মানবতাবিরোধী অপরাধে রাজাকার রিয়াজ ফকিরকে মত্যুদন্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল

সংরক্ষিত ছবি

জাতীয়

মানবতাবিরোধী অপরাধ

রাজাকার রিয়াজ ফকিরের মৃত্যুদণ্ড

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১১ মে, ২০১৮

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় হত্যা, ধর্ষণ, গণহত্যার দায়ে তখনকার আলবদর কমান্ডার রিয়াজ উদ্দিন ফকিরকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। প্রসিকিউশনের আনা সবক’টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে রায়ে বলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিচারপতি শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণাকালে আসামি রিয়াজ উদ্দিন ফকির কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিল। ২১ মার্চ মামলাটির শুনানি শেষে রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়। এ মামলায় ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর ঋষিকেষ সাহা। আসামি পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন।

এ পর্যন্ত ৩২ মামলার রায়ে ৭৪ আসামির মধ্যে পাঁচজন বিচারাধীন অবস্থায় মারা গেছে। ৬৯ জনের সাজা হয়েছে, যাদের মধ্যে ৪২ জনের মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়েছে।

রায়ে দুই অভিযোগে আসামি রিয়াজ উদ্দিন ফকিরকে মৃত্যুদণ্ড এবং দুই অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ১ ও ৫ নম্বর অভিযোগে ফকিরকে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং ৩ ও ৪ নম্বর অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এর মধ্যে মৃত্যুদণ্ডের সাজা মৃত্যু পর্যন্ত ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে কার্যকর করতে বলা হয়েছে।

রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু বলেন, ‘এই রায়ে আমরা অবশ্যই খুশি। যারা বিচার চেয়েছেন, তারা এই রায়ের মাধ্যমে বিচার পেয়েছেন।’

তবে আসামি পক্ষের আইনজীবী মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন বলেছেন, ‘রায়ে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছি। আমরা সংক্ষুব্ধ। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করব। মামলায় যেসব সাক্ষ্য-প্রমাণ এসেছে, তাতে ফাঁসি দেওয়া সম্ভব নয়।’

এ মামলায় শুরুতে তিনজন আসামি ছিলেন। এর মধ্যে আসামি আমজাদ আলী গ্রেফতারের পর মারা গেলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়নি। আর অভিযোগ গঠনের আগে পলাতক আসামি ওয়াজ উদ্দিন মারা গেলে পরে তার নামও বাদ দেওয়া হয়।

রিয়াজ উদ্দিন ফকিরের বিরুদ্ধে এক নম্বর অভিযোগ হলো- একাত্তরের ২২ আগস্ট সকাল ১০টায় বেশ কয়েকজন রাজাকারকে সঙ্গে নিয়ে ফুলবাড়িয়া সদরের আবদুল মজিদকে আটক করে রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করা। একই দিন দুপুর ১টায় শহীদুল্লাহ মাস্টার, জামশেদ আলী এবং অপরিচিত আরো কয়েকজনকে আটক করে রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করা। ২৫ আগস্ট আবদুল মজিদ, শহীদুল্লাহ মাস্টার, জামশেদ আলী এবং অপরিচিত আরো দুজনকে গুলি করে হত্যার পর স্থানীয় নদীতে মরদেহ ফেলে দেওয়া।

তিন নম্বর অভিযোগ- একাত্তরের ৫ নভেম্বর সকাল ১০টার দিকে রিয়াজ উদ্দিন ফকির রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনাসদস্যদের সঙ্গে নিয়ে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া পুলিশ স্টেশনের ঋষিপাড়া গ্রাম থেকে বাসন্তী ঋষি, গীতা রানী ঋষি ও নির্মলা ঋষিকে তুলে নেয়। পরে তাদেরকে পাকিস্তানি সেনারা ধর্ষণ করে। এরপর গণেশ ঋষি, রিফাত ঋষি, গগন ঋষি, কালু ঋষি, মঙ্গলা ঋষি, দীনেশ ঋষি, উমেশ ঋষি ও মহিন্দর ঋষিকে গুলি করে হত্যার পর স্থানীয় নদীতে তাদের লাশ ফেলে দেয়।

চার নম্বর অভিযোগ- একাত্তরের ১৩ নভেম্বর দুপুর আনুমানিক ১২টার সময় আলবদর কমান্ডার রিয়াজ উদ্দিন ফকির সশস্ত্র রাজাকারদের সঙ্গে নিয়ে আছিম বাজারে প্রবেশ করে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে এবং নির্যাতন চালায়। এ ছাড়া সেখান থেকে ১৩ জনকে ধরে নিয়ে গুলি করে আখিলা নদীতে তাদের মরদেহ ভাসিয়ে দেয়। এ ঘটনায় সব মিলিয়ে ৪৩ জন সাধারণ মানুষের প্রাণহানি ঘটে।

পঞ্চম অভিযোগ হলো- একাত্তরের ২১ নভেম্বর সকাল ৯টার দিকে রিয়াজ উদ্দিন রাজাকারদের সঙ্গে নিয়ে ভালুকজান গ্রাম থেকে আলতাফ আলী মণ্ডল, তালেব আলী মণ্ডল, সেকেন্দার আলী মণ্ডল এবং লাল মাহমুদ মণ্ডলকে তাদের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে নির্যাতন চালায়। পরে লাল মাহমুদ মণ্ডলকে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং অন্য তিনজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

২০১৬ সালের ১১ ডিসেম্বর হত্যা, গণহত্যা, আটক, অপহরণ, নির্যাতন ও ধর্ষণের পাঁচ অপরাধের ভিত্তিতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। একই বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি তিন আসামির বিরুদ্ধে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনের কাছে জমা দেয় তদন্ত সংস্থা।

রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে ট্রাইব্যুনাল গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর ২০১৬ সালের ১১ আগস্ট আমজাদ আলী ও রিয়াজ উদ্দিন ফকিরকে ফুলবাড়িয়া উপজেলার কেশরগঞ্জ ও ভালুকজান গ্রাম থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads