সবচেয়ে উঁচু পাসিংপাড়া

পাসিংপাড়ার সবচেয়ে উঁচুতে এই চার্চটি

সংগৃহীত ছবি

ফিচার

সবচেয়ে উঁচু পাসিংপাড়া

  • প্রকাশিত ১৫ জুলাই, ২০১৮

সৈয়দ মিজানুর রহমান

‘পাসিংপাড়া’ বান্দরবান পার্বত্য জেলার একটি গ্রাম। এটি বাংলাদেশের সব থেকে উঁচু গ্রাম। পাসিংপাড়ার উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩ হাজার ৬২ ফুট। দেশের সবচেয়ে উঁচুতে অবস্থিত স্বাদু পানির হ্রদ বগালেকের পরবর্তী স্থান কেওক্রাডং। শীর্ষ এ পর্বতচূড়ায় পৌঁছানোর পর হাতছানি দিয়ে ডাকে বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু গ্রাম পাসিংপাড়া। বান্দরবানের রুমা উপজেলা সদর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে কেওক্রাডং পাহাড় অবিস্থত। যাত্রাপথ অত্যন্ত দুর্গম ও কষ্ঠসাধ্য বলে অনেকে বান্দরবান পর্যন্ত গিয়ে আবার ফিরে আসে। দুর্গম পাহাড়ি এলাকা পাসিংপাড়ার দৃশ্য খুবই মনোরম। এত উঁচুতে বাংলাদেশের আর কোনো গ্রাম নেই। কথিত আছে, গ্রামটির প্রধান বা কারবারি পাসিং ম্রো-এর নামে এর নামকরণ করা হয় ‘পাসিংপাড়া’। পাড়ার বাসিন্দারা মূলত মুরং সম্প্রদায়ের।

পাসিংপাড়ার বৈশিষ্ট্য হলো- আপনি ঘরের সামনে বা মাচার উপর দাঁড়িয়ে মেঘ স্পর্শ করতে পারবেন। চাইলে হা করে মেঘ গিলে নিমেষেই শরীরের ভেতরটা শীতলও করতে পারবেন। প্রায় সারা বছরই মেঘের ভেতরে থাকে পাসিংপাড়ার অধিবাসীরা। আশপাশের সব চরাচর দেখে মনে হয় যেন এক মেঘের সমুদ্র। পাসিংপাড়ায় মেঘ আপনার চারপাশ দিয়ে খেলা করবে, উড়ে বেড়াবে যখন-তখন। মেঘেরা হাতের কাছে এসে জড়িয়ে ধরে টেনে নিয়ে যেতে চাইবে তাদের দলে। সবকিছু মিলিয়ে যেন মেঘের ওপর ভেসে থাকা এক গ্রামের নাম পাসিংপাড়া। পাসিংপাড়ায় ৫০-৬০টি মুরং পরিবারের বাস। মূলত জুম চাষ তাদের অর্থনীতির প্রধান জোগান। ঘরের বেড়ায় বাঁশের আধিক্য থাকলেও ছাউনিতে রয়েছে টিন। গ্রামটি অন্যান্য মুরংপাড়ার মতোই সুন্দর। বেশি উচ্চতায় বসবাস হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই এ পাড়ার মানুষ এত উপরে পানি পায় না। পানির জন্য প্রতিদিন তাদের নামতে হয় অন্তত দুই হাজার ফুট নিচে ঝিরিতে। এদের জীবনযাত্রার এমন সংগ্রামের কথা অনেকেরই অজানা।

বেশি উচ্চতায় হওয়ায় বাতাসের তাণ্ডব থেকে বাঁচার জন্য পাসিংপাড়ার টিনের চালগুলো আটকে রাখতে উপরে বাঁশ আড়াআড়ি করে বাঁধা হয়। পাড়ার ঠিক মাঝবরাবর একটা রাস্তা চলে গেছে। দুপাশে ঘর। মনে হয় যেন একটা বাজার!

পাড়ায় বসবাসকারী সবাই খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের। পাসিংপাড়ার চার্চটি খানিকটা পাহাড়ের উপরে। প্রতি রোববার এখানে ধর্মীয় সমাবেশ ও প্রতি সন্ধ্যায় প্রার্থনা হয়। পাসিংপাড়া থেকে দূরে, বহুদূরে যেসব পাহাড়শ্রেণি দেখা যায়, সেগুলো দেখতে যে কী অপূর্ব লাগে, যারা দেখেননি তারা বুঝতেই পারবেন না! পাসিংপাড়ার সৌন্দর্য দেখতে চাইলে বান্দরবান শহর থেকে অটোযোগে প্রথমে যেতে হবে রুমা বাসস্ট্যান্ড। সেখান থেকে রুমা বাজারের উদ্দেশে দু-তিনটি পরিবহনের বাস সময় ধরে ছেড়ে যায়। রুমা ১নং সদরঘাটে বাস থেকে নেমে সোজা হাঁটলে পড়বে বড়শিপাড়া। সেখান থেকে চান্দের গাড়িতে এগারো মাইল (এলাকার নাম)। এরপর তিন ঘণ্টার ট্রেকিংয়ে পৌঁছাতে হবে বগালেক। এ পথেই শীর্ষ চূড়া কেওক্রাডং পৌঁছানোর পর একই রাস্তা ধরে সেনাবাহিনীর হেলিপ্যাড অতিক্রম করে দেশের সবচেয়ে উঁচু গ্রাম পাসিংপাড়ায় যেতে হয়।

 

৫. সবচেয়ে সুন্দর পানতুমাই

বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি গ্রামেরই অনন্য সৌন্দর্য রয়েছে। তবে সবচেয়ে সুন্দর গ্রাম হিসেবে সবার নজর কেড়েছে ‘পানতুমাই’। নয়নাভিরাম, নান্দনিক, অপূর্ব, হূদয়স্পর্শী- সব শব্দ এই গ্রামের বর্ণনায় যোগ করা হলেও যেন আরো কিছু থেকে যায়। চমৎকার এই গ্রামের কথা এখনো অনেকের অজানা। প্রতিবেশী ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ি গহীন অরণ্য থেকে বাংলাদেশের বুকে নেমে এসেছে অপরূপ এক ঝরনাধারা। যার কুলকুল ধ্বনি মনকে দুলিয়ে দিয়ে যায়। ঝরনাটির স্থানীয় নাম ফাটাছড়ির ঝরনা। কেউ কেউ একে বড়হিল ঝরনাও ডাকেন। ঝরনাটির উৎস ভারতের হলেও পিয়াইন নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে খুব কাছ থেকে উপভোগ করা যায় এর অপূর্ব রূপসুধা। পাশেই বিএসএফের ক্যাম্প। বরইগাছের সারি দিয়ে দুই দেশের সীমানা ভাগ করা। এখানে বিজিবির কোনো চৌকি নেই, তাই সীমানার কাছাকাছি যাওয়া বিপজ্জনক। কাছাকাছি না গিয়েও ঝরনাটির মোহনীয় সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে বাংলাদেশি পর্যটকরা।

পানতুমাই সিলেট জেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের একটি গ্রাম, যা ভারত সীমান্তের মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। পাহাড়ঘেঁষা আঁকাবাঁকা রাস্তাই পানতুমাই গ্রামের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আঁকাবাঁকা পথ পাড়ি দিয়ে সহজেই হারিয়ে যাওয়া যায় প্রকৃতির মাঝে। গ্রামের শেষে পাহাড়ি গুহা থেকে হরিণীর মতোই লীলায়িত উচ্ছল ভঙ্গিমায় ছুটে চলেছে ঝরনার জলরাশি। তবে ভ্রমণকারী মানুষের ঝরনার কাছাকাছি যাওয়া নিষেধ। একসময় ঝরনার কাছে গিয়ে পানিতে নেমে গোসলও করা যেত। কিন্তু বাঙালি আর খাসিয়া মারামারি হওয়ায় এখন ঝরনার কাছাকাছি যাওয়া নিষেধ। পানতুমাই যেতে চাইলে সিলেটের আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে সিএনজি নিয়ে যেতে হবে গোয়াইনঘাট থানা সংলগ্ন বাজারে। সেখান থেকে আরেকটি সিএনজিতে চড়ে পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের পানতুমাই যেতে হয়। পানতুমাইয়ে কোনো খাবার হোটেল বা থাকার ব্যবস্থা নেই। তাই শুকনো খাবার অবশ্যই সঙ্গে রাখতে হবে। রাতে থাকতে চাইলে স্থানীয়দের সহযোগিতা লাগে।

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads