সর্বোচ্চ শাস্তি ৫ বছর জেল ইচ্ছাকৃত হলে মৃত্যুদণ্ড

‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা

ছবি : বাংলাদেশের খবর

আইন-আদালত

সড়ক পরিবহন আইনের খসড়া অনুমোদন

সর্বোচ্চ শাস্তি ৫ বছর জেল ইচ্ছাকৃত হলে মৃত্যুদণ্ড

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ৭ অগাস্ট, ২০১৮

বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনার মাধ্যমে গুরুতর আহত করলে বা প্রাণহানি ঘটালে চালকের সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ডের বিধান রেখে ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে দুর্ঘটনা ঘটালে এবং তা তদন্তে প্রমাণিত হলে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হবে। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভা বৈঠকে বহুল আলোচিত সড়ক পরিবহন আইন অনুমোদন দেওয়া হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সংবাদ সম্মেলনে এই অনুমোদনের কথা জানান।

উল্লেখ্য, অন্যদিন শুধু মন্ত্রিপরিষদ সচিব মন্ত্রিসভা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করলেও গতকাল সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব এনএম জিয়াউল আলম এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম তার সঙ্গে ছিলেন।

এর আগে গত বছরের ২৭ মার্চ খসড়াটি নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল মন্ত্রিসভা। গত ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়নের দাবিতে রাজধানীজুড়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী আইনটি মন্ত্রিসভায় উপস্থাপনের নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর আইন মন্ত্রণালয় খসড়া আইনটি দ্রুত ভেটিং (পরীক্ষা-নিরীক্ষা) করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। ‘দি মোটর ভেহিক্যাল অর্ডিন্যান্স ১৯৮৩’ যুগোপযোগী করে নতুন আইনটি করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এই আইনের মূল ফোকাস হচ্ছে সড়ক ব্যবস্থাপনা, সড়কে যানবাহনগুলো কীভাবে চলবে সেই বিষয়ে। তবে দণ্ডবিধির কোন ধারায় মামলা হবে তা তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, এটা অবস্থার গুরুত্ব অনুযায়ী এভিডেন্স বেইজড হবে। বোঝা যায় যদি সে স্বেচ্ছায় কাজটা করেছে, ভলান্টারিলি কাউকে সে পিষে দিল এ রকম ঘটনা, এটা পেনাল কোড বা সংশ্লিষ্ট ধারায় এর শাস্তি হবে। তদন্তে ডিসাইড (নির্ধারণ) হবে এটা কোন লাইনে যাবে, (দণ্ডবিধির) ৩০২ ধারায় হবে নাকি ৩০৪ ধারায়। নতুন আইনে সাজার মেয়াদ নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও অর্থদণ্ড নির্ধারণ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, সিচুয়েশনের ওপর নির্ভর করে অর্থদণ্ডের পরিমাণ নির্ধারণ করতে পারবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলছেন, পরিবহন মালিক, শ্রমিক ও যাত্রীদের সঙ্গে আলোচনার পর সব শ্রেণির সর্বসম্মত মতামতের ভিত্তিতেই নতুন আইনে দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সর্বোচ্চ সাজা পাঁচ বছর করা হয়েছে।

এ সময় সড়ক সচিব বলেন, বেপরোয়া গাড়ি চালনার কারণে প্রাণহানির ক্ষেত্রে তদন্তে যদি প্রমাণিত হয় ইন্টেনশন (ইচ্ছাকৃত) ছিল তবে শাস্তি হবে ৩০২ ধারা অনুযায়ী, এর শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। পার্শ্ববর্তী দেশে সড়ক পরিবহন আইনে সড়ক নিরাপত্তার জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান নেই জানিয়ে সচিব নজরুল বলেন, এটা কিলিং পর্যায়ে গেলেই কেবল ৩০২ ধারায়  যাবে। সড়ক সচিব বলেন, বর্তমানে ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানোর শাস্তি সর্বোচ্চ চার মাসের জেল বা ৫০০ টাকা অর্থদণ্ড। নতুন আইনে এজন্য ছয় মাসের জেল ও ২৫ হজার টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, নতুন আইনে রেজিস্ট্রেশন ছাড়া গাড়ি চালানোর শাস্তি ছয় মাসের জেল বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড রাখা হয়েছে। আগে এই অপরাধের সাজা ছিল তিন মাসের জেল বা দুই হাজার টাকা জরিমানা। ফিটনেসবিহীন গাড়ির জরিমানা বর্তমানে সর্বোচ্চ তিন মাসের জেল বা দুই হাজার টাকা জরিমানা থাকলেও নতুন আইনে তা ছয় মাসের জেল বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের প্রস্তাব করা হয়েছে।

সড়ক সচিব জানান, গাড়ির চেসিস পরিবর্তন, জোড়া দেওয়া, বডি পরিবর্তন করার শাস্তি দুই বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড থাকলেও সেটাকে বাড়িয়ে এক থেকে তিন বছরের কারাদণ্ড বা তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের প্রস্তাব করা হয়েছে।

সড়কের ত্রুটির জন্য দুর্ঘটনা হলে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী দায়ী হবেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, তাদের দায়ী করা হবে। কোনো সরকারি কর্মচারী তার ওপর অর্পিত দায়িত্বে অবহেলা বা ত্রুটিপূর্ণভাবে পালনের জন্য দুর্ঘটনা ঘটলে ওই কর্মচারীকে দায়ী করে প্রচলিত আইনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। অদক্ষ চালক নিয়োগ করলে মালিকদের সাজা হবে কি না- জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, চুক্তি করতে হলে চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স লাগবে, আর শ্রম আইন অনুযায়ী মালিক ও চালককে চুক্তিপত্র করতে হবে। তিনি জানান, নতুন আইন পাস হলে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর হতে হবে। আর পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে চাইলে বয়স হতে হবে ২১ বছর। অষ্টম শ্রেণি পাসের সনদ না থাকলে কেউ ড্রাইভিং লাইসেন্স পাবেন না। প্রত্যেক চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্সের বিপরীতে ১২ পয়েন্ট করে বরাদ্দ থাকবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, অপরাধ করলে পয়েন্ট কাটা যাবে, পয়েন্ট শূন্য হয়ে গেলে ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাবে। ভাড়ায় খাটে এমন যানবাহনগুলোকে (সরকারি, লাশ বহনকারী ও সৎকারে নিয়োজিত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স এবং রেকার) রুট পারমিট থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। নতুন আইন অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ জনস্বার্থে সমগ্র বাংলাদেশ বা যেকোনো এলাকার জন্য যেকোনো ধরনের মোটরযানের সংখ্যা নির্ধারণ করে দিতে পারবে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, যেকোনো ধরনের গাড়ির জীবনকাল প্রজ্ঞাপন দিয়ে সরকার নির্ধারণ করে দিতে পারবে। চালক ও তার সহকারীদের যথাযথভাবে বিশ্রাম হয় না, তাদের সুবিধার জন্য সরকারি প্রজ্ঞাপন দ্বারা শ্রম আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কর্মঘণ্টা ও বিরতিকাল নির্ধারণ করে দেওয়া যাবে। নিয়োগকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে আবশ্যিকভাবে সেই কর্মঘণ্টা বা বিরতিকাল মেনে চলতে হবে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads