রাজধানীসহ সারা দেশে গত এক রমজান থেকে শুরু হওয়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাদকবিরোধী অভিযানের পর থেকে কক্সবাজার-৪ আসনের (উখিয়া-টেকনাফ) এমপি আবদুর রহমান বদির নামটি জোরেশোরে উচ্চারিত হচ্ছে সর্বত্র। বদি এখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। এ অবস্থায় মাদকবিরোধী অভিযানের মধ্যেই ওমরা পালনের উদ্দেশে দেশ ছাড়লেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে একটি বেসরকারি বিমানে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে বদি ওমরা পালনে সৌদি আরবের উদ্দেশে দেশ ছাড়েন। তার এই দেশ ছাড়ার মধ্য দিয়ে একটি পত্রিকার সাম্প্রতিক শিরোনামটিই যেন সত্যে পরিণত হলো। তাতে লেখা ছিল— ‘বদির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেবে না সরকার।’
মাদকে আশ্রয়-প্রশয় দেওয়ার অভিযোগ বদির বিরুদ্ধে নতুন কিছু নয়। মাদকবিরোধী অভিযানের আগে পাঁচটি রাষ্ট্রীয় সংস্থার সমন্বয়ে মাদক ব্যবসায়ী ও পৃষ্ঠপোষকদের একটি তালিকা তৈরি করে সরকার। সেই তালিকায় মাদকের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আছে উখিয়া-টেকনাফের এমপি আবদুর রহমান বদির নাম। এ ছাড়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তালিকায় এক নম্বরে আছে বদির নাম। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করা টেকনাফের শীর্ষ মানব পাচারকারীর তালিকাতেও তার নাম ছিল। দেশে মাদক ইয়াবার গডফাদার ও ব্যবসায়ীর তালিকায় টানা ১০ বছর ধরে ছিল বদির নাম। কিন্তু গত মার্চ মাসে একটি সংস্থার তালিকা থেকে সেই নাম বাদ দেওয়া হয়। তবে সেই তালিকায় বদির পাঁচ ভাই, এক ফুপাতো ভাই, দুই বেয়াই ও এক ভাগ্নের নাম আছে। তালিকায় সব মিলিয়ে ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসেবে কক্সবাজারের ৮ উপজেলার ১ হাজার ১৫১ জনের নাম আছে।
এ ব্যাপারে টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নূরুল বশর অতি সম্প্রতি বলেন, টেকনাফ থানার ওসি আর বিজিবির এই ব্যাটালিয়নের কমান্ডারের সঙ্গে কথা বললেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে, তারাই বলে দেবে বাংলাদেশে ইয়াবা কে এনেছে। ২০০৮ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এমপি আছেন বদি। আমরা দেখি যারা ইয়াবা আমদানির মূল কারিগর, তারা সবাই এমপির আশপাশে থাকেন, এমপি তাদের শেল্টার দেন। তাহলে মানুষ কী বুঝবে? আপনি টেকনাফে এসে মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। শতকরা ৯৫ জনই বলবেন এমপি বদির মাধ্যমেই ইয়াবা এসেছে বাংলাদেশে। মূল হোতাদের এখন এলাকায় দেখছিই না। টেকনাফের শতকরা ৯৫ জনই বলবেন এমপি বদির মাধ্যমে বাংলাদেশে ইয়াবা এসেছে।
অবশ্য এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বক্তব্য সম্পূর্ণ ভিন্ন। গতকাল মোবাইল ফোনে বাংলাদেশের খবরকে তিনি বলেন, বদির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ সেটা ভাসা, ভাসা। সুনির্দষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকলে একজন সংসদ সদস্যকে ধরা যায় না। কারো কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ থাকলে সরবরাহ করার অনুরোধ জানান তিনি। বদির বিদেশ যাওয়া প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, বিদেশ যেতেই পারে। কারণ বদির দেশত্যাগে আদালতের বা সরকারের তরফ থেকে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।
বৃহস্পতিবার বদির ওমরা যাওয়ার সফরসঙ্গি হিসেবে ছিলেন মেয়ে, মেয়ের জামাই, বন্ধু আকতার কামাল ও নূরী নামে একজন মাওলানা। ওই দিনই মাদকবিরোধী অভিযানের কারণে দেশত্যাগ কি না সাংবাদিকদের এ প্রশ্ন উড়িয়ে দিয়ে বদির ব্যক্তিগত সহকারী হেলাল উদ্দিন বলেছেন, তিনি অনেক আগেই ওমরা পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। নিয়ম অনুযায়ী তিনি যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতিও নিয়েছেন।
সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ না থাকায় বদিও এ সুযোগে বিদেশ যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে হুঙ্কার ছেড়ে বলেছেন, আমার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণ করতে পারলে সংসদ থেকে পদত্যাগ করে জনগণের কাতারে চলে আসব। বিভিন্ন সংস্থা তার মোবাইল ট্র্যাকিং করেও কোনো কিছু পায়নি বলে দাবি করেন তিনি।