রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় জোসেফ মুক্ত 

শীর্ষ সন্ত্রাসী তোফায়েল আহমেদ জোসেফ

সংরক্ষিত ছবি

সরকার

রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় জোসেফ মুক্ত 

রোববার ছাড়া পেয়ে চলে গেছেন ভারতে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ৩১ মে, ২০১৮

যাবজ্জীবন সাজার আসামি নব্বইয়ের দশকের আলোচিত শীর্ষ সন্ত্রাসী তোফায়েল আহমেদ জোসেফ রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় মুক্তি পেয়েছেন। কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার মো. জাহাঙ্গীর কবির গতকাল বুধবার তার মুক্তি পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, রোববার আদেশ পাওয়ার পর ওই দিনই আমরা তাকে ছেড়ে দিয়েছি। এদিকে দুই দশক কারাগারে থাকার পর মুক্তি পেয়ে জোসেফ ইতোমধ্যে ভারতে পাড়ি জমিয়েছেন বলে তথ্য দিয়েছেন পুলিশের বিশেষ শাখার একজন কর্মকর্তা। তবে এ বিষয়ে জোসেফের পরিবারের কোনো বক্তব্য জানা যায়নি।

বিমানবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা ওয়াদুদ আহমেদের ছোট ছেলে হলেন জোসেফ। তার বড়ভাই হারিস আহমেদের নামও রয়েছে পুলিশের শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায়। হারিস বর্তমানে ভারতে পালিয়ে আছেন বলে ধারণা করা হয়। নব্বইয়ের দশকে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন তাদের আরেক ভাই সাঈদ আহমেদ টিপু। আর তাদের বড় ভাই লেফটেন্যান্ট জেনারেল আজিজ আহমদ এক সময় বর্ডারগার্ড বাংলাদেশের মহাপরিচালক ছিলেন।

ফ্রিডম পার্টির নেতা মোস্তফা হত্যা মামলায় ২০০৪ সালে জোসেফকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন ঢাকার জজ আদালত। হাইকোর্ট ওই রায় বহাল রাখলেও ২০১৫ সালে আপিল বিভাগ সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। নিহত মোস্তফার ভাই হাবিবুর রহমান মিজান বর্তমানে মোহাম্মদপুরের ওয়ার্ড (৩২ নম্বর) কাউন্সিলর। তিনি মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সদ্য বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক।

জোসেফ ২০ বছর আগে যখন গ্রেফতার হন, তার নামে তখন ঢাকার বিভিন্ন থানায় চাঁদাবাজি, খুন, অবৈধ অস্ত্র বহনের অভিযোগে অন্তত ১১টি মামলা ছিল। এর মধ্যে মোস্তাফিজুর রহমান হত্যা মামলা ছাড়া বাকিগুলোর নিষ্পত্তি হয়েছিল আগেই। ওই মামলায় রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পেয়ে জোসেফ তিন দিন আগে মুক্তি পেলেও বিষয়টি আলোচনায় আসে গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের পর। সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফ করছিলেন মন্ত্রী; সেখানেই জোসেফের বিষয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েন তিনি। জবাবে বলেন, দেখুন তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছিল। তিনি ২০ বছর কারাভোগ করেছেন। কারাভোগের পর ডিউ প্রসেস এ- যে প্রসেস এর মাধ্যমে আবেদন করা হয়, সে আবেদন মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে গেছে। মুক্তির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মন্ত্রী বলেন, তিনি আবেদন করেছিলেন ভয়ানক অসুস্থ। তার এক বা দেড় বছর বাকি ছিল সাজা ভোগের। সেটার জন্য তিনি মারছি পিটিশন করেছিলেন। খুব সম্ভবত মহামান্য রাষ্ট্রপতি তা অনুমোদন করেছেন। তার কিছু অর্থদণ্ডও ছিল। সেগুলো আদায় সাপেক্ষে তাকে বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করার পারমিশন দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি- এটুকু আমি জানি, এর চেয়ে বেশি কিছু জানি না।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের পর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার মো. জাহাঙ্গীর কবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জোসেফকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, রোববার রাষ্ট্রপতির আদেশ পাওয়ার পর ওই দিনই জোসেফকে ছেড়ে দিয়েছি। কারাগারের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, যাবজ্জীবন সাজার আসামির ২০ বছর কারাভোগ পার হলে কারা কর্তৃপক্ষ তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানায়। সেই সঙ্গে তার পাওনা ছুটির তথ্যও দেওয়া হয়। এর মধ্যে জোসেফের পরিবারের পক্ষ থেকে তার অসুস্থতার কথা বলে রাষ্ট্রপতির অনুকম্পা চাওয়া হয়েছিল। রাষ্ট্রপতি তাতে অনুমোদন দেওয়ায় জোসেফকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। পুলিশের বিশেষ শাখার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, জোসেফের মুক্তির বিষয়ে কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়। তার পাসপোর্ট প্রস্তুত করা ছিল। জোসেফ কারাগার থেকে বেরিয়ে বাসায় যান। সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থানের পর সরাসরি ভারতের পথে রওনা দেন।

জোসেফের বড় ভাই হারিস আহমেদ সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে নিজেকে মোহাম্মদপুর এলাকায় জাতীয় পার্টির নেতা হিসেবে পরিচয় দিতেন। এরশাদ সরকারের পতনের পর তিনি নিজের পরিচয় দিতে শুরু করেন মোহাম্মদপুর থানা যুবলীগের নেতা হিসেবে। ঢাকার ৪৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কমিশনার পদে নির্বাচনও করেছিলেন তিনি। জোসেফও এক সময় নিজেকে ছাত্রলীগের মোহাম্মদপুর থানার নেতা দাবি করতেন। তবে সংগঠনের কোনো পদে তিনি ছিলেন না বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। যাবজ্জীবন সাজায় কারাগারে থাকার মধ্যে জোসেফের জটিল কোনো রোগ না থাকার পরও টানা ২০ মাসের বেশি সময় হাসপাতালে কাটালে বিষয়টি গত বছর সংবাদ শিরোনাম হয়। এ নিয়ে আলোচনা শুরু হলে তাকে হাসপাতাল থেকে কারাগারে ফেরত নেয় কারা কর্তৃপক্ষ।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads