সকালের নাশতা থেকেই শুরু হোক স্বাস্থ্যসম্মত খাবার

সকালের নাশতা থেকেই শুরু হোক স্বাস্থ্যসম্মত খাবার

ছবি : সংগৃহীত

ফিচার

সকালের নাশতা থেকেই শুরু হোক স্বাস্থ্যসম্মত খাবার

  • ডা. ফজলে রাব্বী খান
  • প্রকাশিত ৫ জুলাই, ২০১৮

ডায়াবেটিসের সঙ্গে খাবারের সম্পর্ক নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত প্রচলিত আছে। কেউ কেউ মনে করেন ডায়াবেটিস হলে খাবারের ওপর একধরনের কড়াকড়ি বা নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়। আবার কেউবা মনে করেন সবই খাওয়া যায়, তবে কম কম। সত্যিটি হলো, খাবার হতে হবে সুষম বা সুসমণ্ডিত, অর্থাৎ সময় বেঁধে প্রতিবেলার খাবারে খাদ্য উপাদানগুলো নির্দিষ্ট অনুপাতে থাকতে হবে। প্রকৃতপক্ষে এ ধরনের খাবারই স্বাস্থ্যকর খাবার বা একজন সুস্থ-স্বাভাবিক এমনকি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের দৈনন্দিন  খাবার। ডায়াবেটিস থেকে আগামী প্রজন্মকে বাঁচাতে হলে স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের ওপর অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে, যা শুরু হয় দিনের শুরু অর্থাৎ সকালের নাশতা থেকে।

কেন সকালের নাশতা গুরুত্বপূর্ণ : সকালের নাশতার উদ্দেশ্যই হচ্ছে রাতের খাবার এবং দুপুরের খাবারের মধ্যবর্তী সময়ের উপবাস ভাঙা। তবে যদি আমরা সকালের নাশতা না করি তাহলে কী হবে? আমাদের শরীর একটা দীর্ঘমেয়াদি উপবাসে চলে যাবে এবং শরীর বিশ্বাস করতে শুরু করবে যে, আমরা সহসা খাবার গ্রহণ করছি না। তারপর যখন দুপুরের খাবার খাব, তখন আমাদের শরীর সেই খাবার ভবিষ্যতের জ্বালানির জন্য শরীরে চর্বি আকারে জমা করবে। ফলস্বরূপ ওজন বেড়ে যাবে। মনে রাখতে হবে, সকালের নাশতার মাধ্যমে আমরা আমাদের শরীরে সারাদিনের জ্বালানি সরবরাহ করি।

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব ছাত্রছাত্রী নিয়মিত সকালের নাশতা খায়, তারা স্কুলে ভালো ফলাফল করে। তা ছাড়া সকালের নাশতা শরীর ও মনকে সতেজ রাখতে সহায়তা করে। যারা সকালের নাশতা করে দৈনন্দিন কাজে বের হন, তাদের উৎপাদনশীলতা, উৎকর্ষতা, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা এবং মানসিক স্থিরতা অনেক বেশি। শুধু তা-ই নয়, যাদের সকালের নাশতা খাওয়ার অভ্যাস আছে, তাদের সম্পূর্ণ খাদ্যাভ্যাসও হয় স্বাস্থ্যসম্মত। যারা সকালের নাশতা বাদ দিয়ে থাকে, তাদের খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত ফল ও শাকসবজি থাকে না। তাদের মধ্যে ক্যালসিয়াম এবং বিভিন্ন খনিজ পদার্থের অভাব দেখা যায়। এ ধরনের ব্যক্তিরা প্রচুর মিষ্টি, চর্বিযুক্ত খাবার এবং কোমল পানীয় স্ন্যাকস হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন। 

যদি ডায়াবেটিস রোগীর কথা বলি, তাহলে তো তাদের জন্য সকালের নাশতা আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, যারা ইনসুলিন নিয়ে থাকেন, তারা যদি সকালের নাশতা বাদ দিয়ে থাকেন তবে তাদের শরীরে গ্লুকোজ কমে যাওয়া বা ‘হাইপো’ হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

সঠিক খাদ্য নির্বাচন  : কেউ যদি সকালের নাশতায় চাহিদার তুলনায় বেশি খাবার গ্রহণ করেন, সারাদিনে তাদের ক্যালরি গ্রহণ বেশি হবে তাদের তুলনায়, যারা চাহিদামাফিক সকালের নাশতা গ্রহণ করে থাকেন। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর ওজন এবং রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে সকালের নাশতার সঠিক মাত্রার ও ধরনের খাদ্য নির্বাচন খুবই জরুরি।

আমাদের দেশে স্বাস্থ্যসম্মত সকালের নাশতার প্রচলন কম। বিশেষত ‘ফাস্টফুড’ যখন সকালের নাশতা হিসেবে ব্যবহূত হয়, যেমন- কেক, বার্গার, শিঙাড়া, সমুচা, পুরি, বাকরখানি, টোস্ট ইত্যাদি। এসব খাবার সম্পৃক্ত বা স্যাচুরেটেড চর্বি এবং অধিক শর্করা জাতীয়। কাজেই পরিমাণমতো স্বাস্থ্যসম্মত সকালের নাশতা খেতে হবে, যাতে থাকবে কম পরিমাণে সরল শর্করা এবং চর্বি, থাকবে প্রথম শ্রেণির প্রোটিন এবং আঁশযুক্ত খাবার। সবচেয়ে ভালো হয় যদি সকালের নাশতায় ৭-১০ গ্রাম আঁশযুক্ত খাবার থাকে। কাজেই আপনার জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালরি অনুযায়ী ২-৩টি পাতলা আটার রুটি, একটি ডিম (সিদ্ধ বা কম তেলে পোস), কিছু সবুজ শাকসবজি এবং যেকোনো একটি টক জাতীয় ফল সকালের নাশতায় খেতে পারেন। আপনি যদি  প্রতিদিন আটার রুটি খেতে পছন্দ না করেন, তাহলে ময়দা বা চালের গুঁড়ার তৈরি রুটি কিংবা পাউরুটিও সমপরিমাণ মাঝে-মধ্যে খেতে পারেন।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads