সম্ভবত আদিকাল থেকেই মানুষ স্বপ্ন দেখেছে অতিমানব হওয়ার। তাই হয়তো কল্পনায় নির্মাণ করেছে অর্জুন, অ্যাকিলিজের মতো বীর। যারা একাই একশ। সব বাধাবিপত্তি পাড়ি দিয়ে লড়াই করে যায় শত্রুর বিরুদ্ধে। রূপকথার গল্পের প্রতিটি নায়কই তো একেকজন সুপার হিরো। যেমন আমাদের রাজপুত্র ডালিম কুমার, পঙ্খিরাজ ঘোড়ায় চড়ে সাত সমুদ্র তেরো নদী পাড়ি দিয়ে যে উদ্ধার করতে যায় ঘুমন্ত রাজকন্যাকে। আধুনিক প্রযুক্তি কল্পনাকে রূপ দিয়েছে বাস্তবে। চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সেইসব রূপকথার নায়কেরা উঠে এসেছে চোখের সামনে। ১৯৩০-এর দশক থেকেই তার যাত্রা শুরু। চলচ্চিত্রের মাধ্যমে যাত্রা করা প্রথম সুপার হিরো সম্ভবত রবিন হুড। যদিও অনেকে মনে করেন রবিন হুড বাস্তবেরই চরিত্র, যে একজন দক্ষ তীরন্দাজ। গরিব আর অবহেলিত মানুষের পক্ষে শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করেন একা। কালে কালে রবিন হুডের বহু সংস্করণ বেরিয়েছে। সুপারম্যানদেরও হয়েছে বহু বিবর্তন। এখনকার সুপারম্যানরা শুধু তীর দিয়ে লড়াই করেন না, তারা সত্যিই বিস্ময়কর অতিমানবিক ক্ষমতা রাখেন। তাদের কারো হাত দিয়ে মাকড়সার জাল বেরোয়, কারো মুখ দিয়ে আগুন বের হয়, কেউ বা পাখায় ভর করে উড়ে যায় আকাশে। স্পাইডারম্যান, ব্যাটম্যান, সুপারম্যান, আয়রনম্যান, ওয়ান্ডার ওম্যান কত রকম যে তাদের নাম-পরিচয়! হালের হলিউড চলচ্চিত্রগুলো বিশ্ব মাতিয়ে রেখেছে এসব সুপার হিরো আর সুপার হিরোইন চরিত্রগুলো দিয়ে। শুধু চলচ্চিত্রে নয়, কল্পকাহিনীনির্ভর এসব সুপার হিরো, সুপার হিরোইনরা ঠাঁই পেয়েছেন টিভি সিরিয়ালেও। শিশু-কিশোর থেকে বুড়ো-বুড়িরা পর্যন্ত এসব চলচ্চিত্রের ভক্ত। এ নিয়ে সিরিয়াস চলচ্চিত্রবোদ্ধা বা বুদ্ধিজীবীদের নানা সমালোচনাও আছে। কল্পকাহিনীনির্ভর এসব চরিত্র দিয়ে যে মানুষকে ভুলিয়ে রাখা হয়, বাস্তবজীবনের সঙ্গে আসলে তার কতটুকু সম্পর্ক আছে? বাস্তব তো এক নায়কনির্ভর নয়, বাস্তবতার এই তিক্ততা থেকে কে আমাদের উদ্ধার করতে আসবে? জীবনের ক্ষুদ্রতা ভুলতেই মানুষ এসব কল্পকাহিনীর ওপর নির্ভর করে। সে যা-ই হোক, ভারী ভারী কথার বাইরেও মানুষ নিছক বিনোদন পেতে ভালোবাসে। মানুষ চিরকালই নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে চেয়েছে। প্রতি মুহূর্তে ছাড়িয়ে যেতে চেয়েছে তার সীমাবদ্ধতার সীমানা। এসব সুপার হিরো আমাদের সেই সীমানা ছাড়িয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখায়। এমন কিছু জনপ্রিয় সুপার হিরো আর হিরোইনের কাহিনী নিয়ে আজকের আয়োজনটি সাজিয়েছেন মিরাজ রহমান। লিখেছেন কামরুল আহসান
১. রবিন হুড : রবিন হুডকে নিয়ে এ পর্যন্ত কত শত চলচ্চিত্র, টিভি সিরিয়াল নির্মিত হয়েছে তার কোনো লেখাজোখা নেই। শতাধিক চলচ্চিত্র তো বিশ্ববিখ্যাতই। সেই ১৯০৮ থেকে রবিন হুডকে নিয়ে চলচ্চিত্রের যাত্রা শুরু। তখনো চলচ্চিত্রের নির্বাক যুগ। তখন কিছু তথ্যচিত্র নির্মাণ হলেও পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র হিসেবে রবিন হুড পর্দায় আসেন ১৯২২ সালে। এতে অভিনয় করেছিলেন ডগলাস ফেয়ারব্যাংক্স। আর সর্বশেষ চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়েছে ২০১০ সালে। এতে অভিনয় করেছেন বিশ্ববিখ্যাত হলিউড চলচ্চিত্র অভিনেতা রাসেল ক্রো। এরকম অসংখ্য নায়ক রবিন হুড চলচ্চিত্রে অভিনয় করে বিশ্ববিখ্যাত হয়েছেন। রবিন হুড ইংল্যান্ডের একটি রূপকথার চরিত্র, যিনি অসামান্য তীরন্দাজ ও তলোয়ার চালক। জঙ্গলে থাকেন। তার কিছু দলবল আছে। ডাকাত হিসেবে তার পরিচিতি থাকলেও তিনি আসলে গরিবের বন্ধু। ধনীদের সম্পদ কেড়ে নিয়ে গরিবদের দান করেন। যেখানে অন্যায়, সেখানেই রবিন হুড হাজির। রূপকথার চরিত্র হলেও রবিন হুডকে অনেকে বাস্তবের মানুষই মনে করতেন। ইংরেজবাসীর একসময় বিশ্বাস ছিল মধ্যযুগে রবিন নামে সত্যিই কেউ ছিলেন। যদিও বাস্তবে তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
২. সুপারম্যান : রবিন হুডের পর অতিমানবীয় চরিত্র হিসেবে সম্ভবত এ যাবৎকাল সুপারম্যানই সবচেয়ে বেশি বিখ্যাত। শুধু সুপারম্যান চরিত্রটি দিয়ে হলিউড এ পর্যন্ত কত বিলিয়ন ডলার কামিয়ে নিয়েছে, তার বোধহয় কোনো হিসাব-নিকাশ নেই। চরিত্রটি বাচ্চাদের অত্যন্ত প্রিয়। চরিত্রটি প্রথম আবির্ভূত হয় ১৯৩৮ সালে অ্যাকশন কমিকস বইয়ে। পরে তা রেডিও-তে প্রকাশ পায়। ১৯৪৩ সালে প্যারামাউন্ট পিকচার প্রথম এ চরিত্রকে পর্দায় আনে কয়েকটি এপিসোডে। পরে তা টেলিভিশনেও ধারাবাহিকভাবে উপস্থাপন করা হয়। দিন দিন সুপারম্যানের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। মানুষের মনে লুকিয়ে থাকা অতিমানবিক চরিত্রটি সুপারম্যানের মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ করে। গল্পের কাহিনী অনুযায়ী সুপারম্যানের জন্ম হয়েছিল ক্রিপটন নামক এক গ্রহে। সেই গ্রহটি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আগে তার বাবা তাকে একটি ছোট নভোযানে করে নিরুদ্দেশের পথে ছেড়ে দেয়। সে এসে পড়ে পৃথিবীর এক গরিব কৃষকের ঘরে। ক্লার্ক নামে সে বেড়ে ওঠে, আর বড় হতে হতেই তার মধ্যে বিস্ময়কর অতিমানবীয় ক্ষমতার আত্মপ্রকাশ ঘটতে থাকে। যদিও প্রথমে সে তা লুকিয়ে রাখে। পরে শত্রুর মোকাবেলা করতে গিয়ে সে পরিপূর্ণভাবে নিজেকে আবিষ্কার করে। সে আকাশে উড়তে পারে, আর বিশাল বিশাল গাড়ি, হেলিকপ্টার পর্যন্ত এককথায় উড়িয়ে দিতে পারে। দিন দিন সুপারম্যান চরিত্রটির অতিমানবীয় ক্ষমতা আরো বাড়ানো করা হয়েছে। ২০১৩ সালে ম্যান অ্যান্ড স্টিল নামে যে চলচ্চিত্রটি বানানো হয়েছিল, তাতে অভিনয় করেছিলেন হেনরি ক্যাভিল। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেখানে তার এত গতি, এত ক্ষমতা দেখানো হয়েছে যে, অনেকে সমালোচনা করে বলেছিলেন, সুপারম্যান হলেও এতটা বাড়াবাড়ি দেখানো ঠিক হয়নি। বাস্তবের সঙ্গে কোনো মিল নেই।
৩. স্পাইডারম্যান : সুপারম্যানের পর সম্ভবত সবচেয়ে জনপ্রিয় স্পাইডারম্যান। সুপারম্যানের মতো স্পাইডারম্যানও প্রথম আবির্ভূত হয়েছিলেন কমিক বইয়ে। ১৯৬২ সালে এমেইজিং ফ্যান্টাসির ১৫তম সংখ্যায় তার প্রথম প্রকাশ। তাকে দেখানো হয় একজন টিনএজার হিসেবে, যে তার আঙ্কেল বেন ও আন্ট মে’র ঘরে বেড়ে উঠেছে। পিটার পার্কার এক লাজুক তরুণ। সবকিছুতেই সে পিছিয়ে পড়ে। স্কুলে গিয়ে বুলিংয়ের শিকার হয়। এতই লাজুক আর দুর্বল যে, সে কারো বিরুদ্ধে কিছু বলতেও পারে না। একদিন রহস্যময় এক মাকড়সার কামড় খেয়ে তার ভেতরে অদ্ভুত কিছু পরিবর্তন শুরু হয়। চোখের জ্যোতি বেড়ে যায়, বেড়ে যায় হাতের শক্তিও। নিজের অজান্তেই তার শক্তিমত্তা প্রকাশ পেতে থাকে। একদিন দেখে হাত থেকে মাকড়সার জাল বেরোচ্ছে। ধীরে ধীরে সে নিজেকে আবিষ্কার করে। সে ইচ্ছা করলেই হাত থেকে ইচ্ছামতো জাল ছুড়তে পারে, সেই জাল বেয়ে সে বড় বড় বিল্ডিং দালনকোঠা লাফিয়ে দ্রুত যেখানে খুশি চলে যেতে পারে। নিজেকে লুকিয়ে রাখার জন্য সে একটি লাল মাকড়সার মতো পোশাক বানায়। মুখোশ পরে থাকে। আড়ালে বিশাল ক্ষমতাধর হলেও সামনাসামনি আগের সেই লাজুক যুবকটি সেজে থাকে। কেউই জানে না কে এই স্পাইডারম্যান! এমনকি তার প্রেমিকাও না। প্রেমিকা অবশ্য অনেক পরে তাকে আবিষ্কার করে।
কালে কালে সুপারম্যানের মতোই স্পাইডারম্যান চরিত্রটির অনেক বিবর্তন করা হয়েছে প্রযুক্তির মাধ্যমে। স্পাইডারম্যান নিয়ে অসংখ্য চলচ্চিত্র মুক্তি পেলেও ২০০৪ সালে মুক্তি পাওয়া স্পাইডার-২ চলচ্চিত্রটি সম্ভবত এ যাবৎকালের সবচেয়ে ব্যবসাসফল এবং জনপ্রিয় স্পাইডারম্যান সিরিজের চলচ্চিত্র। এ সিরিজের মোট চারটি ছবি নির্মাণ হলেও দ্বিতীয়টির মতো আর কোনোটি হয়নি। এর সবকটিতেই অভিনয় করেছিলেন টবি ম্যাগাওয়ার। স্পাইডারম্যান বলতে এখনকার ছেলেমেয়েদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে তার হাস্যোজ্জ্বল সরল মুখ।
৪. ব্যাটম্যান : ব্যাটম্যান সুপার হিরো হলেও সুপারম্যান বা স্পাইডারম্যানের মতো এতটা জনপ্রিয় সম্ভবত হতে পারেনি। তাদের মতো এত অতিমানবিক ক্ষমতাও তার নেই। তিনি কাজ করেন বুদ্ধি খাটিয়ে। অনেকটা বাস্তবেরই চরিত্র। ব্যাটম্যানের গোপন পরিচয় হলো ব্রুস ওয়েন, যিনি একজন মার্কিন বিলিয়নিয়ার, শিল্পপতি এবং ওয়েন এন্টারপ্রাইজের মালিক। ছোটবেলায় তার বাবা-মাকে আততায়ীর হাতে নিহত হতে দেখে তিনি অপরাধীদের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার শপথ গ্রহণ করেন। শারীরিকভাবে নিজেকে প্রস্তুত করেন। অপরাধ নির্মূল করার জন্য তিনি বাদুড় থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তার রূপ সৃষ্টি করেন। বুদ্ধি, শারীরিক শক্তি, মার্শাল আর্টে দক্ষতা, অনুসন্ধানী ক্ষমতা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, বিপুল ধন, অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও অপরাধ জগতে তার প্রচলিত ভীতি কাজে লাগিয়ে লড়াই করেন। ব্যাটম্যানের শত্রুতালিকায় সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য চিরশত্রু জোকার। ব্যাটম্যান চরিত্রটিও প্রথমে কমিক বইয়ের মাধ্যমে আবির্ভূত হয়। এ চরিত্রটির স্রষ্টা শিল্পী বব কেন ও লেখক বিল ফিঙ্গার।
৫. আয়রনম্যান : ২০০৮ সালে মুক্তি পায় আয়রনম্যান সিরিজের প্রথম ছবি। এটি ছিল মার্ভেল সিনেম্যাটিক ইউনিভার্সালের প্রথম সুপার হিরো ছবি। ছবিতে আয়রনম্যান চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন রবার্ট ডাউনি জুনিয়র। তারপর একসঙ্গে অনেক ঘটনা ঘটল। এক. বিশ্ব নতুন একজন সুপার হিরো পেল। সুপারম্যান, স্পাইডারম্যানকে ভুলে ঝাঁপিয়ে পড়ল আয়রনম্যানের ওপর। দুই. ছবিটি বক্স অফিস কাঁপিয়ে দিল। ১৪০ মিলিয়ন ডলার খরচ করে কামিয়ে নিল ৫৮৫ মিলিয়ন ডলার। তার সঙ্গে দুটি অস্কার। আর তিন. ছবির অভিনেতা রবার্ট ডাউনি জুনিয়র রাতারাতি হয়ে গেলেন বিশ্ববিখ্যাত অভিনেতা। এখনো তিনিই সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক নেন হলিউড নায়কদের মধ্যে। আয়রনম্যান পরে আবির্ভূত হয়েছিলেন ২০১২ সালে দ্যা অ্যাভেঞ্জার মুভিতে অন্য আরো কজন সুপার হিরোর সঙ্গে। এ চরিত্রটিও আমেরিকান মার্ভেল স্টুডিও’র কমিক বই থেকে নেওয়া। ছবির কাহিনীতে দেখা যায় টনি স্টার্ক একজন বুদ্ধিমান ও সাহসী তরুণ। মানবতার সেবায় সে এমন এক পোশাক আবিষ্কার করে, যা একই সঙ্গে মারাত্মক এক বর্ম ও অস্ত্র। সেই পোশাক নিয়ে সে উড়তেও পারে, ইচ্ছে হলে গোলাগুলিও ছুড়তে পারে। শত্রুর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে অত্যাচারিত মানুষকে বাঁচায় এই লৌহমানব!
৬. ওয়ান্ডার ওম্যান : নারী ‘সুপারওম্যান’কেন্দ্রিক ছবি হলিউডে হয় না বললেই চলে। দীর্ঘকাল ধরে সুপারম্যাননির্ভর ছবি দেখেই অভ্যস্ত। কিন্তু ২০১৭ সালে ওর্নার ব্রুস পিকচার সাহস করেই একটি নারী সুপার হিরোইন ধরনের ছবি মুক্তি দেয়। ওয়ান্ডার ওম্যান নামের এ ছবিটি সুপারডুপার হিট করে। ১৫০ মিলিয়ন ডলার খরচ করে কামিয়ে নেয় ৮২১ মিলিয়ন ডলার। ছবিটিতে অভিনয় করেছেন ইসরাইলি অভিনেত্রী গ্যল গ্যাডট। কিন্তু একটি বেফাঁস মন্তব্য করার কারণে কাতার, লেবাননসহ আরব দেশগুলোতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় এবং ছবিটি কিছু দেশে প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা হয়। এ নিয়ে গত বছর এই অভিনেত্রীকে দারুণ সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। তিনি বলেছিলেন, ইসরাইল যে ফিলিস্তিনে আগ্রাসন চালাচ্ছে তা ঠিকই করছে।
ওয়ান্ডার ওম্যান ছবির কাহিনী আবর্তিত হয় থেমিস্কিরা দ্বীপে বসবাসকারী অ্যামাজন সম্প্রদায়কে নিয়ে, যেখানে শুধু নারীদের বসবাস। দেবতা জিউসের আশীর্বাদে সেখানে নারীদের গর্ভে শুধু কন্যাশিশুর জন্ম হয়। দ্বীপের প্রিন্সেস ডায়ানা। তার মা কখনো চায়নি তার মেয়ে যুদ্ধ করুক। কিন্তু ভেতরের যোদ্ধা মন কখনো দমিয়ে রাখতে পারেনি তাকে। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী হয়ে ওঠে সে। যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী হওয়ার লক্ষ্য একটাই- যুদ্ধের দেবতা এরিসকে পরাজিত করা। পুত্র এরিস পিতা জিউসের সঙ্গে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে আবার যুদ্ধ ঘোষণা দেয়। এরিসকে পরাজিত করার উদ্দেশ্যে জিউস অ্যামাজন সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠা করেন এবং বার্তা দিয়ে যান যে এরিসকে পরাজিত করবেন একজন অ্যামাজনিয়ান। সেই অ্যামাজনিয়ান আর কেউ নন, স্বয়ং ডায়ানা। বিশ্বের সব মানুষ থেকে দূরে সেই বিচ্ছিন্ন দ্বীপে একদিন ঢুকে পড়ে মানুষ। তার থেকেই ডায়ানা শুনতে পায় পৃথিবীর যুদ্ধবিগ্রহ আর নিষ্পাপ মানুষের মৃত্যুর খবর। পৃথিবীর মানুষকে রক্ষা করতেই থেমিস্কিরা দ্বীপ থেকে বেরিয়ে পড়ে ডায়ানা। কিন্তু মানুষকে রক্ষা করতে গিয়ে তার জন্য যে কী চমক অপেক্ষা করছে, তা হয়তো ডায়ানা নিজেও আঁচ করতে পারেনি।
আরো কিছু সুপার হিরো
হাল্ক : হাল্কের প্রথম ছবি মুক্তি পায় ২০০৩ সালে। কিন্তু আশানুরূপ ব্যবসাসফল হয়নি ছবিটি। এটিও মার্ভেল স্টুডিও’র একটি কমিক চরিত্র। পরে ২০০৮ সালে মুক্তি পায় দ্য ইনক্রেডিবল হাল্ক। এটি অবশ্য বক্স অফিস কাঁপিয়ে দেয়। ছবির কাহিনীতে দেখা যায়, বিজ্ঞানী থান্ডারবোল্ট রোজ তার বন্ধু ব্রুস বানারকে গামা রেডিয়েশনের মাধ্যমে অতিমানবে রূপান্তর করে। তার শরীর বিশালাকার ধারণ করে, বিপুল শক্তির অধিকারী হয়ে ওঠে। দৈত্যাকার এ মানুষটি মানুষের সেবায় শত্রুর মুখোমুখি হয় জীবনবাজি রেখে।
থর : থর একটি পৌরাণিক চরিত্র। বজ্রের দেবতা। পৃথিবী রক্ষার দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে তিনি নেমে আসেন বজ্রশক্তির এক হাতুড়ি নিয়ে। ‘থর’ বের হয় ২০১১ সালে, যেটি পরিচালনা করেন কেনেথ ব্রেনাহ। থরের দ্বিতীয় ছবি ‘থর : দ্য ডার্ক ওয়ার্ল্ড’ মুক্তি পায় ২০১৩ সালে। দুটি ছবিই আশানুরূপ ব্যবসা করতে ব্যর্থ হয়। পরে থর নিয়ে আর একক কোনো ছবি বের হয়নি। কিন্তু ২০১২ সালে দ্যা অ্যাভেঞ্জার্স মুভিতে থরকে দেখা যায় হাল্ক, আয়রনম্যান, ক্যাপটেন অব আমেরিকার সঙ্গে। এ ছবিতে থরকে নতুন রূপ দেন নতুন পরিচালক তাইকা ওয়াইতি। হাতুড়ি, লম্বা চুল বাদ দিয়ে থরকে তিনি আধুনিক একটি চরিত্রে প্রকাশ করেন। দ্যা অ্যাভেঞ্জার্স বিপুল ব্যবসাসফল হলেও থরও পুনরুজ্জীবন লাভ করেন।
এক্স-ম্যান : এক্স-ম্যানকে নিয়ে এ পর্যন্ত ছবি মুক্তি পেয়েছে ১১টি। ২০০০ সালে তার যাত্রা শুরু, ২০১৮ সালে মুক্তি পায় সর্বশেষ ছবি লোগান। এক্স-ম্যান বেশ জনপ্রিয় চরিত্র। অনেকটা সুপারম্যান, স্পাইডারম্যান, ব্যাটম্যান, আয়রনম্যানের মতোই। এ ছবির বিভিন্ন পর্বে বিজ্ঞান, ইতিহাস, প্রযুক্তি ও ফ্যান্টাসির নানা মিশেল ঘটানো হয়েছে। এক্স-ম্যান চরিত্রে অভিনয় করেছেন হিউ জ্যাকম্যান।
টপ টেন সুপার হিরো সুপার হিরোইন চলচ্চিত্র
১. দ্য ডার্ক নাইট (২০০৮)। ২. দ্যভ অ্যাভেঞ্জার্স (২০১২)। ৩. গার্ডিয়ান অব দ্য গ্যালাক্সি (২০১৪)। ৪. আয়রনম্যান (২০০৮)। ৫. অ্যাভেঞ্জার ইনফিনিটি ওয়ার (২০১৮)। ৬. স্পাইডারম্যান-২ (২০০৪)। ৭. ব্যাটম্যান বিগিংস (২০০৫)। ৮. দ্য ডার্ক নাইট রাইজেস (২০১২)। ৯. সুপারম্যান (১৯৭৮)। ১০. ক্যাপটেন আমেরিকা (২০১৬)। এগুলো ছাড়াও অ্যান্টম্যান, ডক্টর স্ট্রেঞ্জার, ব্ল্যাক প্যানথার, উলভারনাইন নামেও আরো কিছু সুপার হিরোনির্ভর চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে। এগুলো কমবেশি জনপ্রিয় হলেও আগের সুপার হিরোদের মতো নাম করতে পারেনি। বলা হয়, হলিউড চলচ্চিত্র এখন আক্রান্ত সুপার হিরো জ্বরে। তারা আর মাটির পৃথিবীর সাধারণ মানুষের ওপর কাহিনী বানায় না। ফ্যান্টাসি, ফিকশন, কল্পকাহিনীনির্ভর গল্পের প্রতিই তাদের আস্থা।