উচ্চচাপ (এইচটি) সম্পন্ন মিটারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার নামে গ্রাহকের ২৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) এক নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে। ডিপিডিসির মাতুয়াইল এনওসিএসের কদমতলীর অনুপম বরফ কলের স্বত্বাধিকারী মো. মতিউর রহমানের কাছ থেকে এই অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ। ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির তালিকাভুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আরএম ইলেকট্রনিকসের মালিক মো. মাইন উদ্দিনের মধ্যস্থতায় এই অর্থ নেওয়া হয়েছে বলে দাবি অভিযোগকারী গ্রাহকের। টাকা দেওয়ার পরও পাননি কাঙ্ক্ষিত সেবা। সংযোগ চেয়ে দফায় দফায় বলার পর ভিন্ন ব্যক্তির নামের নিম্নচাপ (এলটি) সম্পন্ন মিটারের মাধ্যমে অবৈধভাবে সংযোগ চালু করে দেন অভিযুক্তরা। মাস শেষে বিলের কোনো রশিদ ছাড়াই অভিযুক্তদের কাছে দিতে হচ্ছে বিলের অর্থ। এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এনওসিএস অফিসে অভিযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি এই গ্রাহকের। অভিযুক্ত নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মোর্শেদের কাছে সমাধান চাইলে উল্টো অবৈধ সংযোগ ব্যবহারের অভিযোগ এনে স্থায়ীভাবে সংযোগ না পাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয় ভুক্তভোগী গ্রাহককে। বর্তমানে গোলাম মোর্শেদ নারায়ণগঞ্জ ডিভিশনের ফতুল্লা এনওসিএসের নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বে। গোলাম মোর্শেদের বদলির পর উপায়ান্তর না দেখে গ্রাহক লিখিত অভিযোগ দেন ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে।
ভুক্তভোগী গ্রাহক মতিউর রহমান বাংলাদেশের খবরকে জানান, ডিপিডিসির তালিকাভুক্ত ঠিকাদার মো. মাইন উদ্দিন ১৭ লাখ টাকার বিনিময়ে একটি এইচটি মিটার সংযোগের ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথা বলে আমাকে দিয়ে বরফ কল স্থাপন করান। পরে আমি বরফ কল স্থাপন করলে তখনকার মাতুয়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মোর্শেদের হয়ে মাইন আমাকে জানান ২৫ লাখ টাকা ছাড়া সংযোগ দেওয়া সম্ভব হবে না। পরে চুক্তির মাধ্যমে দুই কিস্তিতে আমি তাদের ২৫ লাখ টাকা পরিশোধ করলেও সংযোগ দেওয়া নিয়ে টালবাহনা শুরু করেন। এ বিষয়ে আমি বার বার তাগাদা দিয়ে কাজ না হওয়ায় কদমতলী থানায় অভিযোগ করি (জিডি)। পরে থানার মধ্যস্থতায় মাইন উদ্দিন মাতুয়াইল এনওসিএসর অনুমতি নিয়ে আমাকে কিছু দিনের জন্য একটি এলটি মিটারের মাধ্যমে সংযোগ দিয়ে দেন। যে মিটারটি আরএম ইলেকট্রনিকসের মালিক মাইন উদ্দিনের বাবার নামে বলে আমাকে জানানো হয়।
তিনি বলেন, এক মাস পর মাইন উদ্দিন আমার কাছে বিল বাবদ নগদ অর্থ দাবি করেন। এ সময় আমি বিলের রশিদ চাই। কিন্তু তিনি কোনো রশিদ দেননি। তিনি আমাকে বলেন, তার কাছে নগদ টাকা দিলে তিনিই বিল ব্যাংকে জমা করে দেবেন। আমি তার কথা অনুযায়ী কয়েক মাস বিলের টাকা পরিশোধ করলেও সে টাকা মাইন উদ্দিন জমা দেননি। পরে বিদ্যুৎ অফিস থেকে বিশেষ টিম এসে আমার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মোর্শেদ বদলি হয়ে যাওয়ায় আমিও চরম বিপদে পড়ে যাই। উপায়ান্তর না দেখে আমি ডিপিডিসির এমডির কাছে একটি অভিযোগ করি।
অভিযুক্ত নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মোর্শেদের সঙ্গে কথা বলা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ডিপিডিসির কিছু কর্মকর্তা ও স্বার্থান্বেষী মহল তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। কোনো গ্রাহকের কাছ থেকে সংযোগ দেওয়ার নামে কোনো অর্থ নেইনি।
এ বিষয়ে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ানকে কয়েকবার তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এদিকে ডিপিডিসি সূত্র জানায়, অভিযোগ তদন্তে গত ১৩ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ ডিভিশনের প্রধান প্রকৌশলীর দফতরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. সালেক মাহমুদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। তিন কার্যদিবসের মধ্যে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে কমিটিকে বলা হয়।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বাংলাদেশের খবরকে বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সেক্টরে কোনো প্রকার দুর্নীতি মেনে নেওয়া হবে না। দুর্নীতির বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের অবস্থান জিরো টলারেন্স। একজন নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তার সত্যতা পাওয়া গেলে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।