চলতি বছর সেমিকন্ডাক্টর খাতের রাজস্ব কমবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ইন্টারন্যাশনাল ডেটা করপোরেশন (আইডিসি)। বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছর এ খাতের রাজস্ব ৭ দশমিক ২ শতাংশ কমে ৪৪ হাজার কোটি ডলারে দাঁড়াবে। ২০১৮ সালে এ খাত থেকে প্রাপ্ত রাজস্বের পরিমাণ ছিল ৪৭ হাজার ৪০০ কোটি ডলার।
বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিকস ডিভাইসের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। একই সঙ্গে ডিভাইসগুলোর জন্য চিপের চাহিদা বাড়ছে। ফলে সম্প্রসারিত হচ্ছে সেমিকন্ডাক্টর শিল্প কিংবা চিপ নির্মাণ ব্যবসা খাত। টানা তিন বছর এ খাতের রাজস্বে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। তবে চলতি বছর সেমিকন্ডাক্টর খাতের রাজস্ব কমলেও আগামী বছর থেকে ফের রাজস্ব প্রবৃদ্ধির দেখা মিলবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
আইডিসির পূর্বাভাস অনুযায়ী, বৈশ্বিক সেমিকন্ডাক্টর খাতের রাজস্বে আগামী বছর থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বার্ষিক ২ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধির দেখা মিলবে। ফলে আগামী পাঁচ বছরে এ খাতের রাজস্ব ৫২ হাজার ৪০০ কোটি ডলারে পৌঁছাবে। গত তিন বছর সেমিকন্ডাক্টর খাতের রাজস্বে টানা প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। গত বছরই খাতটির রাজস্বে ১৩ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮ সালে শুধু ডিআরএএম মেমোরি চিপ বাজারের রাজস্ব ৩৬ শতাংশ বেড়ে ৯ হাজার ৯০০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। এছাড়া একই বছর এনএএনডি মেমোরি চিপ বাজারের রাজস্ব ১২ শতাংশ বেড়ে ৫ হাজার ৫০০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে।
আইডিসির সেমিকন্ডাক্টর বিভাগের প্রোগ্রাম ভাইস প্রেসিডেন্ট মারিও মোরালেস বলেন, বৈশ্বিক সেমিকন্ডাক্টর খাতের রাজস্ব আয় সংকুচিত হওয়ার পেছনে অনেক কারণ আছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মূল ধারার ইলেকট্রনিকস যন্ত্রাংশের দুর্বল চাহিদা, বিভিন্ন অঞ্চলের মুদ্রার বিপরীতে শক্তিশালী ডলার এবং নতুন উদ্ভাবন কমে আসা। অটোমোটিভ, মোবাইল ফোন এবং ক্লাউড অবকাঠামোগত উদ্ভাবনে এক ধরনের স্থিরাবস্থা বিরাজ করছে। যে কারণে চীনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্মার্টফোন বাজারগুলোয় বিক্রি কমে গেছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সেমিকন্ডাক্টর খাতের রাজস্বে।
তিনি বলেন, আগামীতে ক্লাউড অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ, ফাইভজি ডিভাইস ব্যবহার, ওয়াইফাই ৬ অ্যাডপশন, অটোমোটিভ সেন্সরস, পাওয়ারট্রেইন প্রযুক্তি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ট্রেনিং অ্যাকসেলেটর বৈশ্বিক সেমিকন্ডাক্টর খাতের রাজস্ব প্রবৃদ্ধির অন্যতম অনুষঙ্গ হবে।
আইডিসির পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি বছর ডিআরএএম এবং এনএএনডি মেমোরি চিপ বাজার মিলে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির দেখা মিলতে পারে। তবে ননমেমোরি সেমিকন্ডাক্টর পণ্যের বাজার ১ শতাংশ কমে ৩১ হাজার ৯০০ কোটি ডলারে পৌঁছাতে পারে। চলতি ও আগামী বছর সামগ্রিকভাবে ডিআরএএম ও এনএএনডি উভয় মেমোরি চিপ বাজার সংকুচিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী মেমোরি চিপের চাহিদা বাড়ায় স্যামসাং ইলেকট্রনিকস সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদক হিসেবে শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে। সেমিকন্ডাক্টর বাজার থেকে রাজস্ব আয় প্রবৃদ্ধির ধারায় রয়েছে। ২০১৬ সালে বৈশ্বিক সেমিকন্ডাক্টর বাজারের ৫৬ শতাংশ শীর্ষ ১০টি প্রতিষ্ঠানের দখলে ছিল। ২০১৭ সালে বাজারটির ৬০ শতাংশই দখলে নেয় শীর্ষ ১০টি প্রতিষ্ঠান।
২০১০-২১ সাল নাগাদ বৈশ্বিক সেমিকন্ডাক্টর খাতে একীভূতকরণ বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। বৈশ্বিক সেমিকন্ডাক্টর বাজারে প্রতিযোগিতা বেড়েছে। ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কার্যক্রম একীভূতকরণের মাধ্যমে ব্যবসা জোরদারের প্রবণতা বেড়েছে। সেমিকন্ডাক্টর খাতে চলতি বছর অন্তত ছয়টি একীভূতকরণ এবং অধিগ্রহণ চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার আশা করা হচ্ছে।