স্বাধীনতা সংগ্রামে গৌরবান্বিত গল্পে অংশীদার হয়ে আছে পাবনার বিবিসি বাজার। ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশন-বিবিসি বিশ্বের জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম। সেই নামেই আজকের বিবিসি বাজার। সোনাঝরা স্বাধীনতা সংগ্রামের এক ঐতিহাসিক গল্পে নামকরণ হয়েছে বিবিসি বাজার।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পরে কাশেম মোল্লার নিজ গ্রাম পাকশীর রূপপুরে নিজের হাতে লাগান কড়ই গাছের পাশেই ছোট্ট একটি চায়ের দোকান দেন। তখন অনেক কষ্টে কেনা রেডিও নিয়ে হাজির হন কাসেম মোল্লা। সে সময় পাঁচ গ্রামে খুঁজেও একটি রেডিও পাওয়া যেত না। তিনি চায়ের দোকানে মুক্তিকামী মানুষের ভিড় জমানোর জন্য আর মুক্তিকামী মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য রেডিওটি দোকানে নিয়ে যেতেন। দেশে যুদ্ধ লাগার পর দেশের সামগ্রিক অবস্থান নিয়ে বিবিসি বাংলায় খবর প্রচারিত হতো। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকহানাদার বাহিনীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে কাসেম মোল্লা রেডিওতে মুক্তিযোদ্ধাদের খবর শোনাতেন। গোপনে মুক্তিযোদ্ধাদের দেশীয় দোসর, রাজাকার ও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সমন্ধে তথ্য দিতেন।
হঠাৎ একদিন দেশ স্বাধীন হওয়ার কয়েক দিন আগে রাজাকারদের খবরের ভিত্তিতে পাকিস্তানি সেনারা হানা দেয় তার চায়ের দোকানে। কাশেম মোল্লার এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, পাকিস্তানি সেনারা আমারে হুঙ্কার দিয়ে বলে, ‘তোম এধার আও, তোমহারা দোকানমে রেডিও বাজতা হায়, শালে, তুমকো খতম কারদে গা, তুম রেডিও নিকালো।’ সেনাদের কথায় আমার তো জানে পানি নাই। ভেবেছিলাম, ‘মাইরে ফেলবি। আমি কলেম, ও চিজ হামারা নেহি হে, আদমি লোক খবর লেকে আতা হে, শুনলোকে লেকে চলে যাতা হে।’ তার কথায় তারা আরো উত্তেজিত হয়ে ওঠে। হাতের রোলার আর রাইফেলের বাট দিয়ে তার পায়ে আঘাত করে। সেই থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কাশেম মোল্লার সেই পা অকেজো হয়েছিল। স্বাধীনতার ৪৯ বছর পার হয়ে গেলেও তার আর কেউ খবর রাখেনি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তাদানকারী হিসেবে স্বীকৃতি পাননি আবুল কাশেম মোল্লা। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় তিনি দুঃখও করেছেন। আজও আছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত সেই বিবিসি বাজার। শুধু কাশেম মোল্লা বেঁচে নেই। নতুন প্রজন্ম হয়তো জানে না তার গল্প। তবু ইতিহাসের মণিকোঠায় চির অম্লান হয়ে আছে তিনি।