এলাকাভিত্তিক ও বিশেষয়িত ব্যবসায়ী সমিতিগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে ডিসিসিআই মিলনায়তনে গতকাল মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

ছবি : বাংলাদেশের খবর

পণ্যবাজার

ব্যবসায়ীদের দাবি

সিন্ডিকেটের কোনো অস্তিত্ব নেই

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৬ এপ্রিল, ২০১৮

বিভিন্ন সময় পণ্যমূল্য বৃদ্ধিতে সিন্ডিকেটকে অন্যতম কারণ হিসেবে দায়ী করা হলেও ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন বাস্তবে এর কোনো অস্তিত্ব নেই। তারা বলছেন, বর্তমান মুক্তবাজার অর্থনীতিতে যেকেউ পণ্য আমদানি করে বাজারে বিক্রি করতে পারছেন। ফলে কোনো ধরনের সিন্ডিকেট তৈরির সুযোগ নেই। বরং চাহিদার চেয়ে অনেক সময় বেশি পণ্য আমদানি হচ্ছে। এতে লোকসান দিয়েও ব্যবসায়ীরা পণ্য বিক্রি করছেন।

রোববার ডিসিসিআই আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে এ দাবি জানানো হয়। আসন্ন রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে এলাকাভিত্তিক ও বিশেষায়িত ব্যবসায়ী সমিতিগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে ডিসিসিআই মিলনায়তনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ডিসিসিআই সভাপতি আবুল কাসেম খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান জিয়া রহমান।

‘রমজানে রাজনৈতিক অর্থনীতি : বাজার ব্যবস্থা, ভোক্তা অধিকার এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি’ শীর্ষক প্রবন্ধে জিয়া রহমান বলেন, ‘একেবারে খালি চোখে হলেও বোঝা যায় যে রমজানে ‘আনহোলি নেক্সাস’ বা নানান অদৃশ্য সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য এতটাই শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে প্রতিবছর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বাজার নিয়ন্ত্রণের আশ্বাস দিলেও তা কখনো আশানুরূপভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না।’

সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যের এমন অভিযোগের বিরোধিতা করে ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শামসুল ইসলাম বলেন, সিন্ডিকেটের যে কথা বলা হচ্ছে, এটা হাস্যকর কথা। এখানে সবাই স্বাধীনভাবে ব্যবসা করছেন। কেউ কাউকে বাধা দিচ্ছেন না। কিছু কিছু পণ্য অল্প কয়েকজন ব্যবসায়ী আমদানি করছেন। কিন্তু তারা যদি সিন্ডিকেট করতেন তাহলে ওইসব পণ্য বাজারে একই দামে বিক্রি হতো। কিন্তু দেখা যাচ্ছে একেকজনের পণ্যের দাম একেকরকম। ফলে বুঝা যাচ্ছে বাজারে কোনো সিন্ডিকেট নেই। তবে মাঝেমধ্যে কোনো পণ্যের সরবরাহ কমে গেলে সেখানে সিন্ডিকেট হতে পারে। তবে সেটি ব্যতিক্রম। ব্যতিক্রমকে উদাহরণ হিসেবে ধরা ঠিক হবে না।

ব্যবসায়ীরা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য চাঁদাবাজি, পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি, টিসিবির দুর্বলতা, বাজার মনিটরিংয়ের অভাব, চাহিদা ও জোগানের মধ্যে ভারসাম্যহীনতাকে দায়ী করেছেন।

ডিসিসিআইয়ের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি সেকিল চৌধুরী বলেন, রমজানে নানা ধরনের ইফতার পার্টির আয়োজন করা হয়। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করে ইফতার পার্টির আয়োজন করা হয়। এসব চাঁদাবাজির কারণেও রমজানে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ঘটে। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীও পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। ইফতারের নামে চাঁদাবাজি বন্ধ ও অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

ডিসিসিআই পরিচালক বলেন, টিসিবি বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে ট্রাক দিয়ে যে পণ্য বিক্রি করছে, এটা লোক দেখানো ছাড়া আর কিছুই নয়। বাজার নিয়ন্ত্রণে টিসিবিকে আরো শক্তিশালী করতে হবে।

মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী মো. আবুল হাশেম বলেন, শুধু রমজানেই নয়, সারা বছরই দ্রব্যমূল্য ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে স্বাভাবিক থাকে সেদিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে। রমজানে ভোজ্য তেল, ছোলা, চিনিসহ যেসব পণ্যের চাহিদা তৈরি হয়, সেগুলোর ৯৫ শতাংশই আমদানিনির্ভর। এসব পণ্যের চাহিদার সঙ্গে সরবরাহের কোনো অসামঞ্জস্য রয়েছে কি না, সেটা দেখতে হবে। পণ্য পরিবহনে পুলিশের ছত্রছায়ায় রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা চাঁদাবাজি করছে, এটা বন্ধ করতে হবে।

ডিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক মো. সাইফুদ্দিন বলেন, রমজানে পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে হলে রমজানের কয়েক মাস আগেই প্রস্তুতি নিতে হবে। দেখা যায়, রমজান উপলক্ষে যেসব পণ্য আমদানি করা হয়, তার একটি অংশই পাইপলাইনে থেকে যায়। ভারতীয় দূতাবাস হাজার হাজার বাংলাদেশিকে ভিসা দিয়ে দিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে। কার্ব মার্কেটে ডলারের দর অনেক বেড়ে যায় এবং আমদানির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads