সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধ করুন

সাংবাদিক নির্যাতন

সংরক্ষিত ছবি

সম্পাদকীয়

সংবাদপত্র যা বলে তা বিরোধিতা নয়

সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধ করুন

  • প্রকাশিত ৭ অগাস্ট, ২০১৮

নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুল ছাত্রছাত্রীদের পর গত রোববার এ আন্দোলনে যুক্ত হয় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে শাহবাগ, সায়েন্স ল্যাব ও ধানমন্ডি এলাকায় তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে যায়। কিন্তু আগে থেকেই পরিকল্পিতভাবে অবস্থানে থাকা ছাত্রলীগ নামধারী কথিত যুবকরা তাদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায়। এদের সঙ্গে যুক্ত হয় পরিবহন শ্রমিকরা। ছাত্রদের বেধড়ক মারপিট করে। ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তৎক্ষণাৎ ছড়িয়ে পড়ে হেলমেট বাহিনীর হামলার দৃশ্য। দেখা গেছে, হেলমেট পরিহিত এসব সশস্ত্র সন্ত্রাসী নিরীহ শিক্ষার্থীদের ওপর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলে পড়েছে। আমাদের দুর্ভাগ্য যে, এ সন্ত্রাসী হামলা থেকে রেহাই পায়নি সেখানে খবর সংগ্রহে নিয়োজিত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদকর্মীরাও।

দুদিন আগেই সরকারিভাবে নির্দেশ জারি হয়েছিল এমন কোনো খবর পরিবেশন করা যাবে না, যাতে নগরে ও জনমনে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। তবে কি সঠিক সংবাদ সংগ্রহ ও প্রচারে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাবে? এদেশে সংবাদপত্রের টুঁটি চেপে ধরার প্রয়াস লক্ষ করা গেছে অতীতেও। মূলত বিভিন্ন সময়ের সামরিক শাসন ও স্বৈরশাসকদের ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করতেই স্বাধীন সাংবাদিকতা নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হতে শুরু করে। কার্যত গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধেই বিভিন্ন সময়ে তৈরি হয় প্রেস অ্যাক্ট— যার সর্বশেষ সংযোজন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৩২ ধারা। সুতরাং আমরা বলতেই পারি, সংবাদপত্রের বাকস্বাধীনতাকে রহিত করতেই ফটোসাংবাদিক রাহাত করিমসহ অ্যাসোসিয়েট প্রেস (এপি), দৈনিক জনকণ্ঠ, দৈনিক বণিক বার্তা, দৈনিক প্রথম আলোর প্রতিবেদক ও ফটোজার্নালিস্টদের ওপর এই নগ্ন হামলা হয়েছে।

আমরা এই হামলার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই। একই সঙ্গে মুখোশধারী সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনারও দাবি জানাচ্ছি। রাষ্ট্রের ‘চতুর্থ স্তম্ভ’ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে সংবাদপত্র। এই ‘চতুর্থ স্তম্ভ’ ক্ষতিগ্রস্ত হলে দেশের গণতান্ত্রিক ধারাই বিধ্বস্ত হবে। ন্যায়বিচার, সুশাসন ও উন্নয়ন গতি হারাবে। সংবাদপত্র যা বলে তা বিরোধিতা নয়, শত্রুর বাণীও নয়। সাংবাদিকের কলম ন্যায়ের প্রতীক হয়ে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে দলমত নির্বিশেষে সবার ভুলত্রুটি শুধরে নিতে সাহায্য করে। আলোচনা-সমালোচনার ভেতর দিয়ে জাতীয় রাজনীতিকে পরিশুদ্ধ হতে এবং সঠিক পথে পরিচালিত করতে সহায়তা করে। সুতরাং আমরা আশা করি, পেশাগত কারণে যেসব সাংবাদিক সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছেন, সেসব সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে সরকার দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেবে। বহু বছরের একটি গণতান্ত্রিক দল এবং স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি হিসেবে সরকার স্বাধীন মতপ্রকাশে প্রতিবন্ধকতা দূর করে সাংবাদিকদের কলমকে মুক্ত ও সচল রাখবেন, এই প্রত্যাশা আমাদের।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads