চলতি বছরের মে মাস থেকেই চালু হতে যাচ্ছে বহুল প্রতীক্ষিত ইক্যুইটি অ্যান্ড এন্টারপ্রেনারশিপ ফান্ড (ইইএফ)। বৃহস্পতিবার ফান্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
বাংলাদেশের খবরকে তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি আমাকে নিশ্চিত করেছেন আগামী সপ্তাহ থেকেই এই ফান্ড চালু করা হবে।’
মন্ত্রী আরো বলেন, ‘বছরের পর বছর বন্ধ থাকার পর আবার এটা চালু হতে যাচ্ছে যা তথ্যপ্রযুক্তি খাতের জন্য একটি সুখবর। এ জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসে আমাদের করণীয় ঠিক করে দিয়েছি।’
এ বিষয়ে আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী মোহাম্মদ সানাউল হক বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘ইইএফ ফান্ডের বিষয়টি নিয়ে আমরা মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কাজ করছি। খুব শিগগিরই আমরা এই ফান্ডটি চালু করতে যাচ্ছি।’
তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বাণিজ্যিক সংগঠন বেসিসের পরিচালক দিদারুল হক সানি ইইএফ ফান্ডের বিষয়ে বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে এখনই প্রস্তুতি নিচ্ছি। একই সঙ্গে সদস্য কোম্পানিগুলোর সঙ্গেও আমরা যোগাযোগ করে তাদের আবেদনের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেছি। তবে আমার পরামর্শ থাকবে কারো ব্যক্তিগত কাজে এই ফান্ড যেন ব্যবহার না করা হয়।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আইসিটি খাতের পূর্বের ইইএফ ফান্ডের বিষয়ে কিছু খারাপ অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। এর পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে সেদিকে আমরা বিশেষ নজর রাখব। একইসঙ্গে আইসিবি থেকেও একটা বিশেষ কমিটি রয়েছে যারা ফান্ড দেওয়ার আগে প্রতিষ্ঠানগুলোর বিস্তারিত খতিয়ে দেখে। এবার তারা আরো শক্ত অবস্থান নেবে বলে আমরা আশা করছি।’
প্রসঙ্গত, দেশের সম্ভাবনাময় ও প্রতিশ্রুতিশীল অথচ ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচিত সফটওয়্যার শিল্প, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও কৃষিভিত্তিক শিল্পে নতুন বিনিয়োগ উৎসাহিত করার লক্ষ্যে উদ্যোক্তা সম-মূলধন সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্যে ২০০১ সালে ইইএফ গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
পরে সরকার কর্তৃক ইইএফের ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে আইসিবির কাছে হস্তান্তর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ১ জুন থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং আইসিবির মধ্যে দশ বছর মেয়াদি একটি সাব-এজেন্সি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী ইইএফের তহবিল ব্যবস্থাপনা, নীতিমালা প্রণয়ন ও পারফরম্যান্স মনিটরিং ছাড়া ইইএফ আইটি এবং কৃষি খাতের অন্য সব অপারেশনাল কার্যক্রম ও ব্যবস্থাপনা আইসিবির ওপর ন্যস্ত হয়। এ কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য আইসিবিতে ইইএফ উইং নামে একটি স্বতন্ত্র উইং প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাব-এজেন্ট হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শ ও সহায়তায় আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলোকে অন্তর্ভুক্তকরণ, প্রকল্প প্রস্তাবনা যাচাই-বাছাই, প্রকল্প মঞ্জুরি, মঞ্জুরিকৃত প্রকল্পে অর্থ ছাড়করণ, ছাড়কৃত অর্থের বিনিয়োগ পর্যবেক্ষণ, শেয়ার বাই-ব্যাক সম্পর্কিত যাবতীয় কার্যক্রম শেষ করে এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণসহ অপারেশনাল কার্যক্রম পরিচালনা করে। এ ছাড়া আইসিবির শাখাসমূহে ইইএফ সেল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রকল্পসমূহে মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করে।
সৃজনশীল, দক্ষ, সম্ভাবনাময়, প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ সুবিধা পেতে ও মূলধন স্বল্পতার কারণে প্রকল্প গ্রহণে অসমর্থ উদ্যোক্তাদের ইইএফে অর্থায়ন করা হয়। এতে কৃষিভিত্তিক শিল্প এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) অগ্রাধিকার পায়। এ দুই খাতে উদ্যোক্তাদের আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণের অনুমোদন দেয়। পরে আইসিবি যাচাই-বাছাই করে নির্ধারিত শর্ত পূরণসাপেক্ষে পর্যায়ক্রমে অর্থ প্রদান করে থাকে। ইইএফ সহায়তার জন্য প্রতিষ্ঠানকে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হতে হয়। মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৪৯ শতাংশ দেয় সরকার। বাকি ৫১ শতাংশ উদ্যোক্তাকে বিনিয়োগ করতে হয়। কয়েকটি কিস্তিতে এই অর্থায়ন করা হয়। প্রথম বিনিয়োগের চতুর্থ বছর থেকে কোম্পানিকে সরকারের শেয়ার কিনে নিতে হয়। আট বছরের মধ্যে সরকারের পুরো শেয়ার কিনতে না পারলে অবশিষ্ট থাকা শেয়ার ভ্যালুকে (ফেস ভ্যালু) বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ হিসেবে ধার্য করে এবং কোম্পানিকে সেই ঋণ সুদসহ পরিশোধ করতে হয়। তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইইএফ ফান্ড নিতে এই খাতের শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) সম্ভব সব সহযোগিতা করে থাকে।