টেস্টেই ভাগ্য ঝুলে আছে ৫৫ কোটি টাকার ইউরেনিয়ামের। গত ৩০ ডিসেম্বর রাজধানীর রামপুরায় ৫৫ কোটি টাকার ইউরেনিয়ামসহ ৩ জনকে আটক করে র্যাব। ঘটনাটি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। তবে এটি ইউরেনিয়াম নাকি প্রতারণার জন্য অন্য কোনো ধাতববস্তু সেটি পরীক্ষার জন্য আণবিক শক্তি কমিশন ও সিআইডির ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত রেজাল্ট আসেনি।
এর আগে ২০১৪ সালের আগস্টে ইউরেনিয়াম সদৃশ্য ধাতববস্তু উদ্ধার করেছিল মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। ওই সময় ১১ জনকে আটকও করা হয়েছিল। কিন্তু পরে সেটি ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের মিডিয়া শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানান, ইউরেনিয়াম কি না সেটি যাচাইয়ের জন্য ধাতব বস্তুটি আণবিক শক্তি কমিশনে পাঠানো হয়েছে। এটির রেজাল্ট এখনো আসেনি। তবে আটককৃতদের আমরা থানায় হস্তান্তর করেছি। এ বিষয়ে একটি জিডি দায়ের করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ৩০ ডিসেম্বর রামপুরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে আনুমানিক ৫৫ কোটি টাকা মূল্যের ইউরেনিয়ামসহ অন্যান্য মালামাল জব্দ করে র্যাব। এ সময় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আটককৃতরা হলো-এবিএম সিদ্দিকী ওরফে বাপ্পী (৫৯), আক্তারুজ্জামান (৩৩) ও মিজানুর রহমান (৫০)।
র্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানায়, বিভিন্ন উৎস থেকে অবৈধভাবে ইউরেনিয়াম কিনে তা বিক্রি করে আসছে তারা। জব্দকৃত মালামাল ও আসামিদের রামপুরা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানায় র্যাব। বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়, ২৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় র্যাব-১০ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর রামপুরা থানাধীন পূর্ব রামপুরার জাকের গলি এলাকার শুকরিয়া ভবনে অভিযান চালায়। এ সময় প্রায় ৫৫ কোটি টাকা মূল্যের ইউরেনিয়ামসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে- একটি চামড়ার বাক্স, একটি ছোট চামড়া ও স্টিলের বাক্স (যার গায়ের ওপর ইংরেজিতে টজঅঘওটগ অঞঙগওঈ ঊঘঊজণে গঊঞঅখওঈ ঊখঊগঊঘঞ অঞঙগওঈ ডঊওঐেঞ ২২২.০৭ (অ) ২খ.ই খঅইচজঙঝ লেখা আছে), একটি রিমোট কন্ট্রোল, একটি ম্যানুয়েল বই, একটি গ্যাস মাস্ক, একটি ইলেটকট্রিক মিটার, একটি রাবারের ড্রপার, একটি স্টিলের ঢাকনাযুক্ত কাচের পট, পাঁচটি কাচের তৈরি ছোট চিকন পাইপ, একটি কেচি, একটি মিটার, একটি কালো কম্পাস, দুটি পাইপ সদৃশ বস্তু, একটি মেটাল ছাকনি, একটি ক্যাটালগ, এক জোড়া হ্যান্ড গ্লাভস, একটি চামড়ার জ্যাকেট (গাউন)।
লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, আমরা নিশ্চিত না যে এগুলো ইউরেনিয়াম কি না। এ কারণে মামলাও করিনি। শুধুমাত্র রামপুরা থানায় জিডি করে বস্তুগুলো টেস্টের জন্য আণবিক শক্তি কমিশনে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তারের পর আমরা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পর্যাপ্ত সময় পাইনি। এ কারণে বিশদ জানতে পারিনি। তবে টেস্টেও ফলাফল যদি ইউরেনিয়াম হয় তবে এটি অন্যদিকে মোড় নেবে। আর টেস্টেও রেজাল্ট ইউরেনিয়াম না হয় তবে এটি নিয়ে যে সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্র রয়েছে সেই বিষয়ে র্যাব সাঁড়াশি অভিযান চালাবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যাদের আটক করা হয়েছে তারা শুধু বাহক। কোথায় থেকে আনা হয়েছে, ক্রেতা কারা এ বিষয়ে এখনো আমরা কিছু জানতে পারিনি।
রামপুরা থানার অফিসার্স ইনচার্জ শাহিন ফকির বলেন, র্যাব আসামি ও জব্দকৃত মালামাল থানায় দিয়ে একটি জিডি করেছে। জিডির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বস্তুটি পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য সিআইডির ল্যাবে পাঠিয়েছি। আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজনে রিমান্ডের আবেদনও দেওয়া হয়েছে আদালতে। তিনি বলেন, যেহেতু এখনো এ বিষয়ে রেজাল্ট আসেনি সেহেতু এ বিষয়ে এর চেয়ে বেশি কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না।
এর আগে ২০১৪ সালের আগস্টে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ রাজধানীর বনানী থেকে একই সদৃশ্য বস্তু জব্দ করেছিল। ওই সময় ইউরেনিয়াম বলেও প্রচার করা হয়েছিল। আটক করা হয়েছিল ১১জনকে। ওই সময় ডিবির উদ্ধার আর র্যাবের উদ্ধার করা বস্তুটির প্যাকেটের গায়ে যা লেখাছিল সেটি হুবুহু। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ওই সময়ে তদন্তে অনেক গভীরে যায়। পরবর্তীতে এটি পরীক্ষা করে ইউরেনিয়াম নয় বলে প্রমাণিত হয়।
নাম প্রকাশ না শর্তের গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, রাজধানীর বনানী, গুলশান কেন্দ্রিক এ ধরনের চক্র রয়েছে। যারা কোটি টাকা দামের ইউরেনিয়াম বলে প্রচার করে প্রতারণা করে। চক্রটি অনেক ধূর্ত ও চালাক প্রকৃতির। এরা কোটি কোটি টাকা প্রতারণা করে। যারা প্রতারণার শিকার হন তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভয়ে অভিযোগও করেন না। এ কারণে চক্রটিকে গ্রেপ্তারও করা যায় না।
তারা বলেন, রামপুরা থানা পুলিশ আটক বাহকদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে। কোথায় থেকে পেয়েছে, কার কাছে দিত এসব বিষয়ে তথ্য পেলে চক্রটিকে আইনের আওতায় আনা যাবে।