সাতক্ষীরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেহাল দশা

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে

সংগৃহীত ছবি

সারা দেশ

সাতক্ষীরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেহাল দশা

  • সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ৩১ অক্টোবর, ২০১৮

সাতক্ষীরার আশাশুনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেহাল দশা। এখানে ডাক্তার সংকটে ভেঙ্গে পড়েছে স্বাস্থ্যসেবা। সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার সংকটসহ বিভিন্ন দুরাবস্থার কারণে স্বাস্থ্য সেবার মান ভেঙ্গে পড়েছে। বাধ্য হয়ে রোগিরা হাসপাতালে না গিয়ে প্রাইভেট ক্লিনিক ও জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছে। ফলে রোগীদের ব্যাপক দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

আশাশুনি উপজেলার ১১ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। অধিকাংশ এলাকা প্রত্যন্ত ও যাতায়াত ব্যবস্থা অনুন্নত। অনেক ইউনিয়নে প্রধান প্রধান সড়ক নির্মিত হলেও অভ্যন্তরীন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা যথেষ্ট অনুন্নত। এলাকার মানুষ সাধারণ অসুখ-বিসুখে হাসপাতালমুখী হতে চায়না। অধিকাংশ মানুষ পল্লী চিকিৎসকদের কাছেই চিকিৎসা নেয়। আবার অনেকে হাসপাতালে আসতে চাইলেও ডাক্তার, ওষুধ এবং সর্বোপরি অন্যান্য সুযোগ সুবিধা না থাকায় একবার গেলে দ্বিতীয়বার আর না যাওয়ার চেষ্টা করে।

আর কারণে উপজেলার বিভিন্ন স্থান ও ছোট-বড় বাজারে ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠেছে ক্লিনিকের নামে অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। যেখানে অধিকাংশ ক্ষেত্রে চিকিৎসা সেবার নামে অপচিকিৎসা করা হয়ে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। এলাকার গরীব ও দীনমজুর মানুষ রোগ চিকিৎসার জন্য যাবে কোথায় ! তাই অনেকে আশাশুনি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান বাধ্য হয়ে। কিন্তু এই হাসপাতালে কেবল ‘নেই, নেই’ বার্তা বাতাসে ঘুরছে-ফিরছে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, এ হাসপাতালে ২১টি পদের বিপরীতে টিএইচএ সহ মাত্র ৪ জন এমবিবিএস ডাক্তার কর্মরত আছেন। এছাড়া একজন আয়ুর্বেদ ও একজন ডেন্টাল সার্জন আছেন। নার্সের ১৬টি পদের বিপরীতে আছেন ১২ জন, যার মধ্যে ৩ জন ডেপুটেশানে অন্যত্র কর্মরত আছেন। ৩ জন চিকিৎসকের মধ্যে একেকজনকে বাধ্য হয়ে একটানা ২দিন করে ডিউটিতে রাখতে হয়। আর প্রতি সপ্তাহে একদিন করে হাসপাতালে কোনো চিকিৎসক থাকেন না। ফলে সপ্তাহে একদিন করে চিকিৎসক ছাড়াই হাসপাতাল চলে। বর্তমান সময়ে পাড়াগায়েও হারিকেন-ল্যাম্পের ব্যবহার এখন আর চোখে না পড়লেও হাসপাতালে গেলে ওইগুলো খুঁজে পাওয়া যায়। রাতে বিদ্যুৎ লোডশেডিং হলে হাসপাতাল কক্ষে একটি করে হারিকেন জ্বালিয়ে আলোর ব্যবস্থা করা হয়। আইপিএস দীর্ঘদিন বিকল হয়ে পড়ে আছে। জেনারেটর থাকলেও ব্যবহার করা হয় না। এক্সরে মেশিন নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। প্যাথলজিষ্ট নেই। এ্যানাস্থেসিয়া ও গাইনি চিকিৎসক নেই। ডাঃ ইসকেন্দার আলম নামে একজন (এ্যানাস্থাসিয়া) সহকারী সার্জন হাসপাতালে পোষ্টিং থাকলেও তিনি কি কারণে ও কার বদৌলতে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেপুটেশনে বহাল তবিয়তে রয়েছেন সেটা প্রশ্নবিদ্ধ ? সপ্তাহে ২ দিন এখানে তার আসার কথা থাকলেও তিনি আসেন না। বরং আশাশুনি থেকে বেতন ঠিকই তিনি উঠিয়ে নিচ্ছেন। জনবল না থাকায় সরকারের ডিএসএফ প্রোগাম চালানো হচ্ছে না।

এছাড়া ওষুধ স্বল্পতা, চিকিৎসকের অভাবে ঠিকমত চিকিৎসা সেবা না পাওয়াসহ রয়েছে অসংখ্য অভিযোগ। তারপরেও এলাকার অসহায় মানুষ চিকিৎসা পেতে হাসপাতালে আসছেন। হাসপাতলের বেডে প্রতিদিন গড়ে ৬০/৭০ জন করে রোগী থাকেন। আউটডোরে (জরুরী ও বহিঃ বিভাগ) প্রতি মাসে গড়ে ৪৫০০ রোগীর আগমন ঘটে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ অরুন কুমার ব্যানার্জী বলেন, ‘চিকিৎসক সংকট বরাবর এ হাসপাতালে রয়েছে। এ্যানাস্থাসিয়া না থাকায় চাহিদা থাকলেও ডেলিভারী করানো সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া অনেক সমস্যা আছে। অসুবিধা ও সমস্যার কথা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অবহিত করা হলেও কোনো সমাধান হচ্ছে না।

জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল জানান, তিনি সাতক্ষীরায় যোগদানের পরেই আশাশুনিতে গিয়েছিলেন। সেখানকার এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে তার কাছে বিষয়টি জোরালোভাবে উত্থাপন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাফফারা তাসনীনকে জরুরী ভিত্তিকে হাসপাতাল পরিদর্শন করে একটি প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads