দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদায় গত ১০ বছরের মধ্যে মা-মাছ সর্বোচ্চ ডিম ছেড়েছে ১৯ এপ্রিল রাতে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ড্রেজার ও ইঞ্জিনচালিত নৌকা চলাচল, জাল দিয়ে মাছ ধরা বন্ধের কারণেই ডিমের পরিমাণ ব্যাপক বেড়েছে। এ দুটি বিষয় নিশ্চিত করতে নজরদারি চালিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। নেপথ্যে কাজ করেছে দুটি সংস্থা এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরি। নদীর দুই পাড়ে বসবাসরত স্থানীয়দের সম্পৃক্ত করেই মা-মাছের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে।
হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরি সূত্রে জানা গেছে, প্রকৃতির নিয়মেই জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসে হালদা নদীতে মা-মাছ আসতে শুরু করে। রুইজাতীয় এসব মাছের প্রতিটির ওজন চার থেকে চল্লিশ কেজি পর্যন্ত হয়। এ সময়ে পেটে ডিম ভরা মাছগুলো পানির উপরিভাগে ভাসে দুর্বল হয়ে। এতে জেলেরা সহজেই জাল দিয়ে ধরে ফেলত মাছগুলো। নেতিবাচক প্রভাব পড়ত ডিম সংগ্রহে। এ বছর জানুয়ারির আগেই পল্লীকর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) অর্থায়নে ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (আইডিএফ) হালদার মা-মাছ রক্ষায় কাজ শুরু করে। হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরির পক্ষ থেকে এ সংস্থাগুলোকে এ বিষয়ে করণীয় প্রস্তাব আকারে দেওয়া হয়। প্রথম দিকে মাছের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হালদাপারের রাউজান ও হাটহাজারী অংশ থেকে ৩০ জনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাদের তিনটি স্পিডবোট দেওয়া হয়। সঙ্গে দেওয়া হয় টর্চলাইট, রেইনকোটসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ।
রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া জানান, একটি বিষয় নিশ্চিত ছিল যে মা-মাছ যারা ধরছে তারা হালদাপারের মানুষ। যারা ডিম সংগ্রহ করে তারাও স্থানীয়। তাই তাদের মধ্য থেকেই বাছাই করা হয় নিরাপত্তাকর্মী। তিনটি স্পিডবোট কর্ণফুলীর মোহনা থেকে সত্তারঘাট এলাকা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার এলাকা পাহারা দেয় তারা। এ দলটি গত ছয় মাসে কয়েক হাজার মাছ ধরার জাল জব্দ করে। তাদের কারণে গত তিন মাস বন্ধ ছিল ইঞ্জিনচালিত নৌকা চলাচল। শুধু মা-মাছের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হওয়ায় এ বছর সর্বোচ্চ মা-মাছ ডিম ছেড়েছে।
ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘প্রথমবারের মতো এ বছরই প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে হালদার ওপর বেশ আন্তরিকতার সঙ্গে নজরদারি করা হয়। নদীতে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে গত বছরের মে মাসে নির্দেশনা দিয়েছিল কার্যালয়। এ ছাড়া পিকেএসএফ’র অর্থায়নে আইডিএফ কাজ করেছে মাঠপর্যায়ে। পিকেএসএফ’র প্রধান, প্রাক্তন মুখ্য সচিব আবদুল করিমের বাড়িও হালদাপারে। তার আন্তরিকতায় প্রকল্পটি সুন্দরভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার প্রত্যক্ষভাবে মাছের প্রজননের বিষয়টি নজরদারি করেন। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে নদীতে স্থাপিত রাবার ড্যামটি নিচে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়, জেলা প্রশাসন, পুলিশ, মৎস্য কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা মা-মাছের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সতর্ক ছিল।
হালদা নদী থেকে এ বছর ২২ হাজার ৬৮০ কেজি ডিম সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। ২০১৭ সালে পাওয়া যায় মাত্র ১ হাজার ৬৮০ কেজি। এর আগের বছর হালদায় কোনো মা-মাছ পরিপক্ব ডিম ছাড়েনি। তবে নমুনা ডিম ছেড়েছিল, যা থেকে ৭৩৫ কেজি ডিম সংগ্রহ হয়। ২০১৫ সালে ২ হাজার ৮০০ কেজি এবং ২০১৪ সালে ১৬ হাজার ৫০০ কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল।