তামাকসহ অন্য ফসলের চেয়ে কম পরিশ্রম ও বেশি লাভ হওয়ায় সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটে দিন দিন চা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন কৃষকরা। বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংকের সহযোগিতায় জেলার হাতীবান্ধা উপজেলায় গড়ে উঠেছে সোমা টি প্রসেসিং লিমিটেড নামে একটি প্রসেসিং কারখানা। তবে বর্তমানে বিদ্যুতের লো-ভোল্টেজের কারণে কারখানা বন্ধ থাকায় চা পাতা বিক্রি নিয়ে ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে কৃষকদের। ফলে কৃষকরা পার্শ্ববর্তী পঞ্চগড় জেলায় গিয়ে চা পাতা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
জানা গেছে, বাংলাদেশ চা উন্নয়ন বোর্ড কৃষকদের প্রতি চা চারা নাম মাত্র ২ টাকা দরে বিক্রি করছেন। এ জন্য জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার সিঙ্গিমারী গ্রামে চা উন্নয়ন বোর্ড গড়ে তুলেছে বিশাল চা চারার নার্সারি। সেই নার্সারি থেকে কৃষকদের চা চারা সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়া চা উন্নয়ন বোর্ড কৃষকদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা ও পরামর্শ দিচ্ছেন। বর্তমানে চা চাষিরা প্রতি কেজি সবুজ কাঁচা চা পাতা ৩৪ টাকা দরে কারখানায় বিক্রি করছেন। জেলায় ৭২.৮২ একর জমিতে চা বাগান গড়ে তুলেছেন ৫২ জন কৃষক। আরো ২০ জন কৃষক চা বাগান গড়ে তুলতে চা বোর্ডে চা চাষি হিসেবে নিবন্ধন করেছেন। সব মিলে এ পর্যন্ত জেলায় ৭২ জন কৃষক চা চাষে এগিয়ে এসেছেন। এতে গত ২০১৮ সালে মাত্র ৬৩ টন সবুজ কাঁচা চা পাতা উৎপাদন হলেও ২০১৯ সালে তা ৫ গুন বাড়িয়ে ৩ শত ১৫ টন কাঁচা চা পাতা উৎপাদন হবে বলে বাংলাদেশ চা উন্নয়ন বোর্ড ধারণা করছেন। এ ছাড়া জেলায় নতুন করে আরো ২০০ একর জমিতে চা বাগান তৈরি প্রক্রিয়া চলছে। বাংলাদেশ চা উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বিঘা জমিতে চায়ের চারা রোপন করতে মোট খরচ হয় ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা। লালমনিরহাট জেলায় ১ বছরের মধ্যেই ওই চা গাছ থেকে চায়ের কাঁচা পাতা সংগ্রহ করা সম্ভব। ফলে প্রতি বিঘায় প্রথম বছর ৪ হাজার টাকা, দ্বিতীয় বছর ১৬ হাজার টাকা, তৃতীয় বছর ৩৪ হাজার টাকা, চতুর্থ বছর ৪৮ হাজার টাকা ও পঞ্চম বছর ৬৮ হাজার টাকার সবুজ কাঁচা চা পাতা বিক্রি করা সম্ভব। এক গাছে কম পক্ষে ৫০ থেকে ৫৫ বছর ধরে চা পাতা উৎপাদন সম্ভব।
হাতীবান্ধা উপজেলার সিঙ্গিমারী গ্রামের চা চাষি আবু বক্কর বলেন, আগে এসব জমিতে তামাক ও ভুট্টা চাষ করতাম। তামাক চাষে অনেক শ্রম ও টাকা খরচ করতে হতো কিন্তু চা বাগানে একবার চারা রোপণ করে পরিচর্যা করলেই কম খরচে অনেক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব। পারুলিয়া এলাকার চা বাগান মালিক বদিউজ্জামান ভেলু ও গোতামারী এলাকার বিশ্বজিৎ জানান, কম পরিশ্রমে ও কম খরচে চা চাষ করে অধিক মুনাফা পাওয়া যায়। তবে জেলার হাতীবান্ধায় টি প্রসেসিং কারখানাটি বন্ধ থাকায় চা পাতা বিক্রিতে ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে। সোমা টি প্রসেসিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফেরদৌস আলম জানান, অর্থের অভাবে টি প্রসেসিং কারখানাটি চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। বাংলাদেশ চা বোর্ডর লালমনিরহাট জেলা প্রকল্প পরিচালক আরিফ খান জানান, এ এলাকার চাষিদের চা চাষে আগ্রহ দেখে বাংলাদেশ চা বোর্ডের উদ্যেগে ২ বছর আগে সিঙ্গিমারী বিজিবি ক্যাম্প এলাকায় একটি নার্সারি করা হয়েছে। এখান থেকে চাষিদের স্বল্প মূল্যে চায়ের চারা সরবরাহ করছি এবং চাষিদের চারা রোপণ ও পরিচর্যাসহ সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ নার্সারি থেকে আমরা ৪ লাখ ১১ হাজার চারা বিক্রি করেছি। এ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার ৪১ শতাংশ সম্পন্ন করতে পেরেছি। আশা করছি আগামী অর্থবছরে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারব। এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারলে এ অঞ্চলের হাজার হাজার কৃষকের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে।