আসন্ন রোজায় গরুর মাংস প্রতি কেজির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫০ টাকা, যা গত রমজান মাসের চেয়ে ২৫ টাকা কম। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) সংশ্লিষ্ট মাংস ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে এই দাম নির্ধারণ করে।
সোমবার ডিএসসিসি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের সভাপতিত্বে দক্ষিণ সিটির মাংস ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে এই দাম নির্ধারণ করা হয়।
মেয়র জানান, এবার ভারতীয় গরুর মাংস প্রতি কেজি ৪২০ টাকা, মহিষের মাংস ৪২০ টাকা, খাসির মাংস ৭২০ টাকা এবং ভেড়া ও ছাগলের মাংস ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই দাম সিটি করপোরেশনের আওতাধীন বাজারগুলো ছাড়াও সুপারশপগুলোর জন্য প্রযোজ্য হবে।
উত্তর সিটি করপোরেশন এই দর মেনে চলবে কি না, এমন প্রশ্নে সাঈদ খোকন বলেন, সাধারণত আমরা যে দর নির্ধারণ করি তারাও সেটাই করে। ২০১৭ সালেও দুই সিটি করপোরেশনের মাংসের দাম একই ছিল। এই দাম না মানলে মাংস বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও সতর্ক করে দেন মেয়র।
তিনি বলেন, এবার মাংসের দাম গতবারের চেয়ে একটু কম। যে দর নির্ধারিত হয়েছে এটিই সর্বোচ্চ দর। কিন্তু বিভিন্ন সময় অভিযোগ আসে যে নির্ধারিত দামের চেয়ে অতিরিক্ত দামে মাংস বিক্রি করেন অনেকে। সিটি করপোরেশনের মূল্যতালিকা মানেন না। এবার কেউ বেশি রাখলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মেয়র বলেন, আমরা বলতে পারি পণ্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে। অধিকাংশ পণ্যের দাম স্থিতিশীল আছে। আশা করি এমনটা পুরো রোজা জুড়ে থাকবে।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে সাঈদ খোকন বলেন, একটি মাস আমরা মুনাফা কম করলাম। এটা করলে হয়তো আল্লাহ আরো উন্নতি দিতে পারে আমাদের ব্যবসায়। একটি মাস মাংসের মূল্য এবং গুণগত মান নিশ্চিত করি। ওজন যেন ঠিক দিই। সাধারণ ক্রেতা যেন না ঠকে।
ঢাকা মহানগর মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রবিউল আলম সভায় দাবি করেন, ব্যবসায়ীরা ওজনে মাংস কখনো কম দেন না। সিটি করপোরেশন যে মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে তা মেনে চলারও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
সভায় মাংস ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) আওতায় গাবতলী পশুরহাটে তারা নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এর সঙ্গে ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা জড়িত।
তারা বলেন, ওই হাটের জন্য আমরা বেইজ্জতি হচ্ছি। ইজারাদারের সন্ত্রাসীরা মাংস ব্যবসায়ীদের বেঁধে রাখে। রাতের আঁধারে তাদের কাছে টাকা আদায় করে। আর ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা লুটের টাকার অংশ নিচ্ছেন।
সাঈদ খোকনের উদ্দেশে রবিউল আলম বলেন, গাবতলীর সন্ত্রাসীদের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করুন। আপনি উত্তরের মেয়রকে ফোন করুন। আমাদের অন্য কোনো দাবি নেই। সরকার যে রেট নির্ধারণ করে দিয়েছে আমরা সেই রেটে টাকা জমা দিতে চাই। এটা করলে তিন শ টাকা কেজি মাংস বিক্রি করা সম্ভব।
মাংস ব্যবসায়ীরা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় একটি স্থায়ী গরুর হাট বসানোর দাবি জানালে মেয়র সে ব্যাপারে ইতিবাচক আশ্বাস দেন।
ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মেয়র খোকন বলেন, কামরাঙ্গীরচরে একটি পশুর হাট করে দেওয়া হবে। একটা প্রস্তাব দেওয়া আছে। এটা আমার কাছে গেলে আমি অনুমোদন দিয়ে দেব।
২০১৭ সালে প্রতি কেজি দেশি গরুর মাংসের দাম ঠিক হয়েছিল ৪৭৫ টাকা। এ ছাড়া ভারতীয় গরুর মাংস প্রতি কেজি ৪৪০ টাকা, মহিষের মাংস ৪৪০ টাকা, খাসির মাংস ৭২৫ টাকা এবং ভেড়া ও ছাগলের মাংস ৬২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
বৈঠকে জানানো হয়, রমজান মাস উপলক্ষে নির্ধারিত দাম প্রথম রোজা থেকে ২৬ রোজা পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শেখ সালাহউদ্দীন। সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. জাহিদ হোসেন, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসুফ আলী সরদার, গোলাম মর্তুজা মন্টু, শেখ আবদুল বারেকসহ মহানগর এলাকার মাংস ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিনিধিরা।