সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের অবসরের বয়সসীমা ৫৯ বছর থেকে ৬০ বছর করে ২০১৩ সালে জারি করা প্রজ্ঞাপন বাতিলের হাইকোর্টের রায় আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত। ফলে আগের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের অবসরের বয়স ৬০ বছরই বহাল থাকছে। সরকারের করা আপিলের শুনানি শেষে সোমবার আপিল বিভাগের চেম্বার জজ বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এই স্থগিতাদেশ দেন। আদালতে সরকারপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা।
আদেশের পর গণমাধ্যমকে মুরাদ রেজা বলেন, ‘হাইকোর্টের রায় আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত হয়ে গেছে। ফলে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের অবসরের বয়সসীমা ৬০ থাকছে।’
১১ এপ্রিল সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের অবসরের বয়সসীমা ৫৯ বছর থেকে ৬০ বছর করার ২০১৩ সালে জারি করা প্রজ্ঞাপন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। আদালত রায়ে বলেন, তাদের অবসরের বয়সসীমা ৬১ করা উচিত ছিল। এটা না করা বৈষম্যমূলক। বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি একেএম সাহিদুল হক সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ ওই রায় দেন।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরি থেকে অবসরের বয়সসীমা সাধারণ চাকরিজীবীদের চেয়ে দুই বছর বাড়িয়ে ৬১ বছর করার সিদ্ধান্ত দিয়ে তা বাস্তবায়ন করার জন্য মন্ত্রণালয়কে বলেছিল। কিন্তু সরকার এক বছর বাড়িয়ে ৬০ বছর করেছে। এতে সংসদীয় কমিটির অভিপ্রায় আইনের মধ্যে প্রতিফলিত হয়নি।
আদালত বলেন, গণকর্মচারীদের সকলের অবসরের বয়সসীমা ছিল ৫৭ বছর। মুক্তিযোদ্ধাদের বয়সসীমা দুই বছর বাড়িয়ে ৫৯ বছর করে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানিত করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে সকলের চাকরি থেকে অবসরের বয়সসীমা ৫৯ বছর করে সরকার। এ অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানিত করতে তাদের বয়সসীমা এক বছর বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু প্রথমে দুই বছর দিয়ে সম্মানিত করার পর এক বছর করার মধ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের খাটো করা হয়েছে।
আদালত বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে সরকার অন্যদের চেয়ে দুই বছর বাড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু চাকরি থেকে অবসরের সুবিধা কমিয়ে দিয়ে আইন করা সরকারেরই সিদ্ধান্তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও অযৌক্তিক।
উল্লেখ্য, সরকারি কর্মচারীদের অবসরের বয়স প্রথমবার বাড়ানো হয় ২০০৯ সালের ১৩ ডিসেম্বর। এ সময় ১৯৭৪ সালের ‘পাবলিক সার্ভিস রিটায়ারমেন্ট অ্যাক্ট’ সংশোধন করে মুক্তিযোদ্ধা গণকর্মচারীদের অবসরের বয়স ৫৭ বছর থেকে বাড়িয়ে ৫৯ বছর করা হয়। ২০১৩ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি মুক্তিযোদ্ধা গণকর্মচারীর অবসরের বয়স করা হয় ৬০ বছর।
সোনালী ব্যাংকের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মশির উদ্দিন ওয়ারেশী ও আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক তপন কুমার সাহা অবসরের সময়সীমা আরো দুই বছর বাড়ানোর নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদনটি করেন। তাদের করা রিটের রুল নিষ্পত্তি করে এই রায় দেন হাইকোর্ট।