মধ্যপ্রাচ্য

যুক্তরাষ্ট্রকে বাদ দিয়ে হতে পারে জেসিপিওএ ২.০ 

  • প্রকাশিত ২৫ এপ্রিল, ২০১৮

ছয় জাতির সঙ্গে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তিতে অটল না থাকলে গুরুতর পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে হুশিয়ারি জানিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণে দেশটির সঙ্গে ওই চুক্তি করেছিল বিশ্বের ছয় পরাশক্তিধর দেশ। ট্রাম্পর আল্টিমেটাম অনুসারে ইরানের ওই পরমাণু চুক্তি পুনর্মূল্যায়নের শেষ সময় ১২ মে। এই সময়ের মধ্যে চুক্তির বেশকিছু জায়গায় ইরান যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড় না দিলে চুক্তি বাতিলের হুমকি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। অবশ্য এর আগেই রুহানি এই হুশিয়ারি উচ্চারণ করছেন বলে   আলজাজিরার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া বক্তব্যে হাসান রুহানি বলেন, ‘আমি হোয়াইট হাউজের উদ্দেশে বলছি, ইরান এই পরমাণু চুক্তি ভঙ্গ করবে না। কিন্তু কেউ এ চুক্তি থেকে সরে আসতে চাইলে, তেহরান সরকারও পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখাবে।’ এবং খুব জলদিই সে প্রতিক্রিয়া দেখবে বলেও হুশিয়ার করেন তিনি। রুহানি আরো বলেন, অনেক উচ্চবাচ্য করে ট্রাম্প জেসিপিওএ (জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন) চুক্তি বাতিল করতে চাইছেন। কিন্তু, জেসিপিওর কাঠামো এতই শক্তিশালী, এসব হুমকিতে একটুও টলেনি।

এদিকে গত সোমবার চুক্তির পক্ষে আলোচনার জন্য ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ। আলোচনায় জেসিপিওএ’র বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে দুই নেতার মধ্যে কথা হয়। এ সময় ট্রাম্প বরাবরের মতোই ইরানকে চুক্তি সংস্কারের কথা বলেন। শুধু ম্যাখোঁই ইরান চুক্তি রক্ষা করতে চাইছেন তা নয়। আগামী শুক্রবার জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেল এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের মধ্যে ফোনালাপ হওয়ার কথা রয়েছে। এই ফোনালাপে কীভাবে ইরান চুক্তি অটুট রাখতে ট্রাম্পকে রাজি করানো যায় সে বিষয়ে আলোচনা হবে বলে জানিয়েছে সিএনএন। যদিও ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগীর মতে, ইরান চুক্তি বাতিল করার ব্যাপারে ইতোমধ্যেই নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। এরপরেও ট্রাম্প প্রশাসন আশা করছে, চুক্তির মঞ্চে ম্যাখোঁ এবং মের্কেল আবির্ভূত হয়ে ইরানের থেকে কিছু বাড়তি ছাড় আদায় করতে পারবে। আর ট্রাম্পের চাহিদা অনুসারে আগামী ১২ মের মধ্যে ইরান এই ছাড় দিতে রাজি হলে কিছু সংস্কারের মধ্য দিয়ে হলেও চুক্তি অক্ষুণ্ন থাকবে।

সিএনএন সূত্র মতে, যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকরা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যস্থতাকারীরা জোরদার চেষ্টা করছেন এই আন্তর্জাতিক চুক্তি অক্ষুণ্ন রাখতে। চুক্তিপত্রে তারা এমন কিছু ইস্যু খুঁজে পেয়েছেন যা নিয়ে ইরানের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু এই আলোচনায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ট্রাম্পের আল্টিমেটাম।

ফাউন্ডেশন ফর ডিফেন্স অব ডেমোক্রেসিসের সিইও মার্ক দুবোউইটজ বলেন, ‘আমার মনে হয় না যে, ট্রাম্প চুক্তির সংস্কার খারিজ করে দেবেন। কিন্তু ম্যাখোঁ আলোচনার টেবিলে একটি সম্মানজনক অবস্থায় পৌঁছাতে পারলে ইরানের ওপর চাপ প্রয়োগ করে ওবামার করা ক্রটিপূর্ণ চুক্তি সংস্কারে নিজের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা দাবি করবেন ট্রাম্প।’

লবিংয়ে পিছিয়ে নেই ইরান। গত রোববার নিউইয়র্ক সফর করেছেন তেহরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাবেদ জরিফ। সেখান থেকে করা এক টুইটবার্তায় তিনি ম্যাখোঁকে সমর্থনের কথা উল্লেখ করেন। গত সোমবারের টুইটে জরিফ বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁ সঠিক, জেসিপিওএ’র ক্ষেত্রে কোনো “প্ল্যান বি” নেই। হয় এটা পুরোপুরি নয়তো কিছু নয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে শুধু পরমাণু চুক্তি বাস্তবায়নের জন্যই ইউরোপীয় নেতাদের উৎসাহ দেওয়া উচিত নয়, পাশাপাশি বিশ্বাস স্থাপনে তার ভূমিকা পালনের জন্যও বলা উচিত।’

সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে ২০১৫ সালের এপ্রিলে ইরানের সঙ্গে ঐতিহাসিক পরমাণু চুক্তিতে স্বাক্ষর করে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, চীন, রাশিয়া ও জার্মানি। চুক্তি নিয়ে ট্রাম্পের অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে ফ্রান্স, জার্মানি এবং ব্রিটেন প্রকাশ্যে কোনো বক্তব্য না দিলেও যুক্তরাষ্ট্রকে বাদ দিয়ে ইরানের সঙ্গে নতুন চুক্তির দিকে আগাতে পারে দেশগুলো এমন ইঙ্গিত ইতোমধ্যেই পাওয়া গেছে। সে ক্ষেত্রে নতুন এই চুক্তির নাম হতে পারে ‘জেসিপিওএ ২.০’। যদিও ওয়াশিংটনের কিছু সিনিয়র কর্মকর্তার মতে, প্রাথমিকভাবে চুক্তি বাতিল হয়ে গেলেও নতুন করে চুক্তি করার সুযোগ যে থাকবে তা ট্রাম্পের বক্তব্যে পরিষ্কার। সুতরাং যুক্তরাষ্ট্র যে খুব জলদি চুক্তি বাতিল করবে ব্যাপারটা এমন নয়। কিন্তু ওয়াশিংটন ইউরোপীয় নেতাদের ইরানকে সমঝোতার আনার জন্য চাপে রাখতে চাইছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads