস ক্লাব, শিশুপার্ক, কমিউনিটি সেন্টার, সুইমিং পুল, পানির ফোয়ারা নির্মাণ, বেশকিছু যানবাহন ক্রয় ও পরামর্শক খাতে ১৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাবে দ্বিমত জানানো হয়েছে কমিশনের পক্ষ থেকে। প্রকল্পটির প্রস্তাবনা (ডিপিপি) সংশোধন করতে মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বৈঠকে।

নতুন প্রকল্পটির আওতায় যন্ত্রপাতি ক্রয়ের প্রস্তাবের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। পিইসি সভায় কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মোংলা বন্দরের জন্য কন্টেইনার ও কার্গো হ্যান্ডেলিং যন্ত্রপাতি সংগ্রহ শীর্ষক অন্য একটি প্রকল্পের পিইসি সভা হয়েছে। ওই সভায় কী পরিমাণ যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম আছে এবং আরো কী পরিমাণ প্রয়োজন সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। এ ছাড়া অন্য প্রকল্পে বন্দরের চাহিদা পূরণ করতে চারটি মোবাইল ক্রেন, ১৫টি ট্রেইলারসহ টার্মিনাল ট্রাক্টর, ১৫টি তিন টনের ফর্ক লিফট ট্রাক, চারটি পাঁচ টনের ফর্ক লিফট ট্রাক কেনার প্রস্তাব রয়েছে। নতুন প্রকল্পেও এ ধরনের যন্ত্রপাতি কেনার প্রস্তাবের যৌক্তিকতা জানতে চেয়েছে কমিশন।

নতুন প্রকল্পে ১ হাজার ৬২১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩০ তলা টাওয়ার নির্মাণের প্রস্তাবের যৌক্তিকতা জানতে চাওয়া হয়েছে সভায়। এতে বলা হয়েছে, সুউচ্চ এ টাওয়ারের সঙ্গে বন্দর উন্নয়নের সম্পর্ক নেই। এ টাওয়ারের উচ্চতা, ফ্লোর ও ডিজাইনের বিষয়েও জানতে চাওয়া হয়েছে। ঋণের অর্থে এ ধরনের টাওয়ার নির্মাণের জন্য ডিজাইনসহ আলাদা সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষার প্রয়োজন আছে বলে মনে করে কমিশন।

এ ছাড়া প্রকল্পের আওতায় স্টেডিয়াম, কলেজ, মেরিনার্স ক্লাব, শিশুপার্ক, কমিউনিটি সেন্টার, সুইমিং পুল, ফোয়ারা নির্মাণের যৌক্তিকতা সম্পর্কেও জানতে চাওয়া হয়। এ খাতে ২৯২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাবে সম্মত হয়নি পরিকল্পনা কমিশন। প্রকল্প বাস্তবায়নে পরামর্শক ব্যয় ১৩৫ কোটি টাকা থেকে যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে সভায়।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের বেশকিছু চলমান প্রকল্পের তুলনায় প্রস্তাবিত প্রকল্পের বিভিন্ন খাতে বাড়তি ব্যয় ধরা হয়েছে বলে পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানিয়েছে। এমনকি একই মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত অন্যান্য প্রকল্পের তুলনায় এ প্রকল্পে বাড়তি ব্যয় ধরা হয়েছে বলে পিইসি সভায় কমিশনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। এসব খাতে ব্যয় প্রাক্কলনের ভিত্তি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে সমীক্ষায়। তা ছাড়া মাত্র দুই মাসের সমীক্ষার আলোকে বিশাল প্রকল্পটি প্রনয়নের কারণও জানতে চাওয়া হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের প্রধান এনায়েত হোসেন বলেন, বন্দর উন্নয়নে টাওয়ার, স্টেডিয়াম, মাঠ, পার্ক ইত্যাদির প্রয়োজনীতা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে। প্রকল্পে এসব অবকাঠামোর প্রয়োজনীয়তা পর্যালোচনা করে একটি প্রতিবেদন দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। 

প্রকল্পের প্রস্তাবনায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বাগেরহাট জেলায় অবস্থিত দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ মোংলা সমুদ্রবন্দর। খুলনা শহর থেকে ৪৮ কিলোমিটার দক্ষিণে বন্দরটি ১৯৫০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে চাপ বেড়ে যাওয়ায় অনেক জাহাজ মোংলা বন্দর ব্যবহার করে। এসব বিষয় বিবেচনা করে বন্দরটির উন্নয়নে প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads