সাদা দল ছাড়াই শিক্ষক সমিতির নির্বাচন

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)

ছবি : সংগৃহীত

রাজনীতি

সাদা দল ছাড়াই শিক্ষক সমিতির নির্বাচন

  • জুবায়ের উদ্দিন, চবি
  • প্রকাশিত ২৮ মার্চ, ২০১৯

দীর্ঘ ৩৩ বছর পর বিএনপি ও জামায়াতপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল ছাড়াই হচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষক সমিতির কার্যকরী পরিষদের নির্বাচন। তবে গত বছর এই দল থেকে বের হয়ে আসা বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের একাংশের সংগঠন জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।

গত সোমবার (২৫ মার্চ) কিছুসংখ্যক ভোটারের সুবিধার্থে শিক্ষক সমিতির অগ্রিম ভোট নিয়েছেন নির্বাচন কমিশন। তবে আজ বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) হচ্ছে এর চূড়ান্ত নির্বাচন। নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার পেছনে সাদা দলের শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয় এবং দেশের বর্তমান অগণতান্ত্রিক পরিবেশকে দায়ী করেছেন। এক্ষেত্রে কোনো ভোটার চাইলে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। অন্যদিকে অংশ নেওয়া প্যানেলটি বলছে, জামায়াতের আধিপত্য তকমা কাটিয়ে উঠতেই তারা আলাদাভাবে প্যানেলে নির্বাচনে যাচ্ছে।

সাদা দল সূত্র জানায়, গত ১১ মার্চ সাদা দলের স্টিয়ারিং কমিটির সভায় নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর গত ১৯ মার্চ দলের সাধারণ সভায় দেশের বর্তমান অগণতান্ত্রিক পরিবেশ বিবেচনায় নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে সভায় শিক্ষক সমিতির কার্যপ্রণালী এবং কার্যক্রম নিয়ে সদস্যরা ক্ষোভের কথা জানান।

এ বিষয়ে সাদা দলের পরিচালনা পর্ষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এম আতিকুর রহমান বলেন, ‘বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় এবং দেশের অগণতান্ত্রিক পরিবেশ বিরাজ করায় প্যানেল দেওয়া থেকে বিরত থেকেছি। কারণ আমাদের সাধারণ সভা ও স্টিয়ারিং কমিটি মনে করে প্রশাসন নিয়মমাফিক চলছে না। আর শিক্ষক সমিতি প্রশাসন থেকে দাবি আদায়ে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না।’

তিনি আরো বলেন, ‘সাদা দল হলো জাতীয়তাবাদী, জামায়াতপন্থি ও দলনিরপেক্ষ শিক্ষকদের একটি সংগঠন। চাইলেই জামায়াতও আলাদা প্যানেলে নির্বাচনে যেতে পারত, এটা তাদের ব্যাপার। এর আগেও গত সিন্ডিকেট নির্বাচনে সাদা দলের বাইরে গিয়ে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম আলাদাভাবে নির্বাচন করেছে। এটা ঠিক না।’

নির্বাচনে অংশ না নেওয়া এই পর্ষদে রয়েছেন বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ ও হেভিওয়েট প্রার্থী। তাদের অংশ না নেওয়ায় নির্বাচনের জৌলুস হারাবে কি না, এমন প্রশ্নে আতিকুর রহমান বলেন, ‘এটার উত্তর আমি কী  দেব। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি দেখেন। নির্বাচনের কোনো আমেজ, পরিবেশ নেই। আর শিক্ষক সমিতি কার্যত কোনো ভুমিকা পালন করছে দেখছেন? তারা প্রশাসনের ছত্রছায়ায় বিলীন হয়ে যায়। অনেক কারণেই আমরা নির্বাচন করছি না।’

দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক সমিতিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্ষদে সাদা দলের ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি ও জামায়াতপন্থি শিক্ষকরা। কিন্তু জামায়াতের একক আধিপত্য, তকমা কাটিয়ে উঠতে সর্বশেষ অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটে নির্বাচনে সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটে। আলাদাভাবে নির্বাচনে যায় জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম।

আলাদা প্যানেল দেওয়ার ক্ষেত্রে অন্তর্দ্বন্দ্ব এবং দূরত্বের কথা স্বীকার করেন জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম পরিচালনা পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এসএম নছরুল কাদের বলেন, ‘জামায়াতের সঙ্গে থাকার কারণে বিএনপির অনেকেই আমাদের ভোট দেয় না। আমাদের পছন্দ করে না। আমরা কি বিএনপি না জামায়াত তাও বুঝে উঠতে পারি না। আমরা এত বড় দল আমাদের কোনো আলাদা প্ল্যাটফর্ম থাকবে না। জামায়াতের নিজস্ব আদর্শ শিক্ষক ফোরাম আছে, আমাদের কেন থাকবে না। এজন্য আমরা আলাদাভাবে নিজস্ব সংগঠন করেছি। আমাদের মতো নির্বাচন করছি। আমরা অনেক বড় দল। আমরা কোনো পরিচয়হীন হয়ে থাকতে চাই না। উই আর লিবারেল।’

নিজেদের মধ্যে বিভেদে হলুদ দল বাড়তি কোনো সুযোগ পাচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘রাজনীতিতে এটি সব সময় হয়। সুবিধা নিতে পারে, হবে। ওদের মধ্যেও (হলুদ দল) অনেক সমস্যা আছে। সব সময় দলীয় ভোটে নির্বাচনে যেতে হবে, সেটা তো ঠিক নয়। এখানে অনেক ইকুয়েশন হয়, অনেক ফ্যাক্টর। গত নির্বাচনে আমরা সেকেন্ড পজিশনে ছিলাম। আমি নিজে সেক্রেটারি নির্বাচন করেছি। কয়েক ভোটের জন্য আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে হারাতে পারিনি। আলাদা প্ল্যাটফর্ম থাকলে তাদের পছন্দের জায়গা বেড়ে যায়। তারাও রিভেন্স নিতে পারল।’

কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাদা দলের বেশ কয়েকজন শিক্ষক বিষয়টিকে অত্যন্ত স্পর্শকাতর এবং স্ববিরোধী বলে দাবি করছেন। তারা জানান, আলাদা হওয়ার যে কারণ দাঁড় করানো হচ্ছে এমন হলে হাইকমান্ড থেকে জামায়াত ছাড়ার ঘোষণা আসত। বরং বিদ্যমান পরিস্থিতিতে জামায়াত ও বিএনপি একসঙ্গে কেন্দ্রীয়ভাবে রাজনীতি করছেন।

অন্যদিকে সাদা দলের নির্বাচনে না আসার সিদ্ধান্তকে হাস্যকর এবং উদ্ভট বলে উল্লেখ করেছেন আওয়ামী ও বামপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন হলুদ দল। অন্যান্য পর্ষদ নির্বাচনে দলের বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী অংশ নিলেও এবার এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি দলটিকে।

এ বিষয়ে হলুদ দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সুলতান আহমেদ বলেন, ‘ওনারা যেভাবে কথা বলছেন মনে হচ্ছে বিচ্ছিন্ন কোনো দেশের বাসিন্দা। দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি কেমন আমরা সবাই অবগত আছি। আর শিক্ষক সমিতি কতটুকু দাবি আদায় করতে পারছে তা বিগত সময়কার আন্দোলনে প্রতীয়মান হয়েছে। এর আগেও একসঙ্গে নির্বাচন করে তারা আমাদের সঙ্গে জয়ী হতে পারেনি। তারা অনেক কথায় বলবে। আমরা জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।’

এদিকে এবারের নির্বাচনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের (আইআর) ১৮ শিক্ষকের নাম নেই ভোটার তালিকায়। ফলে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এই ইনস্টিটিউটের শিক্ষকরা। অথচ এর আগে এই ইনস্টিটিউটের শিক্ষকরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং কার্যনির্বাহী সদস্য পদে নির্বাচিত হন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. এম আবদুল গফুর বলেন, ‘আমি ঠিক জানি না। আমাকে সমিতি থেকে যে তালিকা দিয়েছে, সেখানে ওই শিক্ষকদের নাম নেই।’

তিনি আরো বলেন, ‘গতকাল (সোমবার) ৮০টি অগ্রিম ভোট পড়েছে। এবারে ৮৭৪ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads