মৃৎশিল্পে দুর্দিন

কষ্টের মধ্যেও অতীত ঐতিহ্য ধরে রেখেছে কুমাররা

সংগৃহীত ছবি

ফিচার

মৃৎশিল্পে দুর্দিন

  • প্রকাশিত ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

জাহাঙ্গীর আলম রিকো, হাতিবান্ধা

লালমনিরহাটের মৃৎশিল্প আজ প্রায় বিলুিপ্তর পথে। মোগলহাটের ৫০টি কুমার পরিবারের এখন দুর্দিন যাচ্ছে। সদর উপজেলার মোগলহাটের একশ বছরের পুরনো গ্রাম কুমোরপাড়ার কুমারদের বর্তমান অবস্থা খুবই খারাপ।

জানা যায়, তাদের পৈতৃক ব্যবসা দিন দিন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। প্লাস্টিকের তৈরি রকমারি পণ্যের কারণে মানুষ দিন দিন মাটির তৈরি জিনিস ব্যবহার কমিয়ে দিচ্ছে। পাঁচ বছর আগেও এখানকার কুমাররা মাটির জিনিসপত্র তৈরি ও বাজারজাত করে অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে সুখে জীবনযাপন করত। এখন শুধু গবাদিপশুর পানি পানের চাড়ি আর বিভিন্ন মেলা উৎসবে শিশুদের খেলনা ছাড়া আর কোনো জিনিসই চলে না। এ দিয়ে যা আয় হয়, তাতে সংসার চালানো কষ্টকর। কুমাররা বলেন, তারা একসময় বিভিন্ন খাল-বিল থেকে মাটি সংগ্রহ করে তা দিয়ে তৈজসপত্র বানাতো। কিন্তু বর্তমানে সেসব খাল-বিল থেকে এঁটেল মাটি সংগ্রহ করতে তাদের ভূমির মালিকদের টাকা দিতে হয়। টাকার বিনিময়ে মাটি এনে পেশা চালাতে এখন তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

নিজ পেশা টিকিয়ে রাখতে কুমাররা বাধ্য হয়ে এঁটেল মাটি কিনে মাটির দ্রব্যাদি বানাচ্ছে। মোগলহাটের কুমোরপাড়ার কুমাররা সাতসকালে উঠে এঁটেল মাটি পায়ে দলে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে জিনিসপত্রের প্রাথমিক  স্তর তৈরি করে রোদে শুকিয়ে সপ্তাহে দুদিন তারা মাটিতে আগুন ধরায়। গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থেকে তারা সাদা মাটির দ্রব্যাদি আগুনে পুড়িয়ে পরে নানা রঙে আঁকিয়ে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিয়ে বাজারজাত করে।

কুমাররা অভিযোগ করে বলেন, তারা কষ্টের মধ্যেও দেশের অতীত ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। কিন্তু সরকারের কোনো সুদৃষ্টি নেই তাদের প্রতি। এদিকে স্থানীয় ছোট ছোট এনজিওগুলো তাদের ঋণ দিয়ে ঋণের বোঝা ভারী করে তুলছে। ফলে তাদের অনেকেই ঋণের ভার সহ্য করতে না পেরে প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বিক্রি করে ঋণের টাকা পরিশোধ করে পথে বসেছে। শ্রীনকী বালা, প্রমীলা বালা, অমূল্য চন্দ্র ও নগেন্দ্র চন্দ্র রায়সহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, এখানকার ৫০টি পরিবারের মধ্যে প্রায় ৩০টি সবচেয়ে বেশি অর্থাভাবে আছে। কুমোরপাড়াটি সীমান্ত এলাকায়। মাত্র ২০ গজ ব্যবধানে ভারত। চারদিকে খোলামেলা পরিবেশ। তবু কুমাররা চোরাকারবারের মতো কাজে নিজেদের না জড়িয়ে বাপ-দাদার পুরনো পেশা আঁকড়ে ধরে আছে।

তবে সরকারিভাবে এসব কুমারকে সুদমুক্ত ঋণ অথবা যথোপযুক্ত সাহায্য দেওয়া হলে মোগলহাটের কুমাররা পৈতৃক পেশায় মনোনিবেশ করে দেশের মৃৎশিল্পের ঐতিহ্য গতিশীল রাখবে এবং নিজেদের উন্নয়নে সফল হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads