করোনা মহামারীর কারণে বিশ্বব্যাপী নারী নির্যাতন বেড়েছে। করোনা পরবর্তী সময়ে নির্যাতনের ঘটনা আরো বাড়তে পারে। তাই নারী নির্যাতন বন্ধে এখনই কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। ধর্ষক-নির্যাতকদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান কার্যকরের মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। গতকাল রোববার জাতীয় সংসদের মন্ত্রী হোস্টেলের মিডিয়া সেন্টারে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে করণীয় শীর্ষক মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে এসব বলেন সংসদ সদস্য ও বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকু বলেন, নারী নির্যাতন বৃদ্ধির অন্যতম কারণ সমাজে মাদকের প্রভাব। তাই মাদক নিয়ন্ত্রণে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। মাদকাসক্তদের চিহ্নিত করতে সরকারি- বেসরকারি সব পর্যায়ে ডোপ টেস্ট চালু করতে হবে। নারীর ওপরে সহিংসতা বন্ধে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরগুলো পৃথক পৃথকভাবে কাজ করছে। বেসরকারি সংস্থাগুলোও বিচ্ছিন্নভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এক্ষেত্রে সমন্বয় প্রয়োজন। আগামীতে নারী নির্যাতন বন্ধে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
নারী নির্যাতন বন্ধে শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার আহ্বান জানিয়ে সংসদ সদস্য আরমা দত্ত বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমাদের অঙ্গীকার হবে-একজন নারীও যেন নির্যাতনের শিকার না হন। এজন্য আইনের সঠিক বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। ইউনিয়ন পর্যায় থেকে মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। নির্যাতন বন্ধে স্থানীয় সরকারকে আরো বেশি সক্রিয় করতে হবে।
বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী নারী নির্যাতন সংক্রান্ত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষে উপজেলা পর্যায়ে এ সংক্রান্ত ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রস্তাব দেন। বলেন, আদালতে বিচারকের সংখ্যা বাড়াতে হবে। উপজেলা নারী বিষয়ক কর্মকর্তার ক্ষমতা বাড়াতে হবে। আদালতে একজন নারী পিপি নিয়োগ দিতে হবে। নির্যাতনের শিকার নারীর সুরক্ষায় বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
নারী নির্যাতন বন্ধে জনগণের মধ্যে জাগরণ সৃষ্টির জন্য জনপ্রতিনিধিদের কাজ করার আহ্বান জানিয়ে সংসদ সদস্য অপরাজিতা হক বলেন, সরকার মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে আইনের সংশোধনী পাস করেছে। এখন মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকরের মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। সেটা করা সম্ভব হলে এসিড সন্ত্রাসের মতো নারী নির্যাতনও নিয়ন্ত্রণে আসবে।
সভাপতির বক্তব্যে জেসমিন প্রেমা বলেন, বিকৃত রুচির জায়গা থেকে ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনা বেশি ঘটছে। তাই শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষা বাড়াতে হবে। নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা বন্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সর্বস্তরে সচেতনতা বাড়াতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উত্থাপন করেন পার্লামেন্টনিউজবিডি.কম-এর সম্পাদক সাকিলা পারভীন। এতে বলা হয়, গত অর্ধযুগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে ২০১৯ সালে। ওই বছর দেশে এক হাজার ৩৭০টি ধর্ষণ, ২৩৭টি গণধর্ষণসহ চার হাজার ৬২২টি নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। তবে করোনা মহামারীকালেও ধর্ষণ-নির্যাতনের ঘটনা কমেনি। গত বছর তিন হাজার ৪৪০ জন নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এরমধ্যে এক হাজার ৭৪ জনকে ধর্ষণ, ২৩৬ জনকে গণধর্ষণ ও ৩৩ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া ২০০ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। আর ৪৩ জন শ্লীলতাহানি ও ৭৪ জন যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে। অনুষ্ঠানে এসব অপরাধ কমিয়ে আনতে আইন ও ব্যবস্থাপনার সংস্কার এবং ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির সুপারিশ করা হয়।
সমাজকল্যাণ ও উন্নয়ন সংস্থা (স্কাস) আয়োজিত অনুষ্ঠানে আরো অংশ নেন, স্ট্রিট চিলড্রেন অ্যাক্টিভিস্টস নেটওয়ার্কের (স্ক্যান) এর সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মুকুল ও সাংবাদিক নিখিল ভদ্র প্রমুখ।