বরগুনার টেংরাগিরি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভেতরে গড়ে তোলা সোনাকাটা ইকোপার্ক চালুর পাঁচ বছরের মধ্যেই মুখ থুবড়ে পড়েছে প্রকল্পটি। অপর্যাপ্ত পশু-পাখি ও অনুন্নত অবকাঠামোর ফলে নিয়মিত কমছে দর্শনার্থীর সংখ্যা। শুরুতে আনা অনেক পশুই এখন নেই। এর পেছনে মূলত বাজেট সঙ্কটকেই দায়ী করছে বন বিভাগ।
তালতলী রেঞ্জের অধীন সখিনা বিটের ১৯ একর প্রাকৃতিক বনভূমিসহ মোট ১ হাজার একর জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে সোনাকাটা ইকোপার্ক। ২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন এটি। এখান থেকে সমুদ্রসৈকত, ম্যানগ্রোভ বন ও বিভিন্ন বন্যপ্রাণী দেখার সুযোগ রয়েছে।
সখিনা বিট থেকে বনের ভেতর দিয়ে মাত্র চার কিলোমিটার হাঁটলেই সোনাকাটা সমুদ্রসৈকত। পর্যটকদের কাছে এই পথ ও সৈকত অন্যতম আকর্ষণ। কিন্তু ভেতরের সড়ক ও কাঠের তৈরি সাঁকো বছরের বেশিরভাগ সময়ই ভাঙা থাকায় অনেককেই সৈকতে না যেতে পেরে নিরাশ হয়ে ফিরতে হয়। বিশেষত জোয়ারের পানি যখন বনে প্রবেশ করে, তখন ভাঙা সাঁকো পেরিয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
ইকোপার্ক চালুর প্রথমদিকে এখানে চিতাবাঘ ছিল। কিন্তু বন বিভাগের কর্মকর্তাদের অব্যবস্থাপনা ও বাজেটের অভাবে মৃত্যুর শঙ্কায় পড়লে তা সরিয়ে নেওয়া হয়। বর্তমানে ৭৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের হরিণের বেষ্টনী, ৭৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের শূকরের বেষ্টনী ও কুমির প্রজনন কেন্দ্র রয়েছে। খাদ্যের অভাবে শূকরগুলোকে বনাঞ্চলে ছেড়ে দেওয়া হয়। নির্দিষ্ট সময় পর আবার সেগুলোকে বেষ্টনীর ভেতরে নেন দায়িত্বরত কর্মচারীরা।
বনাঞ্চলে ছেড়ে দেওয়া অজগর সাপ বা অন্যান্য প্রাণী কী অবস্থায় আছে সে ব্যাপারে সর্বশেষ তথ্য নেই বন বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে। জীবিকা সংগ্রহের কাজে বনের ভেতরে যাওয়া স্থানীয়রাই এক্ষেত্রে তথ্য প্রদানের মূল ভরসা। এক্ষেত্রে নিজেদের লোকবল সঙ্কটের বিষয়টি তুলে ধরেন বন বিভাগের কর্তারা।
ইকোপার্কে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী ও স্থানীয় সংবাদকর্মী খায়রুল বাশার আশিক বলেন, ‘ইকোপার্কে পর্যাপ্ত পশু-পাখি না থাকায় দর্শনার্থী আসার প্রবণতা কমে যাচ্ছে। নানা কারণে পশুর বেষ্টনীগুলো ভেঙে যাওয়ায় কমেছে হরিণ ও শূকরের সংখ্যা। ইকোপার্ক রক্ষায় এখনই পশু-পাখির সংখ্যা বাড়াতে উদ্যোগ না নিলে আগামীতে পর্যটকশূন্য হয়ে পড়বে এটি।’
ইকোপার্কটির বেহাল অবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে উপ-বন সংরক্ষক জহির ইকবাল বলেন, মূলত এটা একটা প্রকল্পের আওতায় গড়ে তোলা হয়েছে। প্রকল্প শেষের পর আর বাজেট না পাওয়ায় ইকোপার্ককে তার নিজস্ব নিয়মে চালানো কষ্টকর হয়ে পড়ছে। তবে আগামীতে প্রয়োজনীয় বাজেট পাওয়া গেলে চিত্র পাল্টে যাবে বলে জানান তিনি।
বরগুনার তালতলী রেঞ্জের সখিনা বিটের কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন প্রামাণিক জানান, বাজেটের অভাবে পশু-পাখির খাবারও ঠিকভাবে সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এর ফলে ইকোপার্কের আওতায় থাকা অনেক প্রাণীকে বনাঞ্চলে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। কোনোটিকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বনের ভেতরের সড়ক ও কাঠের তৈরি সাঁকোগুলোও অর্থের অভাবে সংস্কার করা যাচ্ছে না বলে জানান তিনি। মাঝেমধ্যে স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে কোনো কোনো সাঁকো মেরামত করা হয় বলে জানান এই কর্মকর্তা।