লেবাননের জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল হিজবুল্লাহ জয় পেয়েছে। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নুহাদ মাচনৌক গতকাল সোমবার এই জয়ের সংবাদ ঘোষণা করেন বলে জানিয়েছে টাইম মিডিয়া। সংসদের মোট ১২৮ আসনের মধ্যে অন্তত ৪৭টি আসন নিশ্চিত করেছে হিজবুল্লাহ। ফলে রাজনৈতিক মিত্রদের নিয়ে সরকার গঠন করে দলটি নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। পার্শ্ববর্তী দেশ ইসরাইলের শিক্ষামন্ত্রী নাফতালি বেন্নেত সোমবারের টুইটে এই জয়কে ‘হিজবুল্লাহ = লেবানন, ইসরাইল সার্বভৌম লেবানন এবং হিজবুল্লাহর মধ্যে কোনো পার্থক্য দেখে না’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
২০০৯ সালের পর অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহর জয় প্রধানমন্ত্রী হারিরির ফিউচার পার্টির ভবিষ্যৎ নাড়িয়ে দেবে বলে মনে করছেন মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশ্লেষকরা। লেবাননের একাধিক মিডিয়ার মতে, এবারের নির্বাচনে লেবাননের সরকার কাঠামো থেকে পশ্চিমা সমর্থিত শক্তি পুরোপুরি দূর হবে। ওয়াশিংটন পোস্টের রিপোর্ট অনুসারে দেশটির সুন্নি মুসলিমরাও অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অস্থিতিশীলতার জন্য হারিরির পার্টির ওপর থেকে বিশ্বাস হারাচ্ছে। সুন্নিদের একাংশ সরাসরি হিজবুল্লাহকে ভোট না দিলেও তাদের মিত্র পার্টিগুলোকে ভোট দিয়েছে।
মাত্র ছয় মাস আগেই সৌদি আরবে হারিরিকে গ্রেফতার-পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে জোরপূর্বক পদত্যাগ করানোর চেষ্টা হয়েছিল। এই চেষ্টার পেছনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের হাত ছিল বলে মনে করে মধ্যপ্রাচ্যের মিডিয়া হারেটজ। তখন লেবাবনে এই ঘটনার প্রতিবাদে ব্যাপক বিক্ষোভ হয় এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর মধ্যস্থতায় হারিরিকে মুক্তি দেয় সৌদি আরব সরকার।
ভূরাজনীতির প্রশ্নে মূল দ্বন্দ্ব পশ্চিমা ও সৌদি সমর্থিত হারিরির ফিউচার পার্টি এবং ইরান সমর্থিত হিজবুল্লার মধ্যে। কারণ লেবাবনে সিরিয়া যুদ্ধের ফলে দশ লক্ষাধিক সিরীয় শরণার্থী প্রবেশ করে। এই বিপুল জনসংখ্যা প্রবেশের ফলে দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতি দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যায়। হারিরি শরণার্থীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে এবং হিজবুল্লাহ সিরিয়ার আসাদ সরকারকে সহায়তা করতে শুরু করে। ফলে লেবাননের তৃণমূল পর্যায়ে হিজবুল্লাহর জনভিত্তি ক্রমশ বাড়তে শুরু করে। ওয়াশিংটন পোস্টে এক অসমর্থিত সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়, এবারের নির্বাচনে হিজবুল্লাহর হয়ে বেশ কয়েকজন আসাদপন্থি রাজনীতিক নির্বাচিত হয়েছেন।
হিজবুল্লাহপন্থি দৈনিক আল আকবরে বলা হয়, ‘কাঙ্ক্ষিত নির্বাচনে হারিরির পার্টির হার হবে। আর এই হারের মধ্য দিয়ে লেবাননে নতুন সরকার গঠিত হবে।’ রাজনৈতিক গবেষক ইমাদ সালামির মতে, সংসদে প্রেসিডেন্ট অউনের ব্লক এবার ভিন্ন ব্লকে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তা হলে রাজনৈতিকভাবে লাভবান হবে হিজবুল্লাহ। জানা যায়, ফিউচার পার্টির শক্তিশালী ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত রাজধানী বৈরুতেই এবার তারা পেয়েছে মাত্র পাঁচটি আসন।
বিশ্লেষকদের মতে, লেবাননের জাতীয় নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হলেও সর্বশেষ নির্বাচনের তুলনায় নথিভুক্ত ভোটার অংশগ্রহণের হার ছিল কম। দেশটির মোট নথিভুক্ত ৩ দশমিক ৮ মিলিয়ন ভোটারের মধ্যে মাত্র ৪৯ দশমিক ২ শতাংশ ভোট দিয়েছে। ২০০৯ সালে ৫৪ শতাংশ ভোটার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল। বলা হচ্ছে, ভোটারদের উপস্থিতি কম হওয়ার কারণে নতুন নির্বাচনী নীতিমালা।
গত রোববারের নির্বাচনে ১২৮টি সংসদীয় আসনের বিপরীতে মোট প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ৫৮৩ জন। এর মধ্যে অর্ধেক আসন মুসলিমদের এবং অর্ধেক খ্রিস্টানদের। এবারই দেশটিতে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৮৬ নারী নির্বাচন করেছেন।