রমজান সামনে রেখে আমদানি হয়েছে প্রচুর পরিমাণ ছোলা, চিনি, ভোজ্য তেল ও ডালজাতীয় ভোগ্যপণ্য। পর্যাপ্ত সরবরাহ ও মজুত থাকায় এখন এসব পণ্য আগের বছরের তুলনায় অনেক কম দামে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রয়েছে। তাই এবার রমজানে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন বাজার-সংশ্লিষ্টরা।
ব্যবসায়ীরা বলেন, রমজান মাসে সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে ছোলা, চিনি ও ভোজ্য তেলের। তাই অতিরিক্ত চাহিদা মাথায় রেখে বিভিন্ন শিল্প গ্রুপ ও আমদানিকারকরা কয়েক মাস আগেই এসব পণ্য আমদানির জন্য বুকিং দিয়ে থাকেন; যাতে রমজানের আগেই তা দেশে পৌঁছায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশে বছরে ছোলার চাহিদা ২ থেকে ২ লাখ ১৫ হাজার টন। এর মধ্যে কেবল রমজান ও এর আগের মাসেই ছোলার মোট চাহিদা থাকে প্রায় ৭০ হাজার টন। এছাড়া বাকি মাসগুলোয় সাধারণত ১০-১২ হাজার টন ছোলার চাহিদা থাকে। ২০১৭ সালের আমদানিকৃত প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টন ছোলার সরবরাহ এখন রয়েছে। এক মাসে নতুন করে আমদানি হয়েছে ৬০ হাজার টন। এছাড়া আরো ৩০ হাজার টন আমদানির তালিকায় আছে। চলতি মাসের মধ্যেই তা চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
দেশে ভোগ্যপণ্যের অন্যতম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলেন, চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত আমদানির কারণে বর্তমানে ছোলার দাম ২০১৭ সালের তুলনায় অনেক কম। ২০১৭ সালের বছর এ সময় পাইকারিতে মানভেদে প্রতিকেজি ছোলা বিক্রি হয় ৭০-৮০ টাকায়। বর্তমানে তা দাঁড়িয়েছে ৪৭-৫৭ টাকা। তবে রমজানে চাহিদা বাড়লে দাম কিছুটা বাড়তে পারে।
দেশে বছরে চিনির মোট চাহিদা ২০ লাখ টন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে রমজানের সময়। সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত দেশের ১৬ চিনিকলের বার্ষিক উৎপাদনের পরিমাণ ৭০-৮০ হাজার টন। বাকি চিনির জোগান দেয় পাঁচ শিল্প গ্রুপের মালিকানাধীন পাঁচটি সুগার রিফাইনারি কারখানা। এগুলো হচ্ছে- মেঘনা গ্রুপ, সিটি গ্রুপ, আবদুল মোনেম গ্রুপ, দেশবন্ধু গ্রুপ ও এস আলম গ্রুপ। এস আলম গ্রুপ উৎপাদিত চিনি মূলত চট্টগ্রাম অঞ্চলের চাহিদা পূরণ করে থাকে। কিন্তু রমজান মাসে চট্টগ্রামে চিনির লাগামহীন মূল্য নিয়ে সর্বসাধারণের মধ্যে প্রায় অসন্তোষ দেখা দেয়। অনেকে এটার জন্য সিন্ডিকেটের কারসাজিকে দায়ী করে থাকেন। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিল থেকে চিনির পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলে বাজারে কখনো তার সঙ্কট হওয়ার কথা নয়। বাস্তবতা হচ্ছে, সুগার মিল কর্তৃপক্ষ অগ্রিম টাকা নিয়ে উৎপাদন ক্ষমতার অতিরিক্ত ‘ডিও’ বিক্রি করে দেয় বাজারে। আর রমজানের সময় যখন একসঙ্গে এসব ‘ডিও’র পণ্য ডেলিভারি নিতে যায় মিল কর্তৃপক্ষ তা দিতে পারে না। ফলে ডিও নিয়ে একটি ট্রাককে মিল গেটে ৮-১০ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে বাজারে।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, রমজানকে কেন্দ্র করে আমদানিকারকরা প্রচুর চিনি, ছোলা, ডাল, খেজুর, ভোজ্য তেল আমদানি করেছেন। তাই এবার রমজানের বাজারে এসব পণ্যের দাম বাড়ার কোনো আশঙ্কা নেই। তারপরও দাম স্থিতিশীল রাখতে চট্টগ্রাম চেম্বার প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে বাজার নজরদারিতে রাখবে।
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, ২০১৭ সালের এই সময় পাইকারিতে মসুর ডাল রকমভেদে প্রতিকেজি ৭৫-১১৫ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। বর্তমানে তা ৪১-৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে মুগ, মটর ও মাষকলাই ডালও আগের বছরের তুলনায় কেজিতে ১৫-২০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে।
দেশের অন্যতম ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও মেট্রোপলিটন চেম্বারের পরিচালক আবুল বশর চৌধুরী বাংলাদেশের খবরকে বলেন, বেশ কিছু কারণে বর্তমানে ভোগ্যপণ্যগুলোর দাম কেজিতে ৩-৪ টাকা বেশি পড়ছে। কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- ডলারের রেট ও ব্যাংকের সুদের হার বৃদ্ধি, বন্দরে জাহাজজট, আমদানি পণ্য খালাসে ঘাটের স্বল্পতা ও মহাসড়কে পণ্য পরিবহনে ওজন নিয়ন্ত্রণ। তিনি বলেন, এক বছর আগে এই সময়ে ডলারের বিনিময় মূল্য ছিল প্রায় ৭৯ টাকা ৫০ পয়সা। বর্তমানে ডলারের বিনিময় মূল্য ৮৩ দশমিক ৫০ পয়সা থেকে ৮৪ টাকা। ডলারের বিনিময় মূল্যের এই হেরফেরের কারণে পণ্য আমদানি ব্যয় বাড়ছে। তা না হলে প্রতিকেজি আরো অন্তত ৩-৪ টাকা কমে ভোক্তাদের কাছে সরবরাহ করা সম্ভব হতো।