রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের পথসভায় বোমা হামলার দায় পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টু। গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মন্টু সব খুলে বলেন বলে গতকাল রোববার দুপুরে নিজের দফতরে সংবাদ সম্মেলন করে জানান রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার।
আরএমপি কমিশনার জানান, এই বোমা হামলাটি যে তাদের লোকজনই করেছিল, সেই ঘটনাটি আটক মন্টু মোবাইল ফোনে দলের সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপুকে জানিয়েছিলেন। আর মোবাইল ফোনে এ কথা জানানোর কথাটিও স্বীকার করেন তিনি।
গত ১৭ জুলাই বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের পক্ষে নগরীর সাগরপাড়া এলাকায় পথসভায় বোমা হামলা হয়। চারটি মোটরসাইকেলে আট যুবক ঘটনাস্থলে গিয়ে পরপর তিনটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়।
এ ঘটনার দুই দিন পর তাইফুল ইসলাম টিপুর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন মতিউর রহমান মন্টু। শনিবার রাতে তাদের সেই কথোপকথনের অডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। ওই অডিওতে শোনা যায়, বিএনপি নেতা মন্টু কেন্দ্রীয় নেতা টিপুকে জানাচ্ছেন, ভাইয়ার (তারেক রহমান) কাছে ক্রেডিট নেওয়ার জন্য এই হামলা চালানো হয়েছে যাতে জড়িত তার দলের লোকজনই। এই অডিও রেকর্ড প্রকাশ পাওয়ার পর শনিবার রাতে মন্টুকে তার বাসা থেকে আটক করা হয়। রোববার দুপুরে এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন ডাকে পুলিশ।
বিএনপি নেতা মন্টু ও টিপুর কণ্ঠ কীভাবে নিশ্চিত হওয়া গেল- এমন প্রশ্নের জবাবে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কমিশনার হাফিজ আক্তার বলেন, মন্টু নিজেই স্বীকার করেছেন যে কথোপকথনটি তাদের। তা ছাড়া এ ঘটনায় দলের নেতাকর্মীরাই জড়িত বলেও তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন। মন্টু পরিচিত মানুষ। কণ্ঠটা আপনারা (সাংবাদিকরা) নিজেরাও বুঝতে পারছেন নিশ্চয়।
বিএনপির পথসভায় ওই বোমা হামলায় বাংলাভিশনের সাংবাদিক পরিতোষ চৌধুরী আদিত্যসহ দুজন আহত হন। এ ঘটনার জন্য বিএনপি দায়ী করে আওয়ামী লীগকে। তবে ঘটনার দিনই সংবাদ সম্মেলন করে মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বিএনপি নিজেরাই এ কাণ্ড ঘটিয়েছে।
এ নিয়ে জানতে চাইলে আরএমপি কমিশনার বলেন, মন্টুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বোমা হামলার পরিকল্পনাকারী, মদতদাতা এবং যারা ঘটনাস্থলে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। মামলার তদন্ত কাজও চলবে, আসামিরাও গ্রেফতার হবে। বিএনপির পথসভায় বোমা হামলার ঘটনায় পুলিশ অজ্ঞাত আটজনকে আসামি করে বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা করে। তখন পুলিশ জানায়, মোটরসাইকেলে যে আটজন গিয়ে সরাসরি হামলায় অংশ নেয়, তাদেরকেই আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে হিমেল নামে এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়। আদালতে তার পাঁচ দিনের রিমান্ডেরও আবেদন করা হয়েছে। তবে আবেদনের শুনানি এখনো হয়নি।
পুলিশ কমিশনার বলেন, বিএনপি নেতা মন্টুকে বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের করা মামলাটিতেই গ্রেফতার দেখানো হবে। আরো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রয়োজনে তার রিমান্ডেরও আবেদন করা হবে।