লেবু চাষে সফল আদিবাসী ইনা মানখীন

লেবু চাষে সফল আদিবাসী ইনা মানখীন

ছবি : বাংলাদেশের খবর

কৃষি অর্থনীতি

লেবু চাষে সফল আদিবাসী ইনা মানখীন

  • নালিতাবাড়ী (শেরপুর) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৩ জানুয়ারি, ২০১৯

পাহাড়ি সমতল। হাঁটলে পায়ের নিচে পড়ে সবুজ ঘাস। সরু রাস্তার দু’পাশে মাঝে মধ্যে চোখে পড়ে সবজি ক্ষেত। বিশেষ করে লাউয়ের আবাদ সবচেয়ে বেশি। অন্যান্য সবজিও রয়েছে বেশ। কয়েক গজ সামনেই ভারত। ভারত ও বাংলাদেশকে ভাগ করেছে একটি নদী। দুটি দেশের সীমানা চিরে প্রবাহিত হয়েছে খরস্রোতা নদী ভোগাই। নদীতে রয়েছে হাঁটুজল। সীমান্তঘেঁষা ভারত বাংলাদেশের নর-নারীরা নদীতে ধরে মাছ। চোখে পড়ে ভারতীয় রাখালের গরু চরানোর দৃশ্য। নদীর বুকে জেগে উঠেছে চর। বাংলাদেশিরা চর থেকে সংগ্রহ করছে বালু ও পাথর। এই ভোগাই নদীর তীরে জিরো পয়েন্টে তারানী গ্রামটিতে গড়ে উঠেছে বাংলাদেশের বসতি। অধিকাংশ পরিবার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর গারো সম্প্রদায়। পাহাড় আঁকড়ে যাদের জীবন ও জীবিকা।

এই গ্রামেই বাস করে ইনা মানখীন (৩০) নামে সহজ সরল আদিবাসী এক রমণী। স্বামী এবং এক পুত্র ও এক কন্যা নিয়ে তার সংসার। লেখাপড়ায় তেমন এগোতে পারেননি তিনি। এসএসসি পাস করেছেন। একটি বেসরকারি সংস্থায় শিক্ষকতাও করেছেন। কিন্তু ভাগ্য তাকে আটকে রেখেছে। গারো মাতৃতান্ত্রিক পরিবারের রীতিতে বিয়ের পর স্বামী নিয়ে সংসার শুরু করেন মাতৃলয়ে। শুধু শিক্ষকতার সামান্য বেতন দিয়ে তার সংসার চলা খুব কঠিন। স্বামী একজন কৃষক। গারো সম্প্রদায়ের হওয়ায় ইনাকে কৃষির কথা বলতে হয় না। জন্মসূত্রেই তারা কৃষির সঙ্গে জড়িত। তাই ইনা বেছে নেন অনাবাদি জমিতে ফলাবেন ফসল। সেই জীবনযুদ্ধে নেমে পড়েন। বাড়ির আশপাশেই তাদের পাহাড়ি জমি। হাতুড়ি শাবল গাঁইতি নিয়ে মাঠে নামেন ইনা। ছোট ছোট টিলা ও উঁচু-নিচু জমি সমান করেন। বাবার মাধ্যমে মধুপুর থেকে নিয়ে আসেন ৭ হাজার লেবুর চারা। প্রতিটি চারা কেনেন ৩ টাকা করে। গত বছর সেই সেন জাতের লেবুর চারা রোপণ করেন তার জমিতে। নিয়মিত পরিচর্যায় চারাগুলো হনহন করে বৃদ্ধি পেতে থাকে। তিন মাস পর থেকেই গাছে লেবু ধরতে শুরু করে। প্রতিটি গাছের কাণ্ডেই শোভা পাচ্ছে থোকা থোকা লেবু। ইনা সপ্তাহে দুবার লেবু বিক্রি করে সংসারের চাহিদা পূরণ করছেন।

ইনা মানখীন বলেন, অল্প লেখাপড়া করে ভালো চাকরি করা সম্ভব নয়। তাই মা-বাবার সামান্য জমিই বেছে নিয়েছেন তিনি। ধান আবাদের তেমন সুবিধা না থাকলেও সবজি ও ফলমূল আবাদে রয়েছে বেশ সুবিধা। তাই শুধু লেবু নয়, পাশের জমিতে রোপণ করেন লিচু, মাল্টা, সুপারি- যা থেকে বেশ আয় হয় সংসারে। কাছেই নদী থাকায় লেবু ক্ষেতে পানি সেচ দেওয়া যায় সহজে। তবে সার ব্যবহারে বছরে খরচ হয় সবচেয়ে বেশি।

ইনা এখন নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন। বছর শেষে তিনি সংসারে আয় দেখতে পাচ্ছেন। একসময় তার সংসার ছিল অসচ্ছল। স্বামী-সন্তান নিয়ে তাকে কষ্টে দিনাতিপাত করতে হতো। লেবু চাষ করে তার ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। তাছাড়া যে জমি বছরের পর বছর থাকত অনাবাদি, ঝোপঝাড়ে পরিপূর্ণ সেই জমিতে এখন শোভা পাচ্ছে হাজার হাজার লেবুগাছ। থোকায় থোকায় ঝুলছে লেবু। নিজেকে একজন আধুনিক কৃষক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন ইনা। একজন গর্বিত নারী কৃষক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads