রফতানি হচ্ছে স্বরূপকাঠির আপেল পেয়ারা

স্বরূপকাঠির পেয়ারা দেশের চাহিদা মিটিয়ে রফতানি হচ্ছে বিদেশে

সংরক্ষিত ছবি

ফিচার

রফতানি হচ্ছে স্বরূপকাঠির আপেল পেয়ারা

  • প্রকাশিত ১ অগাস্ট, ২০১৮

অভিজিৎ মণ্ডল, পিরোজপুর

পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলায় বাংলার আপেলখ্যাত পেয়ারা পাল্টে দিয়েছে এসব এলাকার প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রামের চিত্র। প্রতিবছর  পেয়ারার  মৌসুমে ভাসমান পেয়ারার হাটে উৎসবমুখর পরিবেশে কেনাবেচা হয়। স্বরূপকাঠির পেয়ারা দেশের চাহিদা মিটিয়ে রফতানি হচ্ছে বিদেশে। পেয়ারার রয়েছে ১০০টির মতো প্রজাতি। বরিশালে কীভাবে পেয়ারা চাষ শুরু হয়েছে, তার সঠিক ইতিহাস জানা যায়নি। তবে ইতিহাসে জানা যায়, পিরোজপুরের স্বরূপকাঠিসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকায় শত বছর ধরে তারা বংশানুক্রমে পেয়ারার চাষ করছেন। তাদের মতে, প্রায় দুইশ’ বছর আগে স্থানীয় কালীচরণ মজুমদার ভারতের ‘গয়া’ থেকে এই জাতের পেয়ারার বীজ এনে এলাকায় রোপণ করেন। সেই থেকে এই অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে পেয়ারার চাষাবাদ। তবে আগে বিচ্ছিন্ন আবাদ হলেও ১৯৪০ সাল  থেকে বাণিজ্যিকভাবে পেয়ারার আবাদ শুরু হয়।

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতিবছর পেয়ারার ফলন ভালো হয়। তবে পেয়ারা চাষিদের দুঃখ যেন যায় না।

স্থানীয় চাষিরা জানান, প্রতিবছর মৌসুমের সময় পেয়ারার দাম পড়ে যায়। বাগানে অনেক সময় প্রতি মণ পেয়ারা ৪০ টাকা দরেও বিক্রি হয়। সাধারণত দর ভালো থাকলে বাগানে পেয়ারার মণ ১০০ থেকে ১৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। ভাদ্রের দিকে ফলন কমে গেলে ২৫০ টাকা পর্যন্ত এই দর ওঠে। তবে বাগান থেকে মোকামের মধ্যে পার্থক্য প্রচুর। আগস্টের প্রথম দিকে বাগানে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা দরে পেয়ারার মণ হলে মোকামে তা ২২০ থেকে ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়। খুচরা ব্যবসায়ীরা ২২০ থেকে ২৫০ টাকা দরে পেয়ারা কিনে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা মণ দরে শহরে খুচরা বিক্রি করে। এভাবে বাগান থেকে ভোক্তা পর্যন্ত ৩ হাত ঘুরে ১০ গুণ বেশি দামে পেয়ারা কিনে খেতে হয় সাধারণ ভোক্তাদের। এ প্রসঙ্গে পিরোজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আবু হেনা মোহাম্মদ জাফর জানান, জেলার পেয়ারা বাগানগুলো অনেক পুড়ানো। বাগানের গাছের অনেক বেশি বয়স হয়ে যাওয়ার কারণে এখন ফলন কমে গেছে। আমাদের অফিস থেকে পেয়ারাচাষিদের সব ধরনের সাহায্য করা হচ্ছে। 

চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাধারণ পরিচর্যা ছাড়া পেয়ারা গাছে তেমন কোনো সার দেওয়ার প্রয়োজন নেই।  বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসেই পেয়ারা গাছে ফুল আসতে শুরু করে। তবে বৃষ্টি শুরু না হলে পেয়ারা পরিপক্ব হয় না। জমি ভাপ্রো হলে হেক্টরপ্রতি ১২-১৪ টন পেয়ারা উৎপাদন হয়। এ অঞ্চলের পেয়ারা শুধু দেশের বাজারেই নয়, রফতানি হয় বিদেশে। পেয়ারার মৌসুমে স্বরূপকাঠি উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার কুড়িয়ানা গ্রামের আঁকাবাঁকা ছোট্ট খালজুড়ে সপ্তাহের প্রতিদিনই বসে জমজমাট ভাসমান হাট। চাঁদপুর, কুমিল্লা, নোয়াখালী, ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামে মৌসুমের সময় প্রতিদিন শত শত ট্রলার, নৌকা, ট্রাকে করে পেয়ারার চালান নিয়ে যায় ব্যবসায়ীরা।

জানা গেছে, এ উপজেলার কোথাও নেই পেয়ারা সংরক্ষণের ব্যবস্থা। এ কারণে প্রায় বছরই পেয়ারার ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার কারণে হাজার হাজার চাষি মুনাফা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। চাষিরা জানান, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগ থাকলে মৌসুমি এ ফল পেয়ারা বছরজুড়ে ভোক্তাদের চাহিদা মেটাতে পারত। পেয়ারা থেকে উৎপাদিত জ্যাম-জেলি দেশি বাজারে চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রফতানি করা সম্ভব হতো।

পেয়ারা বাগান ঘিরে গড়ে উঠেছে পর্যটন কেন্দ্র : কাঠ, সুপারি, নারিকেল, আমড়া এবং সর্বোপরি উপজেলার আটঘর-কুড়িয়ানা ইউনিয়নের আপেল খ্যাত পেয়ারা সুপরিচিতি লাভ করেছে দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে আটঘর কুড়িয়ানা ইউনিয়নে গড়ে উঠেছে পেয়ারা রাজ্য। মৌসুমে জুন  থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত থাকে পেয়ারার রমরমা ব্যবসা। এই চার মাসে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা এমনকি বিদেশ থেকেও পর্যটকরা ভ্রমণ করতে আসেন এখানে। পর্যটকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে ইউনিয়নের আদমকাঠি গ্রামের ৫ বেকার যুবক গড়ে তুলেছেন ন্যাচারাল ট্যুরিস্ট অ্যান্ড পিকনিক স্পট। আয়োজক চিন্ময় হালদার ও সবুজ রায়ের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশের দূর-দূরান্ত থেকে আসা ট্যুরিস্টদের জন্য এ বছর ২ একর জমির ওপর নির্মিত পেয়ারা বাগানের মধ্যে ‘ন্যাচারাল ট্যুরিস্ট অ্যান্ড পিকনিক স্পট’ করা হয়েছে। এখানে প্যাকেজ পদ্ধতিতে জনপ্রতি ২০ টাকা করে বাগানে যত খুশি পেয়ারা ঘুরে দেখে খেতে পারবেন। টুরিস্টদের থাকার জন্য উপজেলা শহর স্বরূপকাঠিতে হোটেল ব্যবস্থা আছে। ভালো সাড়া পেলে আগামীতে ব্যাপক আয়োজন করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু সাঈদ বলেন, আটঘর-কুড়িয়ানা ইউনিয়নের পেয়ারার সুনাম সারা দেশজুড়ে রয়েছে। উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক একটি হিমাগার তৈরি, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং পেয়ারা চাষিরা যাতে ন্যায্য মূল্য পায় তার ব্যবস্থা করা হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads