শিশুদের ঠান্ডাজনিত রোগ বাড়ছে

শিশুদের ঠান্ডাজনিত রোগ বাড়ছে

ছবি : সংরক্ষিত

স্বাস্থ্য

শিশুদের ঠান্ডাজনিত রোগ বাড়ছে

  • চট্টগ্রাম ব্যুরো
  • প্রকাশিত ৬ এপ্রিল, ২০১৯

গত কয়েক দিনের প্রচণ্ড দাবদাহের পাশাপাশি ঠান্ডার প্রাদুর্ভাবও বিরাজ করছে প্রকৃতিতে। আবহাওয়ার অতিরিক্ত তারতম্যের প্রভাবে চট্টগ্রামে শিশুদের শ্বাসকষ্ট, সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া ও টাইফয়েডসহ ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগের প্রকোপ বাড়ছে। অন্যান্য সময়ের তুলনায় কয়েকগুণ বেড়েছে এসব রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা।

চিকিৎসকদের মতে, এ ধরনের আবহাওয়া শিশুর জন্য খুবই মারাত্মক। ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টের মতো রোগের প্রকোপ বেড়েছে, যাকে বলা হয় ‘ভাইরাল ফিভার’ বা মৌসুমী রোগ। তবে এতে আতঙ্কিত না হয়ে সঠিক চিকিৎসা নিলেই সুস্থ হবে রোগী।

চট্টগ্রামের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, শিশুরোগী আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। প্রায় সবক’টি হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে আগের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি রোগী ভর্তি রয়েছে। এসব শিশুরোগ ভাইরাসজনিত। কিন্তু ঋতু পরিবর্তনের সময় আরএসবি (রেসপিরেটরি সিনসেটিয়াল ভাইরাস) ও ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সংক্রমণজনিত আর গরমে বেড়েছে ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্ট রোগের প্রকোপ। এ নিয়ে অভিভাবকদের সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। তবে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া জীবাণু একই সাথে শরীরে আক্রমণ করলে অনেক সময় মৃত্যুও ঘটতে পারে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী জানান, শিশু ওয়ার্ডের তিনটি সাধারণ ইউনিটে মোট ৬৫ শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি রয়েছে ৩৬০ জন। অথচ, অন্য সময়ে ১৫০ জনের কিছু বেশি রোগী ভর্তি থাকে। বিশেষ চারটি ইউনিটসহ সবক’টি ইউনিট মিলে শিশু ওয়ার্ডে শিশু রোগীদের জন্য মোট শয্যা সংখ্যা ১০২। কিন্তু বর্তমানে চিকিৎসাধীন শিশুরোগীর সংখ্যা প্রায় ৪০০।

চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালেও গত এক সপ্তাহ ধরে রোগীর চাপ বেড়েছে। এ হাসপাতালে ২৫০ বেডের শিশু ওয়ার্ড রয়েছে। অতিরিক্ত শিশু রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য যে ওয়ার্ডে বেড খালি আছে সেখানেই পাঠানো হচ্ছে। সাত দিন আগে বহির্বিভাগে রোগী থাকত ১৮০ জন। সেখানে এখন দ্বিগুণ চিকিৎসা নিতে আসেন।

এ হাসপাতালের বহির্বিভাগের ইনচার্জ ডাক্তার পাহিম হাসান রেজা জানান, গত কয়েক দিন ধরে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও খিঁচুনি রোগীর সংখ্যা বেশি আসছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু। অতিরিক্ত চাপ সামলাতে জেনারেল বেডেও তাদের রাখা হচ্ছে।

বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকেও শিশু রোগীর সংখ্যা আগের তুলনায় কয়েকগুণ বেড়েছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হাসপাতালের বহির্বিভাগে দৈনিক প্রায় ৪০ থেকে ৫০ শিশু রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে।

চসিক স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার বলেন, বহির্বিভাগে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা অধিকাংশ শিশুই ব্রঙ্কিউলাইটিস, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। সবকয়টি রোগই ভাইরাসজনিত। ঋতু পরিবর্তন, ঘর অপরিষ্কার থাকা এবং ঠান্ডা-গরমের মিশ্র আবহাওয়ার কারণে শিশুদের এসব রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ধীমান দাশ বলেন, প্রচন্ড গরম ও ঠান্ডাজনিত কারণে রোগব্যাধি বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে বাঁচার জন্য শিশুকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে খাবার খাওয়াতে হবে। তরলজাতীয় খাবার বেশি খাওয়াতে হবে। মৌসুমী ফলমূল খাওয়াতে হবে। শিশুকে নিয়ে প্রচন্ড দাবদাহে বের হওয়া যাবে না। তবে অভিবাবকের সচেতনতাই এর প্রকোপ থেকে শিশুকে বাঁচাতে পারে।

চমেক হাসপাতালের শিশু-স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী বলেন, আক্রান্ত শিশুর হাঁচি থেকেও ইনফ্লুয়েঞ্জা, প্যারা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। বড়দের থেকেও ভাইরাস রোগের সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে। এ রোগের লক্ষণ হিসেবে হঠাৎ কাশি বেড়ে যাওয়া, নাক দিয়ে পানি পড়া ও অল্প জ্বরের সাথে শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে। এসব রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকে রক্ষা পেতে ঘর ও শিশুকে সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, শিশুর নাক পরিষ্কার রাখা এবং শিশুর শরীরে গরম না লাগানোর পরামর্শ দেন তিনি।

চিকিৎকরা বলছেন, এ আবহাওয়ায় রোগে আক্রান্ত হলেও আতঙ্কিত না হয়ে শিশুকে তরল খাবার দিতে হবে। লেবুর রস এবং প্রাথমিকভাবে জ্বরের ওষুধ খাওয়ানো যেতে পারে। এরপরও যদি অবস্থার পরিবর্তন না হয়, তাহলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে। শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে দেরি না করে শিশুকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads