শোকে-শ্রদ্ধায় নিহতদের স্মরণ

হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার দুই বছর। রোববার গুলশানে হলি আর্টজোনের পুরনো ভবনে ফুল দিয়ে হামলায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান স্বজনরা

ছবি : বাংলাদেশের খবর

বাংলাদেশ

গুলশানে হলি আর্টিজানে হামলার দুই বছর

শোকে-শ্রদ্ধায় নিহতদের স্মরণ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২ জুলাই, ২০১৮

রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে দুই বছর আগে জঙ্গি হামলায় নিহতদের স্মরণ করেছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। গতকাল রোববার সকাল ১০টায় চার ঘণ্টার জন্য ভবনটি খুলে দেওয়া হয়। এরপর সেখানে ফুল দিয়ে নিহতদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন কূটনীতিক, রাজনীতিক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা, ছাত্রনেতাসহ অন্যরা।

২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে হলি আর্টিজানে জঙ্গিদের হামলায় নিহত হয়েছিলেন ২২ জন, যার মধ্যে ১৭ জন বিদেশি ও দুই পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন। পরদিন সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডো অভিযানে পাঁচ হামলাকারীসহ মোট ছয়জন নিহত হন। দ্বিতীয় বর্ষ পূরণের দিন গতকাল কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনে প্রথমে জাপান ও ইতালির রাষ্ট্রদূত নিহতদের স্মরণে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর বিদেশি অন্যান্য মিশন ও আন্তর্জাতিক সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা ফুল দেন। পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন, পুলিশ কমিশনার, ডিএমপি কমিশনার, আওয়ামী লীগ, বিএনপির পক্ষ থেকেও শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

আওয়ামী লীগের পক্ষে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ অন্য নেতারা শ্রদ্ধা জানাতে হলি আর্টিজানে যান। বিএনপির পক্ষে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি দল সেখানে গিয়ে শ্রদ্ধা জানান। দলে ছিলেন গুলশান থানা বিএনপির সভাপতি ফারুক হোসেন, সাধারণ সম্পাদক দীন ইসলাম ও বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান।

ওই দিনের জঙ্গি হামলায় নিহতদের মধ্যে নয়জন ছিলেন ইতালির, সাতজন জাপানি। নিহত জাপানিরা বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ করছিলেন। সেদিন ইতালীয় বায়িং হাউজ স্টুডিও টেক্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ৫২ বছর বয়সী নাদিয়া বেনেদিত্তোর সঙ্গে নিহত হয়েছিলেন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আসা আরো ৬ ইতালীয় ব্যবসায়ী। রোববার সকালে স্টুডিও টেক্স লিমিটেডের ৩৫ জন কর্মকর্তা হলি আর্টিজান বেকারিতে আসেন শ্রদ্ধা নিবেদন করতে।

তাদের পক্ষে প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র মার্চেন্ডাইজার ওয়াহিদ আলম বলেন, ‘নাদিয়া বাংলাদেশের একজন সম্পদ ছিলেন। তিনি ইতালীয় ব্যবসায়ীদের এ দেশে বিনিয়োগ করার জন্য আসতে নানা পরামর্শ ও সহযোগিতা করতেন। এদেশের অর্থনীতির জন্য ছিল তার অনেক অবদান।’

হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন ডিশ ক্লিনার জাকির হোসেন শাওন, পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকা থেকে শাওনের ছোট ভাই আবদুল্লাহকে নিয়ে এসেছিলেন তার মা মাকসুদা বেগম। তার বুকে ছেলের একটি ছবি। মাকসুদা বলেন, ‘আমার ছেলে কোনো অপরাধ করেনি। তাকে মেরে ফেলা হয়েছে।’

হামলার ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল ইসলাম ও তৎকালীন বনানী থানার ওসি সালাহউদ্দিন খান। আহত হন র‍্যাব-১-এর তখনকার অধিনায়ক লে. কর্নেল তুহিন মাসুদ, পুলিশের গুলশান অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার আবদুল আহাদসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য। গতকাল নিহত দুই পুলিশ কর্মকর্তার স্মৃতিতে গুলশান-২ নম্বর সড়কে নির্মিত ভাস্কর্য ‘দীপ্ত শপথ’ উদ্বোধন করেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া।

এ সময় তিনি বলেন, ‘হলি আর্টিজান হামলার দুই বছর পর নির্দ্বিধায় বলতে পারি আমরা জঙ্গি নেটওয়ার্ক পর্যুদস্ত করেছি, ভেঙে দিয়েছি, গুঁড়িয়ে দিয়েছি। তবে জঙ্গি শেষ হয়েছে এটা বলা যাবে না। কারণ এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। তবে বিচ্ছিন্নভাবে তাদের (জঙ্গি) অপতৎপরতা থাকতেই পারে এবং সেটা রয়েছে। এটা আমরা অস্বীকার করব না। তবে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা, কাউন্টার টেররিজম ইউনিট দিনরাত পরিশ্রম করছে।’

তিনি বলেন, ‘হলি আর্টিজান হামলা ছিল বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এক সুগভীর ষড়যন্ত্র। সেই ষড়যন্ত্রের দিন আমরা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছি। সেদিন আমাদের পুলিশ অফিসার রবিউল ও সালাউদ্দিন শহীদ হয়েছেন। আমরা তাদের হারানো শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করেছি। জঙ্গি অভিযানে বিশ্বে আমরা নজির স্থাপন করছি।’

হতাহতদের স্মরণে আসা র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘হলি আর্টিজানের হামলার দিনে আমরা খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের দমন করেছি। গত দুই বছরের জঙ্গিবিরোধী অভিযানের মাধ্যমে আমরা সারা বিশ্বকে সিগনাল দিতে সক্ষম হয়েছি যে, বাংলাদেশ জঙ্গিদের নিরাপদ আশ্রয় নয়। বাংলাদেশের মানুষ জঙ্গিবাদ বরদাস্ত করবে না। এখনো আত্মতুষ্টির কোনো কারণ নেই। কারণ জঙ্গিবাদ একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। সম্পূর্ণ নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে যেতে হবে।’

আমাদের মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, নিহত এসি রবিউল করিমের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার জন্মস্থান মানিকগঞ্জের কাটিগ্রামে তাকে স্মরণ করেন এলাকাবাসী। সদর উপজেলার কাটিগ্রাম ঈদগাহ মাঠে গতকাল সকালে নাগরিক স্মরণসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন। বিশেষ অতিথি ছিলেন মানিকগঞ্জ স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মো. আবদুল মতিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মহিউদ্দিন আহম্মেদ। তারা রবিউলের সমাধিস্থলে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads