সিলেট কাহন

সংগৃহীত ছবি

ভ্রমণ

সিলেট কাহন

  • প্রকাশিত ১২ মার্চ, ২০২১

বাংলাদেশের সুন্দর জেলাগুলোর মধ্যে সিলেট অন্যতম। সিলেটের সৌন্দর্য দেখে শেষ করা কঠিন। উল্লেখযোগ্য ট্যুরিস্ট স্পটগুলোর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন রাশেদ কাঞ্চন।

মাজার : সিলেট ভ্রমণটা শুরু হোক হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে। মাজারটি শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। চাইলে খুব সকালে অথবা রাতেও যেতে পারেন মাজারে। মাজারে রয়েছে গজার মাছের একটি পুকুর এবং বিভিন্ন প্রজাতির কবুতর। এ ছাড়া সিলেটে হজরত শাহ পরান (রহ.)-এর মাজারসহ রয়েছে আরো অনেক মাজার।

রাতারগুল : দেশের একমাত্র সোয়াম্প ফরেস্ট বা জলারবন সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। পুরোটা বনে রয়েছে পানি আর গাছগুলো হাঁটু অবধি বছরের ৭/৮ মাস পানিতে নিমজ্জিত থাকে। এ ছাড়া বনের মধ্যে একটি ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে। টাওয়ারের ওপর থেকে বনটি অনিন্দ্যসুন্দর দেখতে লাগে।

বিছানাকান্দি : এটি সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নেই। এটিকে বলা যায় পাথরের বিছানা। সাথে ভারতীয় সীমান্ত থেকে বয়ে আসা ঠান্ডা স্বচ্ছ পানি জায়গাটিকে অসাধারন রূপ দিয়েছে।

কুলুমছড়া : কুলুমছড়া সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী একটি গ্রাম। ভারতীয় সীমান্ত থেকে বয়ে আসা ঝরনাটিই কুলুমছড়া নামে পরিচিত। স্রোতের কলকল ধ্বনি ও পানির স্রোত জায়গাটিকে অসাধারণ করে তুলেছে।

লক্ষণছড়া : লক্ষণছড়া গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত। বিছানাকান্দি থেকে কিছুটা দূরে। ঝরনার স্রোতধারার কাছে ভারতীয় সীমান্তে চলাচলের জন্য একটি সুন্দর ছোট ব্রিজ রয়েছে।

পান্তুমাই : বিছানাকান্দি থেকে কাছেই পান্তুমাই ঝরনা। গোয়াইনঘাট উপজেলায় মেঘালয়ের কোল ঘেঁষে পান্তুমাই গ্রামের অবস্থান। গ্রামটি বাংলাদেশের সুন্দর গ্রামের মধ্যে একটি (বিছানাকান্দি, কুলুমছড়া, পান্তুমাই, লক্ষণছড়া প্রায় একই জায়গায় হওয়ায় একসাথে এক নৌকা ভাড়া করে সবখানে যাওয়া যাবে। তবে মাঝিকে আগে থেকে বলে নেবেন।)।

লালাখাল : ভারতের চেরাপুঞ্জি থেকে বয়ে আসা পুরোটা খালে রয়েছে সবুজাভ রঙের পানি। পানির রং কীভাবে এমন হতে পারে সেটা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা মুশকিল। বিকেলের চেয়ে দুপুরের করা রোদেই পানির রংটা বেশি সুন্দর লেগেছে।

জাফলং : এক সময় পর্যটকদের কাছে সিলেট মানেই ছিল জাফলং। পিয়াইন নদীর তীরে পাথর বিছানো জাফলং সত্যিই অসাধারণ। স্রোতধারার দূরে তাকালে দেখা যাবে ডাউকি ব্রিজ। আমি প্রথমবার যাই ২০০৩ সালে। সৌন্দর্যের দিক বিবেচনায় এখন আর আগের মতো নেই।

সংগ্রামপুঞ্জি ঝরনা : জাফলং থেকে ২০ মিনিটের হাটা দূরত্বে ভারতীয় সীমান্তে ঝরনাটির অবস্থান। চাইলে এটি খুব কাছ থেকে দেখা যায়।

ডিবির হাওর : ডিবির হাওরের অবস্থান সিলেটের জৈন্তাপুরে। মূলত কয়েকটি বিল নিয়ে মেঘালয়ের পাদদেশে এই হাওরের অবস্থান। বর্ষায়  বিলজুড়ে ফুটে থাকে অজস্র লাল শাপলা। তাই শাপলার সৌন্দর্য উপভোগের জন্য খুব সকালে যাওয়াই উত্তম।

ভোলাগঞ্জ : জাফলং ও বিছানাকান্দির চেয়েও অনেক সুন্দর জায়গা এটি। এখানে দেখা মিলবে সাদা ও রঙিন পাথরের। পানির স্রোতও তুলনামূলক বেশি।

লোভাছড়া : সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার উত্তর-পূর্ব সীমান্তে সচ্ছ পানির লোভা নদী, ব্রিটিশ আমলের চা বাগান, পাহার, টিলা, খাল, বিল নিয়ে লোভাছড়ার অবস্থান। এখানের আকর্ষনীয় স্থাপনা হল ব্রিটিশ আমলের তৈরি ঝুলন্ত একটি সেতু।

উৎমাছড়া : এটিকে এখন নতুন বিছানাকান্দি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এখানেও পাথরের ভেতর দিয়ে বয়ে চলে হিমশীতল পানি। এটি সিলেটের কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার রানীখাই ইউনিয়নে অবস্থিত।

কিন ব্রিজ : লৌহ নির্মিত কিন ব্রিজটি সিলেট শহরে ঢুকতে সুরমা নদীর ওপরে অবস্থিত।

আমজাদ আলীর ঘড়ি : কিন ব্রিজের সাথেই দেখতে পাবেন বিশালাকৃতির এই ঘড়িটি।

শাহ্জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় : যদিও এটি কোনো পর্যটন স্পট নয়, তবুও সিলেটে গেলে এখান থেকে ঘুরে আসতে পারেন। টিলার ওপরে নির্মিত শহীদ মিনারটি দেখে আসতে ভুলবেন না।

খাদিমনগর ন্যাশনাল পার্ক : সিলেট থেকে জাফলং রাস্তাধরে প্রায় ১০ কিমি গেলে খাদিম চৌমুহনী। সেখান থেকে আরো ৫/৬ কিমি গেলেই খাদিমনগর রেইনফরেস্টের শুরু। এখানে হাটার জন্য দুটো ট্রেইল আছে।

চা বাগান : সিলেট জেলায় রয়েছে অসংখ্য চা বাগান। এর মধ্যে মালিনীছড়া, লাক্কাতুরা চা বাগানের সৌন্দর্য অসাধারণ।

থাকা : সিলেট শহরে থাকার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকলেও ট্যুরিস্ট স্পটগুলোর কাছাকাছি ভালো মানের নিরাপদে থাকার তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। যদিও কিছু কিছু জায়গায় মনোরম রিসোর্ট রয়েছে তবে তা বেশ ব্যয়বহুল।

পরামর্শ : লালাখাল বাদে বাকি অন্য স্পটে বর্ষাই যাওয়ার উপযুক্ত সময়। বেশিরভাগ জায়গার সৌন্দর্য পানির কারণেই অসাধারণ হয়ে ওঠে আর যোগাযোগ ব্যবস্থাও নৌকানির্ভর। তাই সিলেট ভ্রমণের জন্য বর্ষাকেই বেছে নিন। কেউ কেবল ২/৩ জায়গাতে যেতে চাইলে বিছানাকান্দি, রাতারগুল, লালাখালকে প্রাধান্য দিতে পারেন।

সতর্কতা : বাংলাদেশের সবচেয়ে খারাপ রাস্তা সম্ভবত সিলেটের এই ট্যুরিস্ট স্পটগুলোর রাস্তা। আবার অন্যদিকে অন্যতম সুন্দর ট্যুরিস্ট স্পটও এগুলো। তাই ভালো কিছু দেখার জন্য কিছুটা ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। প্রায় প্রতিটা স্পটেই নৌকা কিংবা ট্রলারে ঘুরতে হবে। তাই সাঁতার জানা না থাকলে লাইফ জ্যাকেট সাথে রাখতে পারেন। নৌকা ভাড়া করার সময় অবশ্যই দরকষাকষি করে নেবেন। প্রতিটা জায়গাতেই এখন সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। স্পটগুলোর আশপাশে ভারী খাবার পাবেন না। তাই সাথে হালকা খাবার ও পানি রাখবেন।

বি. দ্র. : ভ্রমণের সময় পরিবেশ যাতে নষ্ট না হয় সেদিকে সবারই গুরুত্ব দেওয়া উচিত।     

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads